ছবি: সংগৃহীত
নারী পাচারের অভিযোগ হোক বা নাবালিকা বিয়ে সংক্রান্ত খবরাখবর, সব কিছুই পোস্ট হয়ে যায় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। আর সেখান থেকেই খবর ছড়িয়ে পড়ে পুলিশ এবং প্রশাসনিক মহলে। ফলে
তড়িঘড়ি ময়দানে নেমে পড়তে পারেন পুলিশ এবং প্রশাসনিক কর্তারা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নারী পাচার এবং নাবালিকা বিয়ে রুখতে এ ভাবেই মুশকিল আসান হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। যার সৌজন্যে গত দেড় বছরে বারুইপুর পুলিশ জেলায় প্রায় দেড়শোরও বেশি নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে পেরেছে পুলিশ। পাচার হয়ে যাওয়া প্রায় দু’শো জন মেয়েকেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি পুলিশকর্তাদের।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা সুন্দরবন এলাকায় নারী পাচারকারীরা অত্যন্ত সক্রিয়। বারুইপুর পুলিশ জেলাতেও নারী পাচারের অভিযোগ আসে ভূরি ভূরি। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে কাজ করে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটি? পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, কোনও থানায় নাবালিকা বিয়ে অথবা নারী পাচারের অভিযোগ দায়ের হলে পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়রক্ষা করে পদক্ষেপ করতে হয়। সেই সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যেই তৈরি হয়েছে এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। তাতে যেমন রয়েছেন জেলার সমস্ত থানার ওসি বা আইসি-সহ কয়েক জন আধিকারিক, তেমনই আছেন বিডিও, শিশু সুরক্ষা কমিশন এবং মহিলা কমিশনের সদস্য-সহ দেশ-বিদেশের প্রায় ৪২টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যেরাও। এর ফলে গ্রুপের কোনও সদস্যের কাছে নারী পাচার বা নাবালিকা বিয়ে সংক্রান্ত খবর এলে তিনি তা জানান গ্রুপের বাকি সদস্যদের। ঘটনাস্থল-সহ অভিযোগের সব বিবরণও পোস্ট করেন গ্রুপে। ফলে চটজলদি ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাবালিকা বিয়ে আটকানো সহজ হচ্ছে। ভিন্ রাজ্য থেকে উদ্ধারও করা সম্ভব হচ্ছে পাচার হওয়া মেয়েদের।
ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটির তদারকির কাজ করেন বারুইপুর মহিলা থানার ওসি কাকলি ঘোষ কুন্ডু। এই গ্রুপের কারণে বুধবারই এক নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘কুলতলি থানা এলাকার এক বাসিন্দা এক নাবালিকাকে বারুইপুর থানা এলাকায় নিয়ে এসে তার বিয়ে দিচ্ছিল। কুলতলি এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সেই কথা জানতে পেরে গ্রুপে জানায়। তার পরেই বারুইপুর থানার পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিয়ে বন্ধ করেন। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ না থাকলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে ওই খবর কুলতলি থানা হয়ে বারুইপুর থানা ও ব্লক প্রশাসন পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতেই মূল্যবান ঘণ্টা দুয়েক সময় চলে যেত।’’
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কারণে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের নারী পাচার ও নাবালিকা বিয়ে বন্ধের অভিযানে তৎপরতা যে বেড়েছে, তা স্বীকার করছেন নারী পাচার নিয়ে কাজ করা একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আধিকারিক দেবর্ষি চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বছর দুয়েক আগে সুন্দরবন এলাকায় নারী পাচারের অধিকাংশ অভিযোগ পুলিশ নথিবদ্ধ করতে চাইত না। এখন স্থানীয় থানা অভিযোগ নিতে না চাইলে আমরা ওই গ্রুপে বিষয়টি জানাই। সঙ্গে সঙ্গে বড়কর্তাদের চাপে পড়ে স্থানীয় থানা পদক্ষেপ করতে শুরু করে।’’ সোনারপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক তপতী ভৌমিক বলছেন, ‘‘বছর তিনেক আগেও নারী পাচার নিয়ে বিভিন্ন ব্লকে কাজ করা ছোট ছোট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অভিযোগকে গুরুত্বই দেওয়া হত না। কিন্তু এখন ওই গ্রুপে পুলিশ, প্রশাসনিক আধিকারিকেরা থাকায় অধস্তন কর্মীদের গাফিলতির বিষয়টিও সেখানে তুলে ধরা যাচ্ছে।’’ সুন্দরবন এলাকার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে কাকলি দাস আবার বলছেন, ‘‘ওই গ্রুপের মাধ্যমে বাস্তব পরিস্থিতি রাজ্য প্রশাসনের সামনে তুলে ধরা যাচ্ছে। বছর দুয়েক আগেও পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, তা স্থানীয় থানা ও ব্লক স্তরের প্রশাসনিক অধিকারিকেরা ছাড়া আর কেউ জানতেই পারতেন না। এখন সব কিছুই রাজ্যস্তরে পৌঁছে যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy