Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bengali New Year

ত্রস্ত পয়লায় জনশূন্য দুই মন্দির

আশপাশে ইতিউতি জনা কয়েক পুলিশকর্মীকে বাদ দিলে এলাকা একেবারে সুনসান। দেখে মনে হবে, যেন কার্ফু চলছে।

করজোড়ে..: কালীঘাটের বন্ধ দোরে ভক্ত। (ডান দিকে) খাঁ খাঁ দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বর। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

করজোড়ে..: কালীঘাটের বন্ধ দোরে ভক্ত। (ডান দিকে) খাঁ খাঁ দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বর। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

শুভাশিস ঘটক ও শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০২:৫২
Share: Save:

এমন পয়লা বৈশাখ কি আগে এসেছে কখনও? বৈশাখের প্রথম দিন কালীঘাট ও দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বরে গিয়ে এই প্রশ্নটাই যেন বারবার ঘুরে এল।

বেলা ১২টা। কাঠফাটা রোদে কাকপক্ষীরও দেখা নেই কালীঘাট মন্দির চত্বরে। আশপাশে ইতিউতি জনা কয়েক পুলিশকর্মীকে বাদ দিলে এলাকা একেবারে সুনসান। দেখে মনে হবে, যেন কার্ফু চলছে।

মন্দিরের সব ক’টি গেটই তালাবন্ধ। তবে চার নম্বর গেটের কাছে দেখা গেল, লোহার গ্রিলের জানলায় পোড়া মাটির ছোট মালসায় কালী প্রতিমার একটি ছবি প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে রাখা। মন্দির কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘আজ নববর্ষ হলেও লকডাউনে বাইরে থেকে তো লোকজন আসতে পারবেন না। তবে আশপাশের কিছু মানুষ আসবেন বলে মনে হয়। মন্দির বন্ধ। দর্শন হবে না। তাই জানলায় মায়ের একটি ছবি রাখা হয়েছে। সেটাই দর্শন করবেন ভক্তেরা।’’ তবে ঘণ্টা দু’য়েকে এক জন দর্শনার্থীকেও আসতে দেখা গেল না।

আরও পড়ুন: মাস্কের জোরেই নতুন বছরে ফেরার লড়াই ওঁদেরও

দুপুর ২টো। মন্দির চত্বর পুরোপুরি জনশূন্য। চারপাশের রাস্তা গার্ডরেল দিয়ে আটকে রেখেছে পুলিশ। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘করোনা-সঙ্কটে মা কালীও এখন আইসোলেশনে।’’

মন্দির এলাকার ৪০০-৪৫০ পেঁড়ার দোকান বন্ধ। কালী টেম্পল রোডের পেঁড়ার দোকানগুলিতে থাকেন শ’দুই পাণ্ডা। এ দিন এক জনকেও দেখা গেল না। একটি দোকানের সামনে চার জন লুডো খেলছিলেন। এক জনেরই মুখে মাস্ক। মাস্ক না-পরে এ ভাবে বসে রয়েছেন কেন? এক জন ঝাঁঝিয়ে বললেন, ‘‘আপনার কোনও কাজ নেই?’’

আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত কলকাতা পুলিশের কর্মী, ভর্তি বাঙুরে

চার নম্বর গেটের কাছে ভোরে দোকান খুলেছিলেন বলরাম ঘোষ। তাঁর কথায়,‘‘সকাল থেকে গোটা তিরিশ লক্ষ্মী-গণেশ বিক্রি করেছি। এলাকার পাণ্ডারা যজমানদের জন্য হালখাতা ও মূর্তি নিয়ে নিজেদের বাড়িতেই পুজো করছেন।’’

এক পাণ্ডার কথায়, ‘‘এ বছর নববর্ষে প্রায় কোটি টাকার লোকসান হয়ে গিয়েছে ব্যবসায়ীদের। হাজার তিনেক পাণ্ডাও পথে বসতে চলেছেন। না-খেয়ে মরা ছাড়া উপায় নেই।’’ প্রতি বছরই নববর্ষের আগের রাতে মন্দিরে পুজো দিতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার আসেননি।

অন্য দিকে, নববর্ষে হালখাতা পুজোর জন্য চৈত্র সংক্রান্তির রাত থেকেই লম্বা লাইন পড়ত দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের বাইরে। ভোর চারটেয় মঙ্গলারতি হওয়ার পর থেকে রাত পর্যন্ত চলত পুজো। কয়েক লক্ষ পুণ্যার্থীর ভিড় জমত। করোনার জেরে এ বার ধু-ধু করছে গোটা চত্বর। বন্ধ সিংহদুয়ার। সেখান থেকেই মন্দিরের চূড়া দেখে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতে দেখা গেল স্থানীয় কয়েক জনকে। তাঁরা বললেন, ‘‘নববর্ষে মন্দিরটুকুই না হয় দূর থেকে দর্শন করলাম।’’

প্রতি বছরই পুজো দেওয়ার লাইন পৌঁছে যায় বালি খাল পর্যন্ত। এ বার সব সুনসান। ডালা আর্কেডে ৫৮টি দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বছরের এমনি দিনে পাঁচ-ছ’কেজি পেঁড়া রাখা হয় দোকানে। নববর্ষের দিনে তা রাখা হত ১২-১৫ কেজি। এ বার দোকানই বন্ধ। বিশ্বরঞ্জন বেরা নামে এক দোকানির কথায়, ‘‘প্রচুর ক্ষতি হল ঠিকই। কিন্তু আগে সকলে প্রাণে তো বাঁচি।’’ তবে প্রতিদিনের মতো এ দিনও নিত্যপুজো ও ভোগ নিবেদন হয়েছে।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy