অভিযুক্ত অ্যাব ক্যাব চালক এবং নিহত লক্ষ্মী দাস—নিজস্ব চিত্র।
ক্যাবের ভিতরে মহিলা খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরির খোঁজে রবিবার দিনভর তল্লাশি চালিয়ে অবশেষে তা মিলল বিকেলে। এ দিন ধৃত শিবশঙ্কর দাসকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করার সময়েই বাইপাসের ধারের খাল থেকে ছুরিটি উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা।
তার আগে পুলিশকে জেরায় ধৃত জানিয়েছিল, শুক্রবার দুপুরে লক্ষ্মীকে খুন করার পরে গড়িয়াহাট বিজন সেতু ধরে গাড়ি চালিয়ে বাইপাসের ধারে খালের দিকে যাওয়ার পথেই চলন্ত গাড়ি থেকে সে ছুরিটি রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল। পুলিশকে ধৃত আরও জানায়, লক্ষ্মীকে খুন করার জন্য সে ওই ছুরি রাখেনি। আত্মরক্ষার জন্য গাড়িতে সে ছুরিটি রাখত। যদিও এর সত্যতা যাচাই করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, শিবশঙ্করকে দশটি প্রশ্ন করলে একটির উত্তর মিলছে। তাই রবিবার ধৃতকে নিয়ে পুরো ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “শিবশঙ্কর পুলিশকে বিভ্রান্ত করছে। ছুরির দৈর্ঘ্য সাত ইঞ্চির বেশি হলে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা যায়। গাড়িতে ওই ছুরি রাখার জন্য তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করা যায় কি না সে নিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হবে।” আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “গাড়িতে ছুরি রাখা আইনবিরুদ্ধ। ধৃতের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর হোক।”
এ দিকে ধৃতকে জেরা করে উঠে এসেছে আরও তথ্য। জানা গিয়েছে, শুক্রবার লক্ষ্মীর দেহ খালে ফেলে দেওয়ার পরে সে গাড়িটি ধুয়ে নেয়। তার পরে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার-সহ চার যাত্রীকে তোলেও সে। পরে ভবানীপুরে গাড়িটি রাখে।
শুক্রবার টালিগঞ্জ থানায় গিয়ে শিবশঙ্করের বোনের বয়ানের ভিত্তিতেই দেশপ্রাণ শাসমল রোডের বাসিন্দা লক্ষ্মী দাসের খুন হওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। চলতি জানুয়ারিতে শিবশঙ্করকে তিরিশ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন লক্ষ্মী। সেই টাকা ফেরত না দিয়েই ফের পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার চায় সে। না পেয়েই ক্ষেপে ওঠে শিবশঙ্কর। শুক্রবার টাকা ফেরতের টোপ দিয়ে মুদিয়ালির এক জায়গায় ডাকে লক্ষ্মীকে। সেখান থেকেই নিজের গাড়িতে তুলে প্রথমে শ্বাসরোধ করে, পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীর নলি কেটে খুন করা হয় বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
প্রতিবেশীদের অভিযোগ, ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে শিবশঙ্কর বিভিন্ন লোকের থেকে প্রায় দশ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছে। সম্প্রতি সে বাঁশদ্রোণীতে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট বুক করে।
স্ত্রীর মৃত্যু মানতে পারছেন না লক্ষ্মীর স্বামী সুভাষ দাস। তিনি বলেন, “শিবশঙ্করকে ছোট থেকে দেখেছে লক্ষ্মী। ওকে স্নেহ করত বলেই ধার দিয়েছিল। এমনকি সে কথা লক্ষ্মী আমাকেও জানায়নি। অথচ সেই ছেলেই ওকে মেরে ফেলল! ওর কঠোর শাস্তি যেন হয়।” শুক্রবারই লক্ষ্মীর ছোট মেয়ে পূর্ণিমার জন্মদিন ছিল। সেই মেয়ে বলছে, “আমার জন্মদিনেই মায়ের এ ভাবে মৃত্যু! জীবনভর এটা আমাকে যন্ত্রণা দেবে।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy