র্যাগিংয়ের শিকার হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী এক ছাত্র। — ফাইল ছবি।
পরীক্ষায় তাঁর হয়ে লিখে দিতে পারেন, এমন কেউ আছেন কি না তা জানতেই বন্ধুর হস্টেলের ঘরে গিয়েছিলেন। সেখানেই র্যাগিংয়ের শিকার হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী এক ছাত্র। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের যে সংগঠন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে, তারা বৃহস্পতিবার শামিল হয়েছে প্রতিবাদে।
নিগৃহীত পড়ুয়ার নাম বুদ্ধদেব জানা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ নিয়ে পড়াশোনা করেন। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বুদ্ধদেব এর আগে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমিতে পড়তেন। ছোট থেকেই জুডো শিখেছেন। ২০১৯ সালে কমনওয়েলথ প্যারা জুডো চ্যাম্পিয়নশিপে বার্মিংহ্যামে দেশের হয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন তিনি। যদিও র্যাগিংয়ের শিকার হয়েও পাল্টা আক্রমণ দেননি তিনি। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘‘যখন নিগ্রহ করা হচ্ছিল, আমি শুধু আত্মরক্ষা করেছিলাম। নিজের হাতে আইন নিতে চাইনি। তা ছাড়া, তিনি আমার সিনিয়র।’’
বুদ্ধদেবের অভিযোগ, এই ঘটনা গত ৭ নভেম্বরের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিসি সিনিয়র হোস্টেলের আবাসিক তিনি গিয়েছিলেন নিউ ব্লক হোস্টেলে। সেখানে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। ৯ নভেম্বর ক্লাসের একটি পরীক্ষা ছিল বুদ্ধদেবের। সেই পরীক্ষায় তাঁর হয়ে লেখার জন্য এক জন রাইটারের খোঁজে গিয়েছিলেন। বুদ্ধদেবের কথায়, ‘‘আমি চোখে ক্ষীণ দেখি। তা-ও মোটা কাচের চশমা দিয়ে।’’
সে সময়ই নিউ ব্লক হোস্টেলে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তনী। বুদ্ধদেবের কথায়, ‘‘নিউ ব্লক হোস্টেলে এসেছিলেন ওই প্রাক্তনী। আচমকাই তিনি নাম জিজ্ঞেস আমার দিকে এগিয়ে আসেন। তিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। অ্যালকোহলের গন্ধ আমার ভাল লাগছিল না। আমি ওঁকে সরে যেতে বলি। তিনি রেগে গিয়ে আমায় মারার চেষ্টা করেন, আমি শুধু হাত দিয়ে আত্মরক্ষা করি। তাতে আরও চটে গিয়ে তিনি ধাক্কা দেন। নিগ্রহ করেন। হুমকিও দেন। আমার বন্ধু সেখান থেকে আমায় সরিয়ে নিয়ে যান।’’
এই ঘটনার পরেই উপাচার্যের কাছে অভিযোগ করেন বুদ্ধদেব। অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর যাদবপুর থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার ভিত্তিতেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩২৩, ৫০৪, ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন, র্যাগিংয়ের অভিযোগ পাওয়ার পর নিয়ম মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি বিষয়টি দেখছে। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই প্রাক্তনীকে হোস্টেল ছাড়তে বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy