Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
বেহালা

সংসারটা চালাবে কে, অকূল পাথারে স্ত্রী

ভিড়ের মধ্যে থেকে পেট চেপে ধরে বেরিয়ে এসেছিলেন চন্দন দে। প্রতিবেশী পিয়ালী বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, ‘‘দিদি, বাপি আমার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছে।’’ তার পরেই নেতিয়ে পড়েন তিনি। ততক্ষণে রক্তে ভেসে গিয়েছে তাঁর জামা।

চন্দন দে

চন্দন দে

সৌভিক চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৪৪
Share: Save:

ভিড়ের মধ্যে থেকে পেট চেপে ধরে বেরিয়ে এসেছিলেন চন্দন দে। প্রতিবেশী পিয়ালী বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, ‘‘দিদি, বাপি আমার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছে।’’ তার পরেই নেতিয়ে পড়েন তিনি। ততক্ষণে রক্তে ভেসে গিয়েছে তাঁর জামা।

বাবার ক্ষতস্থান চেপে ধরে পাড়ার কাকুরা যখন হাসপাতালে রওনা দিয়েছিল, ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র ষোলো বছরের সুমন তখন দাঁড়িয়েছিল রাস্তায়। সারা রাত ঠায় জেগে ছিল সে। বারবার খবর নিচ্ছিল, বাবা কেমন আছে। মাকে সাহস দিচ্ছিল, ‘‘চিন্তা কোরো না। কিচ্ছু হবে না।’’

কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ বাবার মৃত্যুর খবরটা পেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে সুমন। তাকেও ভর্তি করতে হয় হাসপাতালে। স্যালাইন নিতে নিতে সে জিজ্ঞেস করছিল, ‘‘মা আর বোন কেমন আছে?’’

এ দিকে বেহালার মজলিশ আরা রোডের বাড়িতে তখন থেকে থেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন সুমনের মা শিল্পীদেবী। সুমনের বোন বারো বছরের সুমিতা তখনও যেন ঠিক করে বুঝে উঠতে পারেনি পরিস্থিতির গুরুত্ব। অবাক পাড়ার লোকেরাও। বুধবার রাতে সামান্য কথা কাটাকাটি থেকেই যে এত বড় কাণ্ড ঘটে যাবে বুঝতে পারেননি কেউই।

স্থানীয় বাসিন্দা পিয়ালী বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, একটি গ্রিল কারখানায় কাজ করতেন চন্দনবাবু। এলাকার সবাই পছন্দ করতেন তাঁকে। কারও বিপদে আপদে সব সময় এগিয়ে যেতেন তিনি। বুধবার রাতেও প্রহ্লাদ হালদারের হাতে বাপি মণ্ডল বঁটির কোপ মেরেছে শুনেই ছুটে এসেছিলেন। ততক্ষণে ভেতর থেকে গ্রিলে তালা দিয়ে
ঘরে ঢুকে পড়েছে বাপি। নিভিয়ে দিয়েছে আলোও। গ্রিলের বাইরে দাঁড়িয়ে অন্ধকারে চন্দনবাবু দেখতে পাননি বাপির হাতে কী রয়েছে। যতক্ষণে বুঝলেন, ততক্ষণে বিপদ ঘটে গিয়েছে।

বাড়িতে যখন খবর এসে পৌঁছয় চন্দনবাবু আর নেই, প্রথমটায় বিশ্বাস করতে পারেননি শিল্পীদেবী। প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে ওঠার পরে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে মানুষটাই আচমকা খুন হয়ে গেল! ছোট ছোট দুটো ছেলেমেয়েকে নিয়ে কী ভাবে সংসার চালাবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।

ঘটনার পর থেকেই তেতে রয়েছে মজলিশ আরা রোড। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, এলাকায় কারও সঙ্গেই সদ্ভাব ছিল না বাপি মণ্ডলের পরিবারের। বরাবরই কিছু হলেই রাস্তায় বেরিয়ে এসে গালিগালাজ করত বাপি এবং তার বাড়ির লোকজন। সব সময় নেশা করে থাকত সে। ইদানীং বাপি দোকান করলেও আগে নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ। সেই বাপির হাতেই বেঘোরে প্রাণ দিতে হল চন্দনকে এটা কেউই মেনে নিতে পারছেন না। পাশাপাশি তাঁদের প্রশ্ন, চন্দনের সংসার চলবে কী ভাবে? কোথা থেকে আসবে দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ? ওরা খাবেই বা কী?

তাঁদের দাবি, যাবজ্জীবনের পাশাপাশি বাপির বাড়ি লাগোয়া মুদি দোকানটি তুলে দিতে হবে চন্দনের স্ত্রী শিল্পীদেবীর হাতে। গৌতম পাল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘চন্দন বাড়ির একমাত্র রোজগেরে ছিল। এখন ওর সংসারটা চলবে কী ভাবে? যার জন্য চন্দনের পরিবারের আজ এই দশা তাকেই সব দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা আইন বুঝি না। দোকানটা লিখে দিতে হবে চন্দনের ছেলেমেয়ের নামে। এর জন্য যত দূর যেতে হয় আমরা যাব।’’

পুলিশ জানায়, কিন্তু এত কিছুর পরেও দমেনি বাপি মণ্ডল। তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময়েও টানা হুমকি দিয়েছে, জেল থেকে বেরিয়ে সকলকে গুলি করে খুন করবে।

অন্য বিষয়গুলি:

bapi mondal chandan dey stab behala family
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE