হাসপাতালে কার্ড-উপহারের সঙ্গে খুদে সুফিয়ানা। বুধবার, এসএসকেএমে। নিজস্ব চিত্র
এত দিনে বিছানায় উঠে বসতে পারছে সে। মর্জি হলে, জবাবও দিচ্ছে মাথা ঝাঁকিয়ে বা দু’-এক শব্দে। ইদের দিন হাসপাতালে কেঁদে-ককিয়ে কেটেছিল খুদে রোগিণীর। বুধবার, রাখির বিকেলে রোগশয্যার ধারে অচেনা আগন্তুকের উপস্থিতিতে সেখানেই খুশির আভা।
‘ভিজ়িটিং আওয়ার’-এ এসএসকেএম হাসপাতালের ম্যাকেঞ্জি ওয়ার্ডে কাউকে বেলুন নিয়ে ঢুকতে দেননি নিরাপত্তাকর্মীরা। তবে খেলনা ভালুক, ছবি-আঁকা কার্ড প্রবেশাধিকার পেয়েছে। হাতে পেয়ে দশ বছরের সুফিয়ানা খাতুনের চোখমুখ থেকে যন্ত্রণার চিহ্নও উবে গিয়েছিল কিছু ক্ষণের জন্য।
সব মিলিয়ে ৪৫০টি কার্ড। শহরের পাঁচটি স্কুল। এর মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, মানসিক সমস্যার শিকার পড়ুয়ারাও এঁকেছে শ’দুয়েক কার্ড। এই স্কুলপড়ুয়াদের সকলের সহমর্মিতাকে রোগশয্যার পাশে জড়ো করতে এগিয়ে আসেন লা মার্টিনিয়ার ফর গার্লস স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির আভিষী পোদ্দার। এখনও নানা ধরনের বিদ্বেষ ও রাজনৈতিক উত্তাপে গনগনে ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া-জগদ্দলের হিংসার শিকার দশ বছরের মেয়েটি। পয়লা অগস্ট জগদ্দলে বাড়ির পাশে ছাগলকে পাতা খাওয়াতে বেরিয়ে বোমাবাজির শিকার হয় ওই ডানপিটে তৃতীয় শ্রেণি! স্প্লিন্টার ঢুকে সর্বাঙ্গে ক্ষত-বিক্ষত সুফিয়ানা দু’দিন হল আইসিইউ থেকে ছাড়া পেয়েছে।
মেয়েটির ছবি দেখেই কিছু করার কথা ভাবেন আভিষী। তাঁর কথায়, ‘‘ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই, তবে দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা আর রাজনৈতিক তাগিদেই মনে হচ্ছিল ওকে যদি একটু আনন্দ দিতে পারি।’’ এ দিন বিকেলে আভিষীর কথার জবাবে দু’-এক কথাও বলেছে জখম মেয়ে। ‘‘ডল্স (পুতুল) আর ক্যারম বোর্ড— দু’টোই ভাল।’’— জানিয়েছে খুদে। তবে সফ্ট টয় পেয়েও সে অখুশি নয়। বাবা লুক্কার আনসারি ভাগলপুরে টাঙ্গা চালাতেন বছর আড়াই আগে। এখন জগদ্দলের চটকলে অস্থায়ী কাজ করেন। মা সাব্বু খাতুন লোকের বাড়ি কাজ করেন। আত্মীয়ের বাড়িতে আরও তিন সন্তানকে রেখে দম্পতি এখন জখম মেয়ের চিকিৎসায় কলকাতায় পড়ে রয়েছেন।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার উদ্যোগেই কলকাতায় এক বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় সুফিয়ানাকে। সেখানেই হয় অস্ত্রোপচার। দিন পাঁচেক হল এসএসকেএমে চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, উন্নতি হলেও সুস্থ হতে সময় লাগবে সুফিয়ানার। তাই তার মন ভাল রাখতে শুভেচ্ছা-কার্ড ও উপহারে ভরসা রাখছেন ডাক্তারেরা। রাখির বিকেল অন্য রকম স্বাদ এনে দিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy