কলকাতার ছবি, ছবির কলকাতা
কলকাতায় ইংরেজ কোম্পানির পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গেই তুলি-কলমে এই শহরকে স্থায়ী করে রাখার উদ্যোগের সূচনা। বলা বাহুল্য, ইংরেজদের হাতেই। কিন্তু পরের প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের ইতিবৃত্তে তাঁদের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়েছেন ইউরোপের নানা দেশের শিল্পীরা, ভারতীয়রা তো বটেই। বস্তুত, ফটোগ্রাফি আবিষ্কারের পর, গত দেড়শো বছরের শিল্প চর্চায় এই শহরের ভূমিপুত্রদের প্রাধান্য ক্রমশই বেড়েছে। কলকাতা নিয়ে আঁকা ছবির চরিত্র কালে কালে বদলেছে, তার সঙ্গে কলকাতার শিল্পীরা নতুন নতুন শিল্পধারার সৃজনে সারা দেশের মধ্যেই পথিকৃতের সম্মান অর্জন করে নিয়েছেন, এক বার নয়, বার বার। হয়ে উঠেছেন বিশ্বনাগরিক।
এই দীর্ঘ যাত্রাপথের কোনও ধারাবাহিক বিবরণ আজও তৈরি হয়নি। বিচ্ছিন্ন বই-প্রবন্ধ থাকলেও দুই মলাটে পুরো ছবিটা দেখার কোনও সুযোগ ছিল না। ‘পরিকথা’ পত্রিকা (সম্পা: দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়) এ বার সেই কাঙ্খিত সংকলনটি তৈরি করতে পেরেছে। ওদের ‘কলকাতার ছবি/ ছবির কলকাতা’ বিশেষ সংখ্যা ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬ টায়, রামমোহন লাইব্রেরি হলে প্রকাশ করবেন শঙ্খ ঘোষ, প্রধান অতিথি তপতী গুহঠাকুরতা। আলোচনায় প্রণবরঞ্জন রায়, মৃণাল ঘোষ, অরুণ ঘোষ, অসিত পাল।
ইউরোপীয় শিল্পীরা কী ভাবে কলকাতাকে চিত্রায়িত করেছেন, তাই দিয়ে শুরু করে দরবারি থেকে বাজারি চিত্রকলা, কাঠখোদাই, কোম্পানি স্কুল, আর্লি বেঙ্গল, কালীঘাট পট, আধুনিকতার উন্মেষ, নব্য-ভারতীয় রীতি, কলকাতা আর্ট কলেজের পটভূমি, চল্লিশের দশক থেকে বাঁকবদল, শিল্প-সংগঠন, মহিলা শিল্পীদের ছুঁয়ে একুশ শতকের অভিমুখ আলোচনা করেছেন বিশিষ্ট শিল্পবেত্তারা। আছে রঙিন ও সাদাকালো বহু ছবি। সঙ্গে উইলিয়াম সিম্পসনের আঁকা চিতপুরের দৃশ্য (১৮৬৭)।
সম্মান
সে দিন মহাকাশের নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও হলে। মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? এই নিয়েই বললেন বিশিষ্ট মহাকাশবিজ্ঞানী জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকর। ব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করলেন। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের পর পড়াশোনা কেমব্রিজে। কাজ করেছেন ফ্রেড হয়েল-এর সঙ্গে। পুণের ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-নির্দেশক। ওঁর মতে, ‘বিকল্প পথের জন্য মনের জানালাগুলো সবসময় খুলে রাখা প্রয়োজন। অন্ধের মতো কেবল অনুসরণ নয়, বরং যুক্তি দিয়ে নিজের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা উচিত’। প্রেসিডেন্সির সমাবর্তনে তিনি পেলেন সাম্মানিক ডি লিট।
মনে রেখে
বাংলা চলচ্চিত্রের হাঁড়ির খবর রাখেন অথচ দুলাল দত্তকে চেনেন না এমন চলচ্চিত্রপ্রেমী বিরল। তিনি শুধু সত্যজিৎ রায়ের যাবতীয় চলচ্চিত্রের সম্পাদক নন, রাজেন তরফদারের ‘গঙ্গা’ বা তরুণ মজুমদারের ‘আলোর পিপাসা’ সহ বহু ছবি সম্পাদনা করেছেন। প্রান্তিক সান্যাল সে ধরনের মানুষ যিনি অনেক আগেই দুলাল দত্তের সঙ্গে পরিচিত হন। ২০১০-এ দুলালবাবু প্রয়াত হওয়ার পর হাজরা মোড়ে প্রান্তিকবাবুর বাড়িতে প্রতি বছর দুলালবাবুকে স্মরণ করা হয় ১৭ অগস্ট। এ বছরও জনা বাইশ গুণগ্রাহী উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন দুলালবাবুর ছেলে বাপী দত্ত। দোতলার ঘরে দেওয়াল জুড়ে ছিল দুলালবাবুর ছবি।
নতুন ভাবনা
ওরা হারিয়ে যেতে বসেছিল সমাজের চোরাস্রোতে। শেষমেশ জায়গা পেল মধ্যমগ্রামের ‘নিজলয়’-এ। এখানকার বাসিন্দাদের নিয়েই কাজ করছেন নৃত্যশিল্পী অনুরেখা ঘোষ। ‘নিজলয়’-এর মেয়েরা তাঁর পরিচালনায় কত্থক ও মার্শাল আর্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করবে ‘দেবী’। তুলে ধরবে রাধা, দুর্গা, কালী সব মেয়ের মধ্যেই আছে। সঙ্গে আরও একটি উপস্থাপনা, ‘তেরে ইশক মে’। ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধে ছ’টায় বাগবাজার ফণিভূষণ মঞ্চে অনুষ্ঠান, আয়োজনে নাটমন্দির। অন্য দিকে রবীন্দ্রসঙ্গীতের চরিত্র ও অবয়বকে ধরে রাখতে না পারলে তা চিরতরে হারিয়ে যাবে কি না, তা নিয়ে ‘সোহিনী’ সংস্থা ৪ সেপ্টেম্বর যাদবপুরের ইন্দুমতী সভাগৃহে দুপুর তিনটেয় আয়োজন করেছে আলোচনা সভা, ‘রবীন্দ্রসংগীতের সুর সংরক্ষণ: নানা দিক’। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষক প্রসাদ সেনের স্মরণে এই আলোচনা। থাকবেন প্রমিতা মল্লিক, শ্রাবণী সেন, আলপনা রায় ও আরও অনেকে।
আচার্য স্মরণ
ডাকনাম ছিল ‘ঝড়ো’, আশ্বিনের এক আকস্মিক ঝড়ের দিনে জন্ম বলে। কালে-কালে মেধা, বুদ্ধিমত্তা, বিদ্যাবত্তা আর চরিত্রবলে সত্যিই ‘ঝড়ো’ হয়ে উঠেছিলেন আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল (১৮৬৪-১৯৩৮)। তাঁর পাণ্ডিত্য ও সর্বগ্রাহী জ্ঞানার্জনের অপরিমেয় বিস্তার আজও স্মরণীয়। অল্পবয়সে প্রয়াত পিতা মহেন্দ্রনাথের কাছ থেকে তিনি পেয়েছিলেন গণিত ও দর্শনশাস্ত্রে বিশেষ আগ্রহ আর অনাড়ম্বর জীবনযাপনের অভ্যাস। সাহিত্য ও অর্থবিদ্যায় ছিল তাঁর অনায়াস দক্ষতা। দেশের স্বাধীনতাকল্পে সবল শিক্ষাকাঠামো গড়ায় ব্রতী হন তিনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যার্জনে সমন্বয়ী বোধের জন্ম দেন। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী-র সভাপতিত্বে বরণ করেন তাঁকে। তাঁর জন্মদিন ৩ সেপ্টেম্বর, সেই উপলক্ষে ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায় সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের উপাসনা মন্দিরে ‘জন্ম-সার্ধশতবর্ষে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল’ অনুষ্ঠানে তাঁর জীবন-সৃজন নিয়ে বলবেন সৌরীন ভট্টাচার্য ও অমিতা চট্টোপাধ্যায়। মহেশ্বর ভট্টাচার্য রচিত আচার্য শীলের সংক্ষিপ্ত জীবনী আশ্বিনের ঝড় (সূত্রধর) প্রকাশিত হবে সে সন্ধ্যায়। আয়োজক সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ ও সূত্রধর।
পরিক্রমা
বৈদিক যুগের গান থেকে সরিমিঞার টপ্পা, মীরার ভজন, গালিবের গজল, নজরুলগীতি হয়ে সমকালীন বাংলা গান। স্থান-কালের সঙ্গে সুরের এই যাত্রা, নানা মোড়ে তার ভাব বদল— তা নিয়ে বহু দিন ধরেই গবেষণায় মেতেছেন উৎসাহীরা। এ বার সেই গবেষণার কাজই মঞ্চে তুলে ধরা হবে। গানে-গানে উঠে আসবে সুরের এই পরিক্রমার কথা। ২৫ বছর ধরে নজরুলগীতি নিয়ে চর্চায় ব্যস্ত উত্তর কলকাতার সংগঠন ‘সুরপিয়াসী’। ওদের রজতজয়ন্তী বর্ষ উদ্যাপনেই ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে গানের এই ‘পরিক্রমা’। গাইবেন সুস্মিতা গোস্বামী। মিনার্ভা থিয়েটারে আসর বসছে বিকেল ৫-৩০ থেকে।
কর্ণভারম
‘কসবা অর্ঘ্য’র নাটক মানেই মহাভারতের নতুন পাঠ-পরিচয়। ‘ম্যাকবেথ বাদ্য’ ইতিমধ্যেই দর্শকধন্য, এ বার কর্ণধার মণীশ মিত্রের ভাবনায় সংস্কৃত নাট্যকার ভাস। তাঁরই নাটক অবলম্বনে নতুন প্রযোজনা ‘কর্ণভারম’। এ বার নির্দেশনা থেকে বিন্যাস, সবেতেই মণীশ এগিয়ে দিয়েছেন তরুণদের। কিংবদন্তি ট্র্যাজিক নায়কের চরিত্রভারও কম নয়, সেই নিয়ে ভেবেছেন রাজু বেরা, পরিচালনাও তাঁর। সঙ্গীতে জয়দীপ সিংহ। ‘সংস্কৃত সপ্তাহ’ উপলক্ষে ১ সেপ্টেম্বর সংস্কৃত কলেজে ‘কর্ণভারম’-এর আমন্ত্রিত অভিনয়, আর সবার জন্য ৬ সেপ্টেম্বর, মুক্তাঙ্গনে। ৫ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাদিবসে, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে ‘ম্যাকবেথ বাদ্য’ আরও এক বার, সঙ্গে আর একটি নতুন নাটক ‘ভার্চুয়াল ডায়ালগ্স’।
সেরা অভিনেত্রী
বিদেশে ফের বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। সদ্য সিলিকন ভ্যালিতে অনুষ্ঠিত হল সান ফ্রান্সিসকো গ্লোবাল মুভি ফেস্ট (ফেস্টিভ্যাল অব গ্লোব-এর অংশ)। তাতে বেশ কিছু বাংলা ছবি দেখানো হল, ছিল লকেট অভিনীত ‘এক জন ঝুমুর’ আর ‘কল্কি যুগ’। ৩০টির বেশি দেশের তিন হাজার ছবি থেকে বাছাই করে ৫০টির ওপর ছবি ছিল এ উৎসবে। তাতে ‘রিজিওনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’-এ সেরা অভিনেত্রীর শিরোপা পেলেন লকেট। বলিউড-হলিউডের শিল্পী সমারোহে লকেটের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গুলশন গ্রোভার।
নাগা উল্কি
মুণ্ডশিকারি হিসেবে সারা বিশ্ব এক বাক্যেই চেনে কনিয়াক নাগাদের। এঁদের সারা দেহে থাকে নিজস্ব পদ্ধতিতে আঁকা উল্কি। তা দেখেই চেনা যায় সামাজিক অবস্থান। তবে কালের প্রবাহে এই প্রথা থেকে সরে আসছেন নাগারা। উল্কি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন ফেজিন কনিয়াক। ওঁর গবেষণায় উঠে এসেছে ট্যাটুর সামাজিক রীতিনীতি, লোকাচার। সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন ডাচ আলোকচিত্রী পিটার বস। ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে বিষয়টি নিয়ে একটি প্রদর্শনী দ্য ট্যাটুড হেডহান্টারস: দ্য কনিয়াকস শুরু হচ্ছে ভারতীয় সংগ্রহশালার আশুতোষ শতবার্ষিকী হলে। চলবে ১৩ পর্যন্ত, ১১-৪.৩০ টা। ১০ তারিখ বিকেল ৩টেয় বিষয়টি নিয়ে এখানেই আলোচনা করবেন ফেজিন। হেডহান্টারস ইঙ্ক স্টুডিয়ো-র মো নাগা এবং তাঁর দলের সদস্যরা করে দেখাবেন কনিয়াক শৈলীর ট্যাটু, ১২-১৩ তারিখ বিকেলে। গবেষণার বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে তিনটি বই। ইংরেজি ও কনিয়াক ভাষায় ছাড়াও ছোটদের জন্য কমিক্সের আদলে। সঙ্গের ছবি প্রদর্শনী থেকে।
মাতৃরূপেণ
শ্রাবণ ফুরাইয়া গিয়াছে। তৎসত্ত্বেও মহানগরীর আকাশ জলভারানত। মরমে পশিতে শুরু করিয়াছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র-র কণ্ঠস্বর— যা দেবী সর্বভূতেষু...। বঙ্গে মাতৃমূর্তি চিন্ময়ী থেকে মৃন্ময়ী— তাহার সন্ধানেই এই পরিক্রমা। স্তরে স্তরে কতটা আয়োজনে এত বড় কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হইয়া ওঠে, তাহারই অনুসন্ধান। কলকাতার উত্তর ও দক্ষিণে এমন দুইটি অঞ্চল রহিয়াছে— কুমোরটুলি ও পটুয়াপাড়া। এতদ্ভিন্ন আরও কিছু কিছু জায়গায় মাতৃমূর্তি তৈয়ার হয়। অবশ্য অধুনা বহু বারোয়ারি পূজার মাতৃমূর্তি স্বস্থানেই নির্মিত হয়। রাত্রি জাগরণ করিয়া, পঞ্চাশ বেহারার কাঁধে কি সুবিশাল ট্রাকে চাপাইয়া, পাড়ার ছেলেদের রাতভর এগটোস্ট আর মদিরা পান করিয়া ‘মা’-কে মণ্ডপে আনা কমিয়াছে। তবু কুমোরটুলি ও পটুয়াপাড়া সদা জাগ্রত।
যাত্রাপথের প্রথম পর্বে আমরা আসিয়াছি বনমালী সরকার স্ট্রিটে। জোব চার্নক আসিবার পূর্বেই সুতানুটির জন্ম। সুবিখ্যাত কুমোরটুলি তাহারই অন্তঃপাতী। পথটি কলকাতার মধ্যে অন্যতম প্রাচীন। দুই পার্শ্বে টিনের দ্বিতলস্পর্শী মূর্তিনির্মাণ গৃহ। অপ্রশস্ত পথে প্রথম যাঁহার সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল তাঁহার নাম ভীমচন্দ্র দাশ। তাঁহার কথায়, ‘‘এখন এই যে দোকানে বসে আমার সঙ্গে কথা বলছেন, এটির বয়স আড়াইশো বছরের বেশি। আমারই বয়েস আশির কাছাকাছি। আমরা মায়ের গয়নাগাঁটি-মটুক-শাড়ি-জামাকাপড় নিয়ে কারবার করি। বলুন, আর কী জানতে চান।’’
শিল্পী
এক মুক্তিযোদ্ধার ভেতরের আগুনটা জ্বালিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর কথাতেই বিদেশে পাড়ি। শিল্পী সাহাবুদ্দিন আহমেদের জন্ম ঢাকায়, ১৯৫০-এর ১১ সেপ্টেম্বর। বাবা তায়েবউদ্দিনের সঙ্গে কলকাতার যোগ ছিল খুব। ১৯৭৩-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন আর্টসে বিএফএ ডিগ্রি লাভ। কলেজে পড়ার সময়েই বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৮-এ শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার এবং ১৯৭৩-এ প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পান। এই পুরস্কারই ওঁর জীবনের গতি বদলে দেয়। মননে তখন জয়নুল আবেদিনের ছবি দাগ কেটে গেছে। দেশত্যাগ করবেন না বলেই প্রথমে নিউজিল্যান্ড সরকারের বৃত্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু তার পর ফরাসি বৃত্তি আর ফেরাতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর আদেশে। ১৯৭৪-’৮১ প্যারিসে শিক্ষালাভ করে এখন ও দেশেই কর্মরত। স্ত্রী আনা, দুই কন্যা চিত্র আর চর্চা। মুক্তিযুদ্ধের কথা এখনও হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে, শিল্পীর সেই অনুভূতির প্রকাশ ঘটে ওঁর বিশাল আকৃতির ক্যানভাস জুড়ে বিপুল গতিময়তায়। দেশবিদেশে সাহাবুদ্দিনের বহু প্রদর্শনী হয়েছে, পেয়েছেন নানা সম্মান। ২০১৪-য় শিল্পকলায় শ্রেষ্ঠ অবদানের জন্য ফরাসি সরকার ওঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি এখন এই শহরে। সে দিন বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের প্যালাডিয়ান লাউঞ্জে অভিনেতা প্রসেনজিতের সঙ্গে আড্ডায় লালন থেকে ইলিশ— ছুঁয়ে গেলেন বাংলার প্রাণের বিষয়গুলি। ছবি: গোপী দে সরকার।
মান্টোকে নিয়ে
তাঁর গল্পের ভক্ত আমি বরাবর, তবে এখন তাঁর জীবনও একই রকম মুগ্ধ করছে আমাকে।’ সাদাত হাসন মান্টোকে নিয়ে ছবি করতে তৈরি হচ্ছেন নন্দিতা দাশ। ‘তাঁকে নিয়ে গবেষণা করছি দু’বছর। এই তো লাহৌর গিয়ে তাঁর মেয়েদের সঙ্গে, আত্মজনের সঙ্গে কাটিয়ে এলাম বেশ কিছু কাল। কত স্মৃতির ঝাঁপি, আর্কাইভ খুলে গেল।’ আবেগ ছেয়ে এল নন্দিতার স্বরে। শনিবার বিকেলে কলকাতায় এসেছিলেন, সত্যজিৎ রায় সোসাইটি-র অতিথি হয়ে কলামন্দিরে ‘পথের পাঁচালী’র ষাট বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনাসভায় যোগ দিতে। সাত বছর আগে তাঁর প্রথম পরিচালনা: ‘ফিরাক’। ‘মান্টোর বায়োপিক নয়, তাঁর লেখকজীবনের আটটা বছর (১৯৪৪-’৫২), যার মধ্যে দেশভাগ পড়ছে। দেশভাগ ভয়ঙ্কর আঘাত করেছিল তাঁকে, পাকিস্তান বা ভারতের আইডেনটিটি নিয়ে বাঁচতে চাননি তিনি, লেখকসত্তাই ছিল তাঁর অস্তিত্ব, বিশ্বাস করতেন প্রকাশের স্বাধীনতায়। মেয়েদের জীবন নিয়ে, বিশেষত যৌনকর্মীদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দুঃখময় জীবন নিয়ে লিখেছেন। সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা মানুষ ছিলেন তিনি। নিউ ইয়র্কের লেখক ও মান্টো-বিশেষজ্ঞ আলি মীর আমার এ কাজের সঙ্গী।’ শহরে পা রেখেই দেখা করতে গিয়েছিলেন মৃণাল সেনের সঙ্গে, তাঁর শেষ ছবি ‘আমার ভুবন’-এর নায়িকা তিনি, কায়রো ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেত্রীর শিরোপাও ওই ছবির সুবাদে। সত্যজিতের সিনেমা নিয়ে মুগ্ধ, কারণ ‘কালোত্তীর্ণ, এবং সেগুলির শিকড় গভীরে প্রোথিত।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy