প্রধান শিক্ষকদের দাবি, প্রতিটি স্কুলে সিসি ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করুক শিক্ষা দফতর এবং নিরাপত্তারক্ষীও নিয়োগ করা হোক। ফাইল ছবি
স্কুল আছে। কিন্তু সেখানে দারোয়ান বা নিরাপত্তারক্ষীর পদ নেই বহু বছর ধরে। শিক্ষা দফতর নির্দেশ দিলেও অনেক স্কুলে আবার সিসি ক্যামেরার বালাই নেই। থাকলেও সংখ্যাটা পর্যাপ্ত নয় বলে জানাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকেরাই।
কলকাতা শহর ও শহরতলির বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, সেখানে না আছে জিনিসপত্রের নিরাপত্তা, না আছে পড়ুয়াদের। টিটাগড়ের স্কুলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পরে কলকাতার বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের দাবি, প্রতিটি স্কুলে সিসি ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করুক শিক্ষা দফতর এবং নিরাপত্তারক্ষীও নিয়োগ করা হোক। বহু স্কুল নিজেদের উদ্যোগে দারোয়ান রাখছে ঠিকই, কিন্তু খুবই কম টাকা বেতনে। সেই রক্ষী কার্যত ঢাল-তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দার।
শতাব্দীপ্রাচীন স্কুল খিদিরপুর অ্যাকাডেমির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শেখ মহম্মদ সালিহিন জানালেন, ওই স্কুলে সিসি ক্যামেরা নেই। এক জন দারোয়ানকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাখা হয়েছে। স্কুলের নিজস্ব তহবিল থেকে তাঁকে বেতন দিতে হয়। সেই বেতনও খুব সামান্য। যার ফলে অন্য কাজে থাকলে সেই দারোয়ানকে পাওয়া যায় না। প্রধান শিক্ষক বললেন, “আমাদের এই সরকারি স্কুলে পড়ুয়াদের ফি বছরে ২৪০ টাকা। সেই টাকা থেকে বাঁচিয়ে সিসি ক্যামেরা কেনার উপায় নেই। শিক্ষা দফতরের কাছে আমাদের আবেদন, সিসি ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করা হোক। দারোয়ানের পদেও কাউকে নিয়োগ করা হোক।” তিনি জানালেন, টিটাগড়ের ঘটনার পরে তাঁরাও স্কুলের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন।
বাঙুরের নারায়ণ দাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাজ় স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া জানালেন, আগে দারোয়ান ও সাফাইকর্মী পদে নিয়োগ করা হত। বর্তমানে সেই সমস্ত পদও নেই। এখন গ্রুপ ডি-র মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু দারোয়ান, ঝাড়ুদার পাওয়া যায় না। সঞ্জয় বলেন, “শিক্ষা দফতর স্কুলে স্কুলে সিসি ক্যামেরা বসাতে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু পড়ুয়াদের বার্ষিক ২৪০ টাকা বেতনে সব স্কুল কি তা লাগাতে পারবে? এর জন্য সরকার অনুদান দিলে ভাল হয়। এক-একটি স্কুলে সিসি ক্যামেরা বসাতে ৮০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা লাগে। যে সব স্কুলে পড়ুয়া কম, তারা কী ভাবে ক্যামেরা লাগাবে?” সঞ্জয় জানান, তাঁর স্কুলে পড়ুয়া অনেক। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের থেকে চাঁদা তুলে ক্যামেরার টাকা জোগাড় করেছেন তাঁরা।
কসবার চিত্তরঞ্জন হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলে সিসি ক্যামেরা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। কারণ, গোটা স্কুল চত্বরে সিসি ক্যামেরা বসানোর যা খরচ, তা স্কুল কর্তৃপক্ষের তহবিল থেকে বা ছেলেদের থেকে চাঁদা তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, তাঁদের এক জন গ্রুপ ডি কর্মীর বাড়ি কলকাতা থেকে অনেক দূরে। তিনি রোজ বাড়ি যেতে পারেন না বলে রাতে স্কুলেই থেকে যান। কিন্তু তিনি দারোয়ান নন। এক জন ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তারক্ষী রাখার যা খরচ, তা শিক্ষা দফতরের অনুদান ছাড়া জোগাড় করা সম্ভব নয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ স্পষ্টই জানালেন, তাঁদের স্কুলে কোনও নিরাপত্তা নেই।
পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তথা উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণ চাতরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণাংশু মিশ্র জানালেন, তাঁদের স্কুল আয়তনে এতটাই বড় যে, গোটা চত্বরে ক্যামেরা লাগাতে গেলে বিপুল টাকা লাগবে। স্কুলের তহবিল থেকে তা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তাঁরা সিসি ক্যামেরা লাগাতে পারেননি। তবে তা লাগানো যে জরুরি, তা তিনি মেনে নিয়েছেন। কৃষ্ণাংশু বলেন, “চুরি বা অপরাধমূলক কাজ আটকানোই শুধু নয়, পড়ুয়ারাও অনেক সময়ে স্কুলের জিনিস ভাঙচুর করে। সে ক্ষেত্রে কারা ভেঙেছে, সিসি ক্যামেরা থাকলে তা ধরা যায়। শিক্ষা দফতরের সাহায্য না পেলে এই কাজ করে ওঠা খুব মুশকিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy