শনিবার রাতে দ্বিতীয় দফায় অবৈধ অভিবাসীদের ভারতে ফেরত পাঠিয়েছে আমেরিকা। তবে হাতকড়া-শিকল বিতর্ক এ বারও পিছু ছাড়ল না। সংবাদ সংস্থা পিটিআই অনুসারে, শনিবার রাতে আমেরিকা থেকে ফেরা এক অবৈধবাসী দাবি করেছেন, তাঁদের হাতকড়া পরিয়েই বিমানে নিয়ে আসা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ওই অবৈধবাসী দাবি করেছেন তাঁদের পা-ও বাঁধা ছিল শিকলে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাতের পর এই প্রথম বিমান বোঝাই করে অবৈধবাসীদের ফেরত পাঠাল আমেরিকা। এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্পের পাঠানো সামরিক বিমানে ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে, শিকলে বেঁধে নিয়ে আসা হয়েছিল। তা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। এই ভাবে কেন অবৈধবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছে আমেরিকা, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সংসদেও। বিতর্কের আবহেই দু’দিনের আমেরিকা সফরে যান মোদী। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন হোয়াইট হাউসে। দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের পর দ্বিতীয় দফার অবৈধবাসীদের কী অবস্থায় ফেরানো হয়, সে দিকে কৌতূহলী নজর ছিল দেশের।
মোদী সরকারের কূটনীতি কতটা সফল হবে, তা জানতে অপেক্ষায় ছিল দেশ। কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম সমাজমাধ্যমে সেই কৌতূহল উস্কে দিয়ে লেখেন, “এটি ভারতীয় কূটনীতির পরীক্ষা”। এই কৌতূহলের মাঝেই শনিবার রাত সাড়ে ১১টার কিছু পরে আমেরিকান সামরিক বাহিনীর সি-১৭ গ্লোবমাস্টার অবতরণ করে পঞ্জাবের অমৃতসর বিমানবন্দরে। ফেরত পাঠানো হয় ১১৬ জন অবৈধবাসীকে। তাঁরা অমৃতসর বিমানবন্দরে পৌঁছোনোর পর প্রত্যেকের অতীত যাচাই (ব্যাকগ্রাউন্ড চেক) করা হয়। দ্বিতীয় দফায় দেশে ফেরা অবৈধবাসীদের মধ্যে একটি বড় অংশ ছিলেন পঞ্জাবের বাসিন্দা। রবিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ পুলিশের গাড়িতে করে তাঁদের নিজ নিজ বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। হরিয়ানা সরকারও সে রাজ্যের বাসিন্দাদের ফেরানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে।
আরও পড়ুন:
তাঁদের কী অবস্থায় আমেরিকা থেকে ফেরানো হয়েছে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। তবে রবিবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, দলজিৎ সিংহ নামে এক অবৈধবাসী দাবি করেছেন, তাঁদের হাতকড়া এবং শিকল পরিয়েই বিমানে ফেরত পাঠানো হয়েছে। প্রথম দফায় হাতকড়া-শিকল বিতর্কের মাঝে অবশ্য বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি সংসদে জানান, আমেরিকার নিজস্ব আইন অনুসারেই হাতকড়া-শিকল পরানো হয় অবৈধবাসীদের। তবে মহিলা ও শিশুদের শিকল-হাতকড়া পরানো হয়নি বলেও সেই সময়ে জানান বিদেশমন্ত্রী।
সংবাদমাধ্যম ‘এনডিটিভি’কেও দেশে ফেরা এক অবৈধবাসী জানান, তাঁদের হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছিল। তাঁদের মোবাইলও বাজেয়াপ্ত করে রাখা হয়েছিল বলে দাবি ওই অবৈধবাসীর।
ঘটনাচক্রে, শনিবার যে ১১৬ জন অবৈধবাসীকে দেশে ফেরানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে দু’জন খুনের মামলায় অভিযুক্ত বলে জানিয়েছে পিটিআই। পঞ্জাবের পটিয়ালা জেলার রাজপুরার বাসিন্দা ওই দুই তরুণের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে খুনের মামলা রুজু হয়। সন্দীপ সিংহ ওরফে সানি এবং প্রদীপ সিংহ নামে ওই দুই তরুণ অমৃতসর বিমানবন্দরে অবতরণ করতেই তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার আরও শতাধিক অবৈধবাসীকে নিয়ে তৃতীয় একটি বিমান আসার কথা রয়েছে ভারতে।