নয়াদিল্লি স্টেশনে শনিবার রাতে পদপিষ্ট হয়ে মহিলা এবং শিশু-সহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই মহাকুম্ভে যাবেন বলে প্রয়াগরাজের ট্রেন ধরতে চেয়েছিলেন। দিল্লির এই ঘটনার পর বিরোধীরা একযোগে আক্রমণ করেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। অভিযোগ, নয়াদিল্লি স্টেশনে মৃতের আসল পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়নি। মৃতের সংখ্যা লুকোনো হচ্ছে। বিজেপি অবশ্য এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। আরজেডি নেতা তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব মহাকুম্ভকে ‘ফালতু’ বলে উল্লেখ করে বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছেন।
নয়াদিল্লি স্টেশনের ঘটনার জন্য কেন্দ্রের অসংবেদনশীলতাকে দায়ী করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বলেছেন, ‘‘নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে এত মানুষের মৃত্যুর খবর খুব দুঃখজনক। আমি মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। এই ঘটনা রেলের ব্যর্থতা এবং এই সরকারের অসংবেদনশীলতার প্রমাণ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এত মানুষ কুম্ভে যাচ্ছেন। নয়াদিল্লি স্টেশনের বন্দোবস্ত আরও উন্নত করার দরকার ছিল। অব্যবস্থা এবং অবহেলার জন্য যাতে আর কোনও প্রাণহানি না-ঘটে, সরকার তা নিশ্চিত করুক।’’
আরও পড়ুন:
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘নয়াদিল্লি স্টেশনের ঘটনার যে সমস্ত ভিডিয়ো দেখছি, তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। মোদী সরকার নয়াদিল্লি স্টেশনে মৃতের সংখ্যা গোপন করার চেষ্টা করছে। সেটা আরও লজ্জার।’’ ছত্তীসগঢ়ের কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা ভূপেশ বঘেল বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা তো ঘটেই চলেছে। এর জন্য সরকারের অব্যবস্থাই দায়ী। কে এর দায় নেবে?’’
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের এই ঘটনার দায় নেওয়া উচিত, মনে করেন বিহারের আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ যাদব। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। রেলের অব্যবস্থার জন্য এতগুলো মানুষ মারা গেলেন! রেলমন্ত্রীর এর দায় নেওয়া উচিত।’’ এর পরেই বিতর্ক উস্কে দিয়ে লালু বলেন, ‘‘কুম্ভের কোনও মানে আছে নাকি? কুম্ভ একেবারে ফালতু।’’
রাতেই হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ নিয়েছেন দিল্লির সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনা। তিনি বলেন, ‘‘মহাকুম্ভের পুণ্যার্থীদের সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা মানা যায় না। কেন্দ্রীয় সরকার বা উত্তরপ্রদেশের সরকার মানুষের নিরাপত্তা, সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত নয়। প্রয়াগরাজেও কোনও সুব্যবস্থা নেই। অন্য রাজ্য থেকে আসা পুণ্যার্থীদের জন্য কোনও সুষ্ঠু ট্র্যাফিক পরিকল্পনাও নেই।’’
সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব শনিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁদের উচিত মৃতদের পরিবারের সদস্যদের চোখ দিয়ে বিষয়টি দেখা। রাজনীতিক হিসাবে নয়। মৃতদের দেহ রাজ্যে ফেরত পাঠানোর সুবন্দোবস্ত করা উচিত। আহতদের চিকিৎসায় যাতে ত্রুটি না-থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। মৃত্যুর তথ্য লুকিয়ে আর পাপ করা উচিত নয় বিজেপির।’’
চুপ করে নেই তৃণমূলও। দলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, ‘‘কুম্ভের ভিড় নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ মোদী সরকার। এই ধরনের ঘটনার দায় এড়িয়ে এরা শুধু তথ্য লুকোনোর চেষ্টা করে। এই সরকারের অদক্ষতার জন্য এত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন।’’
বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। দিল্লিতে তাদের মুখপাত্র অজয় অলোক বলেন, ‘‘বিরোধীরা যে এত কথা বলছেন, কেউ কি হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়েছেন? যাননি। আমি বলছি, এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হবে এবং তার ভিত্তিতে পদক্ষেপ করা হবে।’’