অঘটন: দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি। (পাশে) প্রয়াগ রাউত। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে যাচ্ছিল গাড়িটি। এক সময়ে আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি চালক। ডান দিক ঘেঁষে সোজা ফুটপাতে উঠে গাড়িটি সজোরে ধাক্কা মারে একটি ভ্যানে। ভ্যানচালক বসে ছিলেন ভ্যানের উপরে। তিনি রাস্তায় ছিটকে পড়েন। গাড়িটি তাঁকে পিষে তো দেয়ই, আরও চার জনকে ধাক্কা মেরে শেষে একটি গয়নার দোকানে গিয়ে ধাক্কা মারে। তার পরে দাঁড়িয়ে যায়। বুধবার ভরসন্ধ্যায় বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ভ্যানচালক প্রয়াগ রাউতের (৪৬)। আহত হয়েছেন চার পথচারী। গাড়ির চালক রাম মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আদতে বিহারের বাসিন্দা প্রয়াগ সপরিবার ফুলবাগানের একটি বস্তিতে থাকতেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা। গাড়ি আর মানুষের ঠাসাঠাসি ভিড় বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে। ফুটপাতে নিজের ভ্যানের উপরে বসেছিলেন প্রয়াগ। হঠাৎই একটি গাড়ি তীব্র গতিতে রাস্তার ডান দিক দিয়ে এসে সোজা ফুটপাতে উঠে যায়। আশপাশের লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেটি প্রথমে ভ্যানে ধাক্কা মারে। ছিটকে পড়েন প্রয়াগ। এর পরে গাড়িটি তাঁকে পিষে দিয়ে আরও চার জনকে ধাক্কা মারে। শেষে একটি গয়নার দোকানের দরজায় ধাক্কা মেরে থেমে যায়।
আচমকা এমন দুর্ঘটনায় চরম উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। গুরুতর আহত প্রয়াগকে স্থানীয় লোকজনই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁরাই ১০০ ডায়ালে ফোন করে খবর দেন পুলিশে। পুলিশ এসে বাকিদের উদ্ধার করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়। রাতেই হাসপাতালে মারা যান প্রয়াগ। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার পরে লোকজন গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। যে গয়নার দোকানে গাড়িটি ধাক্কা মেরেছিল, সেটির মালকিন রুক্মিণী রায় বলেন, ‘‘আমার দোকানের সামনে নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। দুর্ঘটনার কিছু ক্ষণ আগে তাঁকে এক জায়গায় পাঠিয়েছিলাম। তিনি দোকানের সামনে বসে থাকলে আরও বড় বিপদ হতে পারত।’’ বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, দোকানের দরজার নীচের অংশের কাচ ভাঙা। ভিতরে পড়ে রয়েছে ভাঙা কাচের অংশ। দোকানের ক্ষতি হওয়ায় রুক্মিণী মুচিপাড়া থানায় গাড়িচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। স্থানীয়েরা জানান, সন্ধ্যায় বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট গিয়ে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন। বেপরোয়া গতিতে চলা গাড়িটি যে ভাবে ফুটপাতে উঠে পড়েছিল, তাতে আরও মারাত্মক বিপদ যে ঘটেনি, সেটাই রক্ষে।
ফুলবাগানের বস্তিতে একচিলতে ঘরে থাকতেন প্রয়াগ। স্ত্রী শারীরিক প্রতিবন্ধী। এ দিন প্রয়াগের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, কেঁদেই চলেছেন তাঁর দিদি ও স্ত্রী। দুই ছেলে, দুই মেয়ের সংসারে প্রয়াগই ছিলেন একমাত্র রোজগেরে। স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে একটাই কথা বলে চলেছেন স্ত্রী কাঞ্চন, ‘‘ওর রোজগারের টাকায় সংসারটা চলত। ছেলেমেয়েদের নিয়ে এ বার কী ভাবে বাঁচব?’’
পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটি ভাড়ায় চলত। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, চালক মত্ত অবস্থায় ছিলেন। যার জন্য দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়িটি আটক করেছে মুচিপাড়া থানা। চালকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা এবং বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy