সঞ্জয় রায়
সঞ্জয় রায় নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরির সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে কার্যত নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে।
দেড় মাস আগে কাউন্সিলের পেনাল অ্যান্ড এথিক্যাল কমিটি কার্যত ক্লিনচিট দিয়েছিল ওই চিকিৎসকদের। কিন্তু কাউন্সিলেরই নবগঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ফের তদন্ত করে জানিয়ে দেয়, আগের রিপোর্টের থেকে তাদের তদন্ত রিপোর্ট অনেকটাই আলাদা। সেই নতুন রিপোর্টের ভিত্তিতেই এ বার অ্যাপোলোর দুই চিকিৎসক রেডিওলজিস্ট ঊষা গোয়েন্কা এবং শল্য চিকিৎসক শ্যামল সরকারের বিরুদ্ধে চার্জশিটের সিদ্ধান্ত হয়। এর পরেই কাউন্সিলের সদস্যেরা বিষয়টি নিয়ে কার্যত দু’ভাগ হয়ে গিয়েছেন। দেড় মাসের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন দু’রকম মতামত প্রায় নজিরবিহীন বলে মনে করছেন কাউন্সিলের কর্তারাও। অ্যাপোলো সংক্রান্ত এই রিপোর্ট নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও পাঠানো হচ্ছে বলে কাউন্সিল সূত্রে খবর। এর আগের রিপোর্টটিও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা পড়েছিল।
১০ মাস আগে যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ রাজ্যের বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবা বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়েছিল, ডানকুনির বাসিন্দা সেই সঞ্জয়ের মৃত্যুর ঘটনায় অ্যাপোলো বা সেখানকার চিকিৎসকদের সরাসরি কোনও দায় ছিল না বলে গত অক্টোবরে জানিয়েছিল পেনাল অ্যান্ড এথিক্যাল কমিটি। হাসপাতালের চিকিৎসকদের যাবতীয় অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়ার সুপারিশও করেছিল তারা। কিন্তু কাউন্সিলের একাধিক সদস্য এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করেন। এর দেড় মাসের মধ্যে কাউন্সিলেরই তৈরি করা আর এক বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে হাসপাতালের এক শল্য চিকিৎসক এবং এক রেডিওলজিস্টের বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত শুক্রবার কাউন্সিলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই কার্যত ঝড় উঠেছে কাউন্সিলে। রেজিস্ট্রার মানস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, শীঘ্রই চার্জশিট পেশ হবে। ওই দুই চিকিৎসকের বক্তব্য শোনার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ চূড়ান্ত হবে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় সঞ্জয় রায়কে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর এক সপ্তাহ পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় এসএসকেএমে। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। অ্যাপোলোর বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি এবং অস্বাভাবিক বিল আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গড়ে রাজ্য। বিভিন্ন নথিপত্র খতিয়ে দেখে কমিটি জানিয়েছিল, চিকিৎসকদের তরফেও কোনও গাফিলতি পাওয়া যায়নি। বস্তুত, রোগীর পরিবারের অভিযোগ প্রমাণ করার মতো জোরালো প্রমাণ মেলেনি বলে দাবি করে কমিটি।
ওই রিপোর্ট জমা পড়ার পরে নতুন করে ছয় সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে কাউন্সিল। সেখানে রাখা হয় ছয় চিকিৎসক রাজেন্দ্রনাথ পাণ্ডে, সুজিত কর পুরকায়স্থ, অভিজিৎ চৌধুরী, সুকান্ত রায়, অভীক ভট্টাচার্য এবং ইন্দ্রাণী দাসকে। কাউন্সিল সূত্রে খবর, রিপোর্টে ঊষা গোয়েন্কা এবং শল্য চিকিৎসক শ্যামল সরকারের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির কথা বলা হয়। কাউন্সিলের এক কর্তার কথায়, ‘‘লিভারের রক্তপাত বন্ধ করতে অ্যাঞ্জিও এম্বোলাইজেশন করা হয়েছে বলে বিল হয়েছিল। কিন্তু ময়না-তদন্তে এম্বোলাইজেশনের কোনও প্রমাণই পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া, অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আরও সংবেদনশীলতা প্রয়োজন ছিল।’’
অভিযুক্ত চিকিৎসক শ্যামল সরকার জানিয়েছেন, এখনও এ নিয়ে কোনও তথ্য তাঁর কাছে আসেনি। ঊষা গোয়েন্কা বলেন, ‘‘ওরা আমাকে ডাকলে সব প্রমাণ দেব। কমিটির সদস্যেরা হাসপাতালে এসেও ফের সমস্ত নথি পরীক্ষা করতে পারেন। যে অ্যাঞ্জিও এম্বোলাইজেশন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, সেটা এতটাই সূক্ষ্ম যে সাধারণ ময়না-তদন্তের রিপোর্টে তা ধরা পড়ার কথা নয়।’’ অ্যাপোলোর তরফে রানা দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, এখনও এ ব্যাপারে তাঁরা কিছু জানেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy