হোটেলেই দিন কাটছে উমা গুপ্তর পরিবারের। নিজস্ব ছবি।
সেকরাপাড়া লেনের গলির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন বছর তিরিশের উমা গুপ্ত। ওই গলিতেই উমাদের বাড়ি। গলির মুখে পুলিশ আটকে দেওয়ায় বাস রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। হোটেলে থাকলেও এই ক’দিন সকাল সকাল সেকরাপাড়ায় পৌঁছে যেতেন উমা। বুধবারও তার অন্যথা হয়নি।
কিন্তু এ দিন সকালে তাঁদের পাশের বাড়িটাই চোখের সামনেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল। সে দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন উমা। তার পর কী হয়েছে, সে সব মনে নেই তাঁর। জ্ঞান যখন ফিরল, উমা তখন শুয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেডে। দুপুরের দিকে তিনি ছাড়াও পেয়েছেন।
হাসপাতাল থেকে হোটেলে ফিরলেও, ওই ঘটনা ভুলতে পারছেন না উমা। ৯ নম্বর সেকরাপাড়া লেনে প্রতিবেশীর বাড়িটি গুঁড়িয়ে গিয়েছে। উমা থাকতেন ১০/২ নম্বরে। তাঁর বাড়িরও একাংশ ভেঙে গিয়েছে। ওই এলাকাটি এখন এতটাই বিপজ্জনক যে, আদালত এবং পুলিশের অনুমতি মিললেও, কী ভাবে বাড়িতে যাবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না বাসিন্দারা। পুলিশও বিপদের কথা তাঁদের জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:মেট্রোর কাজে রাশ কোর্টের, বৌবাজারে ধস নামার রিপোর্ট পেশের নির্দেশ
আরও পড়ুন:বৌবাজারে জল দিয়ে জল রুখতে লড়াই সুড়ঙ্গে
উমা একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার হয়ে কাজ করেন। দার্জিলিঙে কাজে গিয়েছিলেন। গত শনিবার মাসির মেয়ে সালিনি সাউ তাঁকে ফোন করে বাড়়ি ছাড়ার বিষয়টি জানায়। ওই সময় তাঁর বাবা ঘরে একাই ছিলেন। সেখান থেকে বাবাকে সরিয়ে নিয়ে আসেন তাঁর আত্মীয়েরা। কিন্তু, এ ভাবে বিপর্যয় ঘটবে তা বুঝতে পারেননি উমা।
এই নির্দেশিকাই ঘরছাড়া করেছে উমা গুপ্তর পরিবারকে। নিজস্ব চিত্র
সোমবার যখন কলকাতায় ফেরেন, তত ক্ষণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এলাকায় পৌঁছেছেন। ভিড় থিক থিক করছে। এ দিন উমা হোটেলে বসে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন। তাঁর কথায়: “তিল তিল করে টাকা জমিয়ে ২০১৫ সালে বাড়িটি নতুন করে সারিয়ে ছিলাম। গয়না-সোনা চাপা পড়়ে গিয়েছে। বাগুইআটিতে একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য, প্রোমোটারকে অগ্রিম ৩ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। তার রশিদও ওই বাড়িতে রয়ে গিয়েছে। এ দিন চোখের সামনে বাড়ি ভাঙতে দেখব, স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। সবাই তো ঘরে যাচ্ছে, কিন্তু আমি ঘরে ঢুকতে পারিনি।”
দেখুন ভিডিওঃ
উমার প্রতিবেশী কিশোর গুপ্ত, দীপক গুপ্তদেরও অস্থায়ী ঠিকানা এখন হোটেল। তাঁরাও এক জামাকাপড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। সবারই প্রায় একই অভিযোগ, মেট্রো কর্তৃপক্ষ তাঁদের বলেছিলেন, কিছু হবে না। ঘরে চিড় ধরছে। তা সারিয়ে দেওয়া হবে। এত চিন্তা করতে হবে না। দু’ দিনের জন্যে হোটেলে থাকতে হবে। কিন্তু এমন বিপর্যয় যে নেমে আসবে ভাবতে পারছেন ওই এলাকার ৫২টি পরিবারের প্রায় ৪০০ জন বাসিন্দা। এ দিন আবার গৌরী দে লেনের বস্তির বাসিন্দাদেরও বাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy