‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ ছবিতে সৌরসেনী মৈত্র। ছবি: সংগৃহীত।
ছোট করে ছাঁটা চুল। সামান্য রূপটান। কামিজ়ের সঙ্গে জিন্স, হাতাকাটা জ্যাকেট। জৌলুসহীন, চেনা ছক থেকে বেরিয়ে আসা এক চরিত্র। যার অন্তরে সারা ক্ষণ বিদ্রোহের আগুন! সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবির নতুন চরিত্র ‘অরুন্ধতী’ সৌরসেনী মৈত্র। ক্যামেরার সামনে যাওয়ার আগে এই অভিনেত্রীকেই নাকি পরিচালক ওজন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন? আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি হয়ে যাবতীয় ‘সত্যি’ বলে ফেললেন অভিনেত্রী।
প্রশ্ন: অবশেষে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে...
সৌরসেনী: অবশেষে। পাশ করেছি। অনেকটা ধাপ এগিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছেছি।
প্রশ্ন: ছোট চুল, সামান্য রূপটান-- জৌলুসহীন, চেনা ছক থেকে বেরিয়ে আসা এক চরিত্রে?
সৌরসেনী: একেবারেই তাই। যেখানে অভিনয়ের সুযোগ অনেক বেশি। নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগও। সৃজিতদার ছবিতে কাজ করার জন্য এই কারণেই মুখিয়ে থাকা।
প্রশ্ন: বাসু চট্টোপাধ্যায়ের ‘এক রুকা হুয়া ফয়সালা’ না হলিউডের ‘টুয়েলভ অ্যাংরি মেন’— সৃজিতের ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ কার থেকে অনুপ্রাণিত?
সৌরসেনী: আমদের ছবি বাসুবাবুর ছবির আধুনিক সংস্করণ। সৃজিতদার চোখ দিয়ে দেখা। পরিচালক ১২ জন অভিনেতাকে নিয়েছেন। মাঠে ছেড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা খেলো’। ছবির ১২টি চরিত্রের প্রেক্ষাপট ১২ রকমের। ১২ রকমের মানসিকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি। তার থেকে একটি মত বা রায় উঠে আসবে। ছবির পটভূমিকায় আধুনিক ঘটনার ছায়া।
প্রশ্ন: সৃজিত কি আপনাকে অপরাধী সাজিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন?
সৌরসেনী: (হেসে ফেলে) ১২ জনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। ১২ জন একসঙ্গে একটি দল গঠন করেছি। তার পর বিশ্বকাপ খেলার মতো করে ১২ জন খেলোয়াড় মাঠে নেমেছিলাম। অবশ্যই ‘ক্যাপ্টেন অফ দ্য শিপ’ সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: ইংরেজি ছবি অনুযায়ী আপনিই কি ‘অভিযুক্ত’ চরিত্রে?
সৌরসেনী: ছবিটা দেখতে হবে। আমি তো কিছু বলব না! (জোরে হাসি) আমার চরিত্রের নাম ‘অরুন্ধতী’। একজন বিদ্রোহী পরিচালক। অন্তরে সারা ক্ষণ যেন আগুন জ্বলে তার। এই চরিত্রটিও রায়দাতাদের অন্যতম।
প্রশ্ন: আপনাকে ওজন বাড়াতে হবে, সৃজিত নাকি এই শর্ত দিয়েছিলেন?
সৌরসেনী: আর সেই খবর আনন্দবাজার অনলাইন দায়িত্ব নিয়ে প্রচার করেছিল! (হা হা হাসি)।
প্রশ্ন: সত্যিই ওজন বাড়িয়েছিলেন?
সৌরসেনী: বেশ অনেক দিন হয়ে গেল ছবির শুটিং হয়ে গিয়েছে। জানি না, সেই সময় ওজন বেড়েছিল কি না। ওজন নয়, দর্শক আমার অভিনয় দেখবেন। যথাসম্ভব নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যখন শুটিং করছিলাম তখন মনে হয় না সৃজিতদাও অভিনয়ের বদলে আমার ওজন নিয়ে মাথা ঘামিয়েছিলেন।
প্রশ্ন: কতটা খেলার সুযোগ পেলেন?
সৌরসেনী: খেলার প্রচুর সুযোগ পেয়েছি। কতটা খেলতে পেরেছি সেটা ২৩ জানুয়ারি দর্শক-সমালোচকেরা বলবেন। তবে প্রত্যেক অভিনেতাকে সমান জমি ছেড়ে দিয়েছিলেন পরিচালক। এক ইঞ্চি কম না, এক ইঞ্চি বেশিও না। ছবিতে প্রত্যেকের সমান সম্মান, সমান গুরুত্ব। কারও সঙ্গে পক্ষপাতিত্ব করেননি। যদি সমুদ্রে বসে থাকি তা হলে ১২ জন সমান ভাবে সমুদ্রে বসেছিলাম। রাত জেগে শুটিং করেছি ১২ জন মিলেই। আমরা পরিবার হয়ে গিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: কাজ করে আপনি তৃপ্ত?
সৌরসেনী: এই ছবির কাছে, পরিচালকের কাছে আজীবন ঋণী হয়ে থাকব। কোনও দিন তথাকথিত অভিনয় প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিইনি। কিন্তু ছবির মহড়ায় যোগ দিয়ে বা শুটিং করে উঠে মনে হয়েছে, যেন অভিনয়ের ‘মাস্টার ক্লাস’-এ এসেছি। আমার সহ-অভিনেতারাও তাবড়। প্রত্যেকের থেকে কিছু না কিছু শিখেছি। আমি তো তৃপ্ত।
প্রশ্ন: সৃজিত আপনার অভিনয়ে কতটা তুষ্ট?
সৌরসেনী: শুটিংয়ের আগে শুনেছিলাম, ভীষণ রাগী, বকাবকি করেন। তাই শুটিংয়ের আগে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, তুমি বকতেই পারো। প্লিজ়, আড়ালে বোকো। সকলের সামনে বকলে অপমানিত বোধ করব। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে অভিনয়টাই করতে পারব না। সৃজিতদা একটুও বকেনি! বরং আমায় নিজের হাতে গড়েছে। এ বার যদি ছাত্রী হিসেবে দর্শকদের থেকে ভাল নম্বর পাই সৃজিতদাও খুশি হবে।
প্রশ্ন: আপনি বোধহয় দলে সর্বকনিষ্ঠ, বাড়তি প্রশ্রয় পেয়েছেন?
সৌরসেনী: দলের যিনি বয়োজ্যেষ্ঠ তিনি যে সম্মান পেয়েছেন সেই একই সম্মান আমি সর্বকনিষ্ঠ হয়েও পেয়েছি। এটাকে প্রশ্রয় বললে তাই-ই।
প্রশ্ন: যৌথ পরিবারই বলুন বা দল— মিলমিশের পাশাপাশি ঠোকাঠুকিও লাগে...
সৌরসেনী: এই ছবির শুটিংয়ে সেটা হয়নি। বরং বড়রা তাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা গল্পচ্ছলে ভাগ করে নিয়েছেন। একসঙ্গে বসে আড্ডা দিয়েছেন। কত কী যে ঘটেছে! অভিনয় করতে করতে চোখে পড়েছে, সমুদ্রের দৃশ্যে এক স্বনামধন্য অভিনেতা-পরিচালক (পড়ুন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) শট দিতে গিয়ে জলের নীচে প্রায় তলিয়ে যাচ্ছেন! সংলাপ বলতে গিয়ে হঠাৎ দেখছি, দুটো চেয়ার খালি! কাঞ্চন মল্লিক একটা চেয়ারের পা ধরে ভাসছেন! রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য চেয়ারের প্রায় নীচে ঢুকে গিয়ে সাঁতার কেটে বাঁচার চেষ্টা করছেন। আমাদের সেটে এ সবও হয়েছে। আবার খাওয়াদাওয়াও দেদার। পেঁয়াজ পোস্ত থেকে সামুদ্রিক মাছ— ঢালাও আয়োজন।
প্রশ্ন: সৃজিতের ছবিতে যেমন ‘ডাল ভাত’ থাকে তেমনই ‘বিরিয়ানি’। ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ কোন গোত্রের?
সৌরসেনী: (হাসি) সব রান্নাতেই মশলা লাগে। বিভিন্ন রান্নায় বিভিন্ন ধরনের মশলা। ‘ডাল ভাত’-এ এক রকমের মশলা দরকার, ‘বিরিয়ানি’তে আর এক রকম। ছবির ক্ষেত্রেও তাই। বাকিটা দর্শকের রুচি। তাঁরা তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী ছবি দেখবেন। ফলে এখনই ছবিটিকে কোনও গোত্রে ফেলতে পারছি না। এটুকু বলতে পারি, একদম ভিন্ন স্বাদের মশলা দিয়ে ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ বানিয়েছেন পরিচালক।
প্রশ্ন: ২৩ জানুয়ারি আরও ছবি মুক্তি পাচ্ছে... টেনশন হচ্ছে?
সৌরসেনী: টেনশন করে লাভ নেই। আমি তো জনে জনে গিয়ে বলতে পারব না, আমার ছবিটাই দেখুন! বলবও না। এটা বলতে পারি, অন্য ছবির সঙ্গে ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ও দেখুন।
প্রশ্ন: এক দিনে এত ছবিমুক্তি, বাংলা বিনোদন দুনিয়ার পক্ষে কতটা স্বাস্থ্যকর?
সৌরসেনী: বলিউডেও এক দিনে একাধিক ছবি মুক্তি পায়। টক্করও হয়। টেক্কা বলব না, একাধিক বাংলা ছবি এক দিনে মুক্তি পেয়েও সহাবস্থান তো করতেই পারে। কারা টিকবে সেটা না হয় দর্শকের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হোক। এতে আর যা-ই হোক, দর্শক তো প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে যাবেন। এটাই বা মন্দ কী?
প্রশ্ন: অনুরাগীদের চেহারা অনেক ক্ষেত্রে মন্দ হচ্ছে, হালের উদাহরণ দেব-জ়িনিয়া-শিবপ্রসাদ...
উত্তর: বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছে। ফলে, এটা নিয়ে কোনও মন্তব্য না করাই ভাল। আমি যদি সাক্ষাৎকারে দর্শকদের উদ্দেশে বলি, বাকিদের ছবিও একই ভাবে দেখুন, সমর্থন জানান— সেটা লোকদেখানো নয়। মন থেকে বলছি, প্রত্যেককে সমান শুভেচ্ছা জানালাম।
প্রশ্ন: নিখিল জৈন ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ দেখতে যাবেন?
সৌরসেনী: অবশ্যই দেখা উচিত। আমার ভাল বন্ধু যখন। একা নিখিল নয়, আমার বাকি বন্ধু, আত্মীয়, কাছের মানুষ এবং অনুরাগী— সবাইকে আনন্দবাজার অনলাইনের মারফত অনুরোধ জানাচ্ছি, প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটা প্লিজ দেখবেন।
প্রশ্ন: নিখিল সত্যি শুধুই বন্ধু?
সৌরসেনী: সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই.... বলেই গলা ফাটিয়ে হেসে উঠলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy