গোপনে: এ ভাবেই আনা হয়েছিল ইউরো। —নিজস্ব চিত্র।
মামা আর ভাগ্নে। ফর্সা, মাঝারি মাপের চেহারা। উত্তর ভারতের ওই দুই যুবক একসঙ্গে যাত্রা করবেন— এমনই তথ্য এসেছিল কলকাতা বিমানবন্দরের শুল্ক অফিসারদের কাছে। মঙ্গলবার মাঝরাতে ব্যাঙ্কক যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে দু’লক্ষ ২৮ হাজার ৫০০ ইউরো সমেত ধরা পড়েছেন ওই মামা-ভাগ্নে। বাজেয়াপ্ত ইউরোর দাম ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় এক কোটি ৭২ লক্ষ টাকা।
রবিবার রাতেই দিল্লি বিমানবন্দরে বিমানের ভিতর থেকে তিন কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ডলার সমেত ধরা পড়েছেন দেবশী কুলশ্রেষ্ঠ নামে জেট এয়ারওয়েজের এক বিমানসেবিকা। অভিযোগ, তিনি ওই ডলার নিয়ে হংকং যাচ্ছিলেন। বিমানসেবিকারা যে ব্যাগ নিয়ে যাতায়াত করেন, সেই ব্যাগের ভিতরে ফয়েলে মোড়া ছিল ওই ডলার।
আর মঙ্গলবার রাতে যে দুই যুবক ধরা পড়েছেন, তাঁদের জুতোর সুখতলায় লুকনো ছিল ইউরো। শুল্ক অফিসারদের দাবি, এর আগে কলকাতায় একসঙ্গে এত বিশাল অঙ্কের বিদেশি মুদ্রা ধরা পড়ার বেশি নজির নেই। ধৃতদের নাম বশিষ্ঠকুমার সিংহ (৩০) এবং অনুপ শ্রীনেত (২২) বলে জানিয়েছে শুল্ক দফতর। মামা বশিষ্ঠ থাকেন হাওড়ায়। ভাগ্নে অনুপ থাকেন উত্তরপ্রদেশে। পাসপোর্ট পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, বশিষ্ঠ আগে কখনও বিদেশে যাননি। তাঁর পাসপোর্ট হয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। আর ভাগ্নে অনুপ ২০১৪ সালে পাসপোর্ট বানিয়ে বারবার বিদেশে যাতায়াত করেছেন। ফলে, বিদেশি মুদ্রা পাচারে ভাগ্নেই মামাকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন শুল্ক অফিসারেরা।
প্রাথমিক জেরায় মামা-ভাগ্নে জানিয়েছেন, চামড়ার যে চটি জোড়া তাঁরা পরেছিলেন, সেগুলি কলকাতার এক ব্যক্তি তাঁদের দিয়ে জানিয়েছিলেন, এগুলো পরে যেতে হবে। এর মধ্যে টাকা রয়েছে। তাঁরা ব্যাঙ্ককে পৌঁছলে এক ব্যক্তি এসে দু’জনের চার পাটি চটি নিয়ে যাবেন। ব্যাঙ্ককে মামা-ভাগ্নে নতুন জুতো কিনে নেবেন। এই চটি ব্যাঙ্ককে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে বলেও মামা-ভাগ্নে জানিয়েছেন। তা ছাড়া, বিমানে করে যাতায়াত ও ব্যাঙ্ককের হোটেলে থাকা-খাওয়ার খরচ আলাদা করে পাওয়া গিয়েছে।
শুল্ক দফতর সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত ১২টার পরের এক উড়ানে মামা-ভাগ্নের ব্যাঙ্কক যাওয়ার কথা ছিল। সেই মতো রাত দশটা নাগাদ তাঁরা যখন কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছন, তখন থেকেই তাঁদের উপরে দূর থেকে নজর রাখতে শুরু করেন অফিসারেরা। তাঁদের হাঁটাচলা দেখে সন্দেহ ঘনীভূত হয় অফিসারদের। অভিবাসন ও শুল্ক কাউন্টার পেরোনোর পরে পথ আটকানো হয় তাঁদের। দেহ ও ব্যাগ তল্লাশি করে কিছু পাওয়া যায়নি। চটি জোড়া খুলে হাতে নিয়ে দেখা যায়, তুলনায় সেগুলো বেশ ভারী। সুখতলার সেলাই খুলতেই বেরিয়ে পড়ে ইউরো।
বুধবার মামা-ভাগ্নেকে বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy