মর্মান্তিক: মৃত ভুবনেশ্বর দাস। (ইনসেটে) এই ট্যাঙ্কের জল খেয়েই তাঁর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। সোমবার, ভবানীপুরে। ছবি: সুমন বল্লভ
কলকাতা পুরসভার সরবরাহ করা পানীয় জলে দূষণের জেরে পুরসভারই এক কর্মী এবং আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের এক বিচারাধীন বন্দির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মৃত পুরকর্মী থাকতেন ভবানীপুরের শশিশেখর বসু রোডে, পুরসভার শ্রমিক আবাসনে। তাঁর নাম ভুবনেশ্বর দাস (৫২)। মৃত মহিলা বন্দির নাম রিমকি তামাং।
শশিশেখর বসু রোড এবং আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার-সহ ৭৩ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকায় ওই দূষণ ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ। ওই জল খেয়ে প্রায় ৭০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। কেউ হাসপাতালে ভর্তি, কেউ বা বাড়িতে শয্যাশায়ী। মৃত পুরকর্মীর আদি বাড়ি ওড়িশায়। কাজ করতেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসেবে।
কারা দফতর সূত্রের খবর, আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের চার বন্দিও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এঁদের মধ্যে রিমকি তামাং সোমবার এসএসকেএমে মারা যান। অসুস্থ বোধ করায় রবিবার তাঁকে ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও পরে ছেড়ে দেন চিকিৎসকেরা। এ দিন ফের অসুস্থ হয়ে পড়ায় রিমকিকে আবার এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই দুপুরে মারা যান তিনি।
পুরসভা সূত্রের খবর, দিন সাতেক আগে ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের শশিশেখর বসু রোডে শ্রমিক আবাসনের কল থেকে ময়লা জল বেরোতে দেখেন সেখানকার আবাসিকেরা। এ দিন তাঁরা জানান, যাঁরা ওই জল খেয়েছিলেন, তাঁরা একে একে অসুস্থ হতে শুরু করেন। ঘন ঘন বমি ও মলত্যাগের লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন অনেকে। মৃত ভুবনেশ্বরের মেয়ে ও জামাইও অসুস্থ হয়ে পড়েন। জামাই রাজেন্দ্রকুমার দাস বলেন, ‘‘শ্বশুরমশাই দিন সাতেক আগে আবাসনের চৌবাচ্চার জল খেয়ে অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। ঘন ঘন বমি, পায়খানা হতে শুরু করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়াবাড়ি হওয়ায় প্রথমে ওঁকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে করোনা পরীক্ষা করাতে বলায় ন্যাশনাল মেডিক্যালে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানেও করোনা পরীক্ষা করাতে হত। তাই পার্ক সার্কাসের একটি নার্সিংহোমে শনিবার সকালে ওঁকে ভর্তি করি। সে দিন রাতেই শ্বশুরমশাই মারা যান।’’
ওই আবাসনেরই আর এক জন বাসিন্দা দুর্গা দাসের ছেলে ও স্ত্রী, দু’জনেই পানীয় জলের সংক্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্ত্রী বাড়িতে শয্যাশায়ী। ছেলে বচ্চনকুমার দাস এলগিন রোডের নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। দুর্গার অভিযোগ, ‘‘বহু বছর ধরে এই আবাসনে আছি। আজ পর্যন্ত নিকাশি বা পানীয় জলের লাইনের কোনও সংস্কার হয়নি। সাত দিন আগে ময়লা জল বেরোলেও পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের দেখা এখনও পাইনি।’’ শশিশেখর বসু রোডে পুরসভার ওই শ্রমিক আবাসনে প্রায় ৩০ জন দূষিত জল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ।
ওই আবাসনের পাশাপাশি এলাকার বস্তি এবং অন্যান্য বাড়িতেও পুরসভার সরবরাহ করা পানীয় জল খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ। কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম এই ঘটনায় পুরসভার গাফিলতির কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভবানীপুরে পানীয় জল থেকে সংক্রমণের কথা সোমবার সকালে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে পুরসভার আধিকারিকদের আগে থেকে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। তবে আমি ঘটনার কথা শোনা মাত্রই এ দিন সকালে জল সরবরাহ বিভাগের ডিজি-কে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করতে বলেছি। কমিশনারকেও বিষয়টি সরেজমিন দেখতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’ তবে পুরকর্মীর মৃত্যু প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি হৃদ্যন্ত্র-সহ একাধিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ডেথ সার্টিফিকেটে সে কথারই উল্লেখ রয়েছে।’’
এই ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর রতন মালাকার বললেন, ‘‘দিন চারেক আগে ডি এল খান রোডের একাংশে পানীয় জলের সঙ্গে নিকাশির জল মিশে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। আমরা ওই এলাকায় পাইপ মেরামতি করেছি। এখন কোনও সমস্যা নেই।’’ তবে পানীয় জলের সংক্রমণ যে গোটা শশিশেখর বসু রোডে ছড়িয়েছে, তা মেনে নিয়ে ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর বলেন, ‘‘পানীয় জলের সংক্রমণের শিকার হয়েছেন গোটা শশিশেখর বসু রোডের বাসিন্দারা। আমরা খবর পাওয়া মাত্রই জলে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়েছি। রবিবার থেকে শ্রমিক আবাসনের সামনে জলের গাড়িও রাখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy