প্রতীকী ছবি।
‘ডাক্তারবাবু কি এখন আর রোগী দেখবেন?’
ভোট-যুদ্ধের দামামা বাজতেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অলিগলি থেকে রাজপথের বাসিন্দার মনে উঁকি দিতে শুরু করেছে এমন প্রশ্ন। চেনা-পরিচিত পাড়ার চিকিৎসক যখন বিধানসভা ভোটের প্রার্থী, তখন এমন সংশয় তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কারণ ভোট প্রচারে দিনভর মিছিল-জনসভা সামলে ওই চিকিৎসক রোগীদের জন্য আদৌ কতটা সময় বার করতে পারবেন, তা নিয়েই এখন ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। অনেকে এটাও বলছেন, ‘‘ডাক্তারবাবু তো লড়াইয়ে ব্যস্ত। তা হলে আমাদের সাধারণ মানুষের কী হবে? অনেকের তো অনেক চিকিৎসকের উপরে বিশেষ ভরসা থাকে।’’
সেই ভরসায় ভাঁটা পড়ার কোনও কারণ নেই বলেই মত শাসকদলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সম্পাদক, চিকিৎসক শান্তনু সেনের। তিনি মনে করেন, প্রার্থী এক জন চিকিৎসক হলে একেবারে মানুষের ঘরের ভিতরে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ থাকে। নিজের প্রচারের সময়ের উদাহরণ টেনে শান্তনু বলেন, ‘‘প্রচারে বেরিয়ে কারও বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ঘরে অত্যন্ত অসুস্থ কেউ রয়েছেন। সেই সময়ে তাঁর কোনও সমস্যা হচ্ছে। তৎক্ষণাৎ প্রার্থী যদি ওই রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করতে পারেন, তা হলে তো খুবই ভাল। এতে প্রার্থীর উপরেই মানুষের বিশ্বাস বাড়ে।’’
চিকিৎসকেরাই জানাচ্ছেন, তাঁদের পেশার ধরনটা দু’রকমের। একদল রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় স্তরের কোনও হাসপাতালে চাকরি করেন। আর এক দল বেসরকারি ভাবে প্র্যাক্টিস করেন। তাই সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত কোনও চিকিৎসককে ভোটে দাঁড়াতে গেলে আগে চাকরি ছাড়তে হয়। বঙ্গের রাজনীতির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে কয়েক জন সরকারি চিকিৎসক সে পথেও হেঁটেছেন। তবে সাধারণত সরকারি চিকিৎসকদের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে এসে ভোটে দাঁড়ানোর প্রবণতা অনেক কম থাকে। সেই জায়গায় বেসরকারি ভাবে প্র্যাক্টিস করা চিকিৎসকদের ভোটে প্রার্থী হওয়ার পাল্লাই তুলনায় অনেকটা ভারী।
যেমন, বালিতে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন শিশুরোগ চিকিৎসক রানা চট্টোপাধ্যায়। তিনি প্রার্থী হওয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, ‘উনি কি আর বাচ্চাদের দেখবেন? ভোটের প্রচার সামলে সময় দেবেন কখন?’
যদিও রানার দাবি, ‘‘এক দিকে ভোটের প্রচার, অন্য দিকে শিশুদের চিকিৎসা করা— দুটো মিলিয়ে আমার শারীরিক পরিশ্রম কিছুটা বেড়ে গিয়েছে ঠিকই। তা-ও প্রতিদিনই দু’বেলা চেম্বার চালু রাখার চেষ্টা চালাচ্ছি। অন্তত এক বেলা তো করছিই। আগামী দিনেও তা-ই করব।’’
নিজের চেম্বারের দরজায় ‘রাজনৈতিক কোনও আলোচনা এখানে নয়’ লিখে পোস্টার সেঁটেছেন বলে দাবি বালির তৃণমূল প্রার্থীর। রানার দাবি, ‘‘করোনা পরিস্থিতি এখনও যায়নি। মায়েরা শিশুদের নিয়ে আসেন, সেখানে অযথা ভিড় ঠিক নয়। আর চেম্বার তো দলমত নির্বিশেষে সকল শিশু এবং চিকিৎসক রানা চট্টোপাধ্যায়ের। কোনও প্রার্থীর নয়।’’
অভিনয় জগতের তারকা, আইনজীবী, খেলোয়াড়দের মতো চিকিৎসকদেরও রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। প্রচুর চিকিৎসক ইতিমধ্যে সরাসরি রাজনীতিতে এসেছেন। তাই এক জন চিকিৎসক যে এলাকায় চেম্বার করেন, সেখানে তাঁকে প্রার্থী করা উচিত। তাতে নতুন করে ওই চিকিৎসকের পরিচিতির প্রয়োজন হয় না বলেই মনে করেন বিজেপির চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য সোমনাথ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসক নিজের এলাকায় প্রার্থী হলে দিনের অন্তত একটা সময়ে রোগী দেখার কাজটাও করতে পারেন। প্রচারের জেরে সেই সময়টা কমলেও চিকিৎসা পরিষেবা তো দিয়ে যেতেই হবে। এ ছাড়া ওই চিকিৎসক তাঁর পরিচিত গোষ্ঠীর অন্য চিকিৎসকের নম্বরও দিয়ে রাখতে পারেন। তাতে অন্তত জরুরি প্রয়োজনে রোগীরা যোগাযোগ করতে পারবেন।’’
কিছু চিকিৎসক অবশ্য এখন পেশা ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে সময় দেন। তাঁদের বাদ দিলে যাঁরা দু’দিকই সামলাচ্ছেন, তাঁদের সামঞ্জস্য রেখেই সব কাজ করতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বালিগঞ্জ কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী, চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম। তিনি বলছেন, ‘‘এক দিকে ভোটের প্রচার আর অন্য দিকে মানুষের চিকিৎসা। দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। রোগীরা যাতে বঞ্চিত না হন, আবার ভোট প্রচারেও যাতে খামতি না থাকে, সেই সামঞ্জস্য রেখেই সব করতে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy