ফাইল চিত্র।
স্কুলের বকেয়া ফি জমা দিতে না পারলেও সেই পড়ুয়ার পঠনপাঠন বন্ধ রাখা যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট স্কুলের ফি সংক্রান্ত রায় দেওয়ার আগে পর্যন্ত তাকে অনলাইন বা অফলাইন ক্লাস থেকে ব্রাত্য রাখা যাবে না। পরীক্ষাতেও বসতে দিতে হবে। বেসরকারি স্কুলের বকেয়া ফি সংক্রান্ত মামলায় শুক্রবার এমনই রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক অভিভাবকই জানাচ্ছেন, এই রায়ে অনেকটাই স্বস্তি মিলেছে। কিন্তু বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের মতে, আগামী শিক্ষাবর্ষেও বকেয়া ফি না মেটানো হলে স্কুল পরিচালনা করাই মুশকিল হয়ে উঠতে পারে। আবার অনেক স্কুল হাইকোর্টের এই রায় মানছে না বলেও অভিযোগ করছেন অভিভাবকদের একাংশ।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি কোভিড-বিধি মেনে রাজ্যের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য স্কুল খুলেছে। শুরু হয়েছে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসও। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি জানান, তাঁদের স্কুলের অধিকাংশ পড়ুয়ার ফি জমা পড়েছে। যারা এখনও দিতে পারেনি, তাদের পঠনপাঠন বন্ধ করা হয়নি। তবে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বকেয়া ফি মিটিয়ে নতুন ক্লাস শুরু করার জন্য ওই পড়ুয়াদের অভিভাবকদের জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, “নতুন শিক্ষাবর্ষে যদি ফি না-দেওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি থাকে, তা হলে স্কুলের পঠনপাঠনই ব্যাহত হবে। কারণ, স্কুল ভবন জীবাণুমুক্ত করা-সহ বেশ কিছু খরচও কিন্তু বেড়েছে।”
শ্রীশিক্ষায়তন স্কুলের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য জানান, ফি দিতে না-পারলেও কোনও পড়ুয়ার অনলাইন ক্লাস বন্ধ করেননি তাঁরা। কিন্তু যে সব অভিভাবকের ফি দেওয়ার সামর্থ্য আছে, তাঁদের ফি মিটিয়ে দিতে বলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। না-হলে আখেরে সার্বিক পঠনপাঠনই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সম্প্রতি রাজ্যের স্কুলগুলিতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস শুরু হলেও অভিভাবকদের কথা মাথায় রেখে এখনও ওই ক্লাস বাবদ কোনও ফি নেওয়া হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন বেশ কিছু স্কুলের অধ্যক্ষেরা। তবে তাঁদের মতে, আগামী শিক্ষাবর্ষেও এ ভাবে চালানো কার্যত অসম্ভব। ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুলের অধ্যক্ষ মৌসুমী সাহা বললেন, “করোনা পরিস্থিতিতে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করানোর খরচ বেড়েছে অনেকটাই। এক জন ছাত্র একটি যন্ত্র ব্যবহার করার পরে সেটি জীবাণুমুক্ত করে তবেই অপর জনকে তা ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে। দূরত্ব-বিধি মেনে চলার জন্য পড়ুয়াদের ভাগ করে করে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করানো হয়। ফলে ক্লাসের বিদ্যুতের খরচও বেড়েছে। এই সব খরচ চলতি শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়াদের থেকে নেওয়া হয়নি। কিন্তু পরের বারও কি এই ছাড় দেওয়া সম্ভব?”
কয়েকটি স্কুলের অধ্যক্ষের মতে, গত মাস থেকে স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হলেও ওই পড়ুয়াদের থেকে এখনও ৮০ শতাংশ ফি-ই নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ক্লাস পুরো চালু হয়ে যাওয়ার পরেও যদি পুরো ফি না নেওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের বেতন কী ভাবে দেওয়া সম্ভব হবে, তা নিয়েও সংশয়ে ভুগছেন তাঁরা।
যদিও অভিভাবকদের একাংশের মতে, অনেক স্কুলই হাইকোর্টের এই রায় মানছে না। ফি-র ৮০ শতাংশ নয়, পুরো ফি দাবি করছে অনেক স্কুলই। বকেয়া ফি জমা দিতে না পারলে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়াকে অনলাইন ক্লাস করতে দেওয়া হচ্ছে না— এমন অভিযোগও উঠছে। বারাসতের কাছে একটি বেসরকারি স্কুল বাস ফি না দেওয়ার কারণে রেজ়াল্ট আটকে দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ইউনাইটেড গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “কোনও অভিভাবকই হাইকোর্টের রায়ের সুবিধা নেন না। সকলেই ৮০ শতাংশ ফি মিটিয়ে দিতে ইচ্ছুক। বরং অনেক স্কুল রায় না মেনে পুরো ফি চাইছে। না দিতে পারলে ক্লাস করতে দিচ্ছে না। স্কুল বন্ধ থাকাকালীন যে সব পরিষেবার ফি না নেওয়ার কথা বলেছে হাইকোর্ট, সেই সব ফি-ও নেওয়া হচ্ছে কিছু স্কুলে। এই বিষয়ে আমরা রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy