Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

হেলমেট ছাড়া বাইকে, জোড়া দুর্ঘটনায় মৃত ২

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাত সওয়া ১টা নাগাদ প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে চারু মার্কেট থানা এলাকার লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলের কাছে বিশ্বাসপাড়া মোড়ে। যাদবপুর থানা এলাকার ৩৬/২ প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোডের মাদারতলা বস্তির বাসিন্দা ছয় বন্ধু সম্রাট দাস (২১), রাজীব আলি, শেখ শাহরুখ, হাসান রহমান, অমিত সাউ এবং পিন্টু বারিক বিরিয়ানি কিনতে লেক গার্ডেন্স উড়ালপুল ধরে শরৎ বসু রোডের দিকে যাচ্ছিলেন।

শোকাহত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সম্রাট দাসের (ইনসেট) মা। (ডান দিকে) সতীনাথ মাহাতোর (ইনসেট) স্ত্রীকে সান্ত্বনা পরিজনেদের। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

শোকাহত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সম্রাট দাসের (ইনসেট) মা। (ডান দিকে) সতীনাথ মাহাতোর (ইনসেট) স্ত্রীকে সান্ত্বনা পরিজনেদের। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৯ ০৩:৫০
Share: Save:

পুলিশের সতর্কবাণী, কড়া পদক্ষেপের বার্তা— সবই আছে। তবু আটকানো যাচ্ছে না শহরের রাস্তায় হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক ‘রেস’। যার জেরে শনিবার রাতে পৃথক দু’টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন দুই যুবক। পুলিশ জানিয়েছে, দুই যুবকের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না।

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাত সওয়া ১টা নাগাদ প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে চারু মার্কেট থানা এলাকার লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলের কাছে বিশ্বাসপাড়া মোড়ে। যাদবপুর থানা এলাকার ৩৬/২ প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোডের মাদারতলা বস্তির বাসিন্দা ছয় বন্ধু সম্রাট দাস (২১), রাজীব আলি, শেখ শাহরুখ, হাসান রহমান, অমিত সাউ এবং পিন্টু বারিক বিরিয়ানি কিনতে লেক গার্ডেন্স উড়ালপুল ধরে শরৎ বসু রোডের দিকে যাচ্ছিলেন। সম্রাটের স্কুটিতে ছিলেন বন্ধু রাজীব আলি। বিশ্বাসপাড়া মোড়ের কাছে সম্রাটের স্কুটিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে সজোরে ধাক্কা মারলে দু’জনই ছিটকে পড়েন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিবানী দে জানান, তিনি ও তাঁর স্বামী দীপক দে টিভি দেখছিলেন। আচমকা বিকট শব্দে জানলা খুলে শিবানী দেখেন, রাস্তার উপরে দুই যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। কিছুটা দূরে তাঁদের চার বন্ধু আরও দু’টি বাইকে ছিলেন। শিবানীর কথায়, ‘‘সম্রাটের সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। কোনওমতে বাকি বন্ধুরা ওঁকে রাস্তার এক ধারে নিয়ে আসেন। গাড়ি দাঁড় করিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন ওঁরা। কিন্তু কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি। এক ট্যাক্সিচালক তো দেখেই পালিয়ে গেলেন।’’ এই পরিস্থিতিতে চারু মার্কেট থানায় দুর্ঘটনার খবর দেন শিবানীর স্বামী দীপক দে। তবে পুলিশের গাড়ির জন্য অপেক্ষা না করে সম্রাটকে মাঝে বসিয়ে এম আর বাঙুরের উদ্দেশে বাইক নিয়েই রওনা হন শাহরুখেরা। পুলিশের গাড়ি রাজীবকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। পুলিশ জানায়, সম্রাটকে বাঙুর থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথেই মৃত্যু হয় তাঁর।

রবিবার শাহরুখ বলেন, ‘‘দু’-তিনটি গাড়ি দাঁড় করানোর চেষ্টা করলাম। একটি ট্যাক্সিও ডাকলাম। কেউ সম্রাটকে তুলতে চাননি। এ ভাবে ১৫ মিনিট নষ্ট হয়ে গেলে বাইকের মাঝে বসিয়ে সম্রাটকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’’ মাথায় হেলমেট ছিল না কেন? প্রশ্ন শুনে কিছু ক্ষণ চুপ করে থেকে বন্ধুর উত্তর, ‘‘আর কোনও দিন বাইক চালাব না। হেলমেট না পরা ঠিক হয়নি।’’ এ দিন মাদারতলার বাড়িতে বসে সম্রাটের মা গীতা দাসের আক্ষেপ, ‘‘এখনকার ছেলেরা কথা শোনে না। হেলমেট খাটে রেখে বেরিয়ে যেত। কিছু বললে বলত, এই তো বাড়ির কাছেই আছি!’’ পুলিশ জানায়, এ দিনই দুপুরে হেলমেট ছাড়া দুই যুবককে ট্র্যাফিক আধিকারিক ধরলে উত্তর মেলে, ‘‘সামনেই বাড়ি। তাই আর হেলমেট পরিনি!’’

শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ ঘটেছে দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটি। বন্ধুকে মোটরবাইকের পিছনে বসিয়ে চা খেতে বেরিয়েছিলেন বীরেন রায় রোডের বাসিন্দা সতীনাথ মাহাতো (২৭)। বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাতে গেলে শশিভূষণ মুখার্জি রোড এবং জেমস লং সরণির মোড়ে সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিটকে যায়। দুর্ঘটনায় দুই যুবকের মাথাতেই চোট লাগে। বন্ধুরাই তাঁদের তুলে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সতীনাথকে বাঁচানো যায়নি। মাথায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার সতীনাথের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, কেব্‌লের কাজ করতেন তিনি। দু’বছর আগে বিয়ে হয়েছে। মাথায় হেলমেট ছিল না কেন? সতীনাথের দাদা শিবনাথের উত্তর, ‘‘বেশি দূরে যাচ্ছিল না। তা ছাড়া, ভাই খুব জোরে বাইক চালাত না!’’

শুধু রাত নয়, দিনেও যে হেলমেট ছাড়া বাইক চলার দৃশ্য রীতিমতো নিয়ম হয়ে গিয়েছে এ শহরে, তা দেখা গেল রবিবারও। লেক গার্ডেন্সের ঘটনাস্থলের সামনে দাঁড়িয়ে এ দিনও যাদবপুর ট্র্যাফিক গার্ডের এক আধিকারিক দেখতে পান বেপরোয়া বাইকের চলাচল। নিয়ম ভাঙা বাইকচালকদের ধরতে নির্দেশ দেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Death Nike Helmet Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE