Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

গোলমাল চলছেই হাসপাতালে

ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সিএমআরআই হাসপাতালের উপরে কয়েক বার হামলার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি সিরাজ খান নামে এক রোগীকে ভর্তি করা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রোগীর পরিজনদের মধ্যে ফের সমস্যা তৈরি হয়।

তাণ্ডব: মাস কয়েক আগে সিএমআরআই হাসপাতালে এ ভাবেই চলেছিল ভাঙচুর। —ফাইল চিত্র।

তাণ্ডব: মাস কয়েক আগে সিএমআরআই হাসপাতালে এ ভাবেই চলেছিল ভাঙচুর। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০১:৫০
Share: Save:

অভিযোগ একের পর এক রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে বিল না মিটিয়েই চলে যাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে জুটছে হুমকি এমনকী মারধরও। এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জরুরি বিভাগে ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সিএমআরআই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তাঁরাই শুক্রবার সিদ্ধান্ত নেন বিভিন্ন বিভাগের আউটডোরও বন্ধ থাকবে। সিএমআরআই-কে সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালও আজ, শনিবার আউটডোর বন্ধ রাখবে বলে জানিয়েছে।

ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সিএমআরআই হাসপাতালের উপরে কয়েক বার হামলার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি সিরাজ খান নামে এক রোগীকে ভর্তি করা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রোগীর পরিজনদের মধ্যে ফের সমস্যা তৈরি হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় কংগ্রেস নেতা রাকেশ সিংহ কয়েক দিন আগে সিরাজ খান নামে এক ব্যক্তিকে ভর্তি করতে সুপারিশ করেছিলেন। ওই ব্যক্তির হাতে পচন ধরেছিল। অস্ত্রোপচার হয় সিএমআরআইয়ে। অস্ত্রোপচারের আগে চিকিৎসার খরচও জানানো হয়েছিল। অভিযোগ, চিকিৎসা বাবদ এক লক্ষ টাকা বিল হলেও রোগীর পরিবার বিল মেটাতে রাজি হয়নি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, রাকেশ সিংহ টাকা না দিয়ে রোগীকে ছে়ড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দেন। হাসপাতাল বাধ্য হয় রোগীকে ছেড়ে দিতে। বিল না মেটানোর পাশাপাশি চিকিৎসক এবং হাসপাতালের কর্মীদের হেনস্থার ঘটনাও ঘটেছে বারবার। পুলিশের ভূমিকাতেও ক্ষুব্ধ চিকিৎসকেরা। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পরিষেবা স্বাভাবিক হবে না বলেই জানিয়েছেন তাঁরা।

এ দিন সিএমআরআই হাসপাতালের সিইও উত্তম বসু বলেন, ‘‘সব সময় রোগীকে ভাল পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করে হাসপাতাল। কিন্তু কিছু দিন ধরে বহিরাগত গুন্ডারা চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীদের হেনস্থা করছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের পাশে রয়েছে।’’

রাকেশ সিংহের বিরুদ্ধে হাসপাতালের তরফে আলিপুর থানায় অভিযোগ হয়েছে। যদিও রাকেশবাবু বলেন, ‘‘আমি রাজনীতির শিকার। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই রোগীর চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ আমিই দিয়েছি। পুলিশকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। পুলিশের অনুরোধেই আমি হাসপাতালে গিয়ে টাকা দিয়ে এসেছি। শাসানির কোনও ঘটনা ঘটেনি। ফোনে পুলিশ ও চিকিৎসক দু’পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। সমস্ত তথ্য প্রমাণ দাখিল করতে আমি প্রস্তুত।’’

শুক্রবার সিএমআরআই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে অন্য একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল। যেমন কোঠারি মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ফি-দিন স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার সময়ে তাঁদের নানা হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। তাই চিকিৎসকদের প্রতিবাদের পাশে তাঁরাও রয়েছেন। মেডিকা হাসপাতালের তরফে মেডিক্যাল অধিকর্তা চিকিৎসক সৌমেন বসু বলেন, ‘‘রোগীদের একটা বড় অংশ বিল না মিটিয়ে ভয় দেখিয়ে চলে যাচ্ছেন। এই ঘটনা আমাদের হাসপাতালেও হয়েছে। এ রকম চলতে থাকলে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা মুখ থুবড়ে প়়ড়বে। চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগ থাকলে সেটা জানানোর নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। কিন্তু এ ভাবে চিকিৎসক-হাসপাতাল কর্মীদের হেনস্থা করা ঠিক নয়।’’

আমরি হাসপাতালের সিইও রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা বাধ্য হয়েই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে অবিলম্বে কোনও পদক্ষেপ না করলে পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা চালানো মুশকিল হবে।’’ তবে, ফর্টিস কিংবা অ্যাপোলো হাসপাতাল এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। অ্যাপোলো হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রতি দিন নানা সমস্যা ভোগ করতে হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। তা হলে ঝামেলা আরও বাড়বে।’’

‘ইউনাইটেড ডক্টর্স ভয়েস অব বেঙ্গল’ নামে চিকিৎসকদের একটি সংগঠনও এই দাবিকে সমর্থন করে সব বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE