অসুস্থ আত্মীয়ের চিকিৎসার জন্য বেলেঘাটা থেকে মুকুন্দপুরের দিকে যাচ্ছিলেন শিবনাথ দাস। দুপুরবেলা আশপাশের রাস্তা ফাঁকা হওয়া সত্ত্বেও ছোট ছোট ক্রসিংয়ে পাক্কা এক-দু’মিনিট তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছিল। বাধ্য হয়ে তিনি চেনা এক অফিসারকে ফোন করে ওই সময় নষ্টের কথা বলেছিলেন। কিন্তু অটো সিগন্যাল চলছে। তাই কিছু করা যাবে না বলে তিনি জানিয়ে দেন শিবনাথবাবুকে।
যাদবপুর থানা থেকে লেক গার্ডেন্সের দিকে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন অমিতাভ বসু। রাস্তা ফাঁকা হওয়া সত্ত্বেও অটো সিগন্যাল চলার জন্য বারবার অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। ধৈর্য না রাখতে পেরে বাধ্য হয়ে পুলিশ অফিসারের সঙ্গে বচসাও জুড়ে দেন তিনি।
একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয় রাস্তায় বেরোনো সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পুলিশ অফিসারদের সকলকেই। লালবাজার জানাচ্ছে, রাস্তা ফাঁকা থাকলে এ বার থেকে অযথা যাতে কোনও সিগন্যালে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়, তার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। প্রয়োজন পড়লে লালবাজারে বসেই রাস্তার মোড়ে থাকা ট্রাফিক সিগন্যালের অপেক্ষামান ‘টাইমার’-এর সময় ঠিক করবেন আধিকারিকেরা। সিসিটিভি-র ছবি দেখে রাস্তায় যানবাহনের চাপ বুঝে পুলিশকর্তারা ওই টাইমারের সময় ঠিক করবেন। এ জন্য লালবাজারের ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে নতুন একটি যন্ত্র বসানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে দিনে বেশ কয়েক বার সিগন্যালের অপেক্ষার সময়ে লালবাজার থেকে ঠিক করে দিচ্ছেন ট্রাফিকের কর্তারা। পুলিশের দাবি, ওই ব্যবস্থায় গাড়ির চালকদের অযথা হয়রানি কম হবে। সেই সঙ্গে শহরের গাড়ির গতি কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাবে বলে পুলিশ
কর্তাদের অনুমান।
লালবাজার সূত্রের খবর, চলতি বছরের গোড়া থেকে শহরের ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাকে এক সূত্রে বাধার জন্য অটো সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। প্রতিটি রাস্তার মোড়ে থাকা সিগ্যনাল ব্যবস্থাকে মেলানো হয়েছিল ওই অটোর সিগন্যালিংয়ের মাধ্যমে। যাতে এক বার সবুজ সিগ্যনাল থাকলে পরবর্তী কয়েকটি মোড়ে গাড়ি না থমকে যায়। মূলত সে জন্যই হয়েছিল ওই ব্যবস্থা। কিন্তু পুলিশের একাংশের অভিযোগ ছিল, অন্য দিন ওই ব্যবস্থায় যানবাহনের গতি স্বাভাবিক থাকলেও গোল বাধছিল ছুটির দিন কিংবা শহরের কোথাও সভা-সমাবেশ থাকলে।
পুলিশ সূত্রের খবর, সভা-সমাবেশের জেরে যানজট হলে ট্রাফিক গার্ডের ওসি-রা ওই অটো ব্যবস্থা থেকে সিগন্যাল ম্যানুয়াল করে চালাতেন। তার আগে অবশ্য তাঁদের লালবাজারের ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে অনুমতি নিতে হত। কিন্তু ওই ব্যবস্থা ছিল সাময়িক। তবে গার্ডের ওসি-দের পক্ষে কোনও ভাবেই অটো সিগন্যালের টাইমিং পরিবর্তন করার ক্ষমতা ছিল না। লালবাজারের এক কর্তা জানান, কোনও টাইমারের সময় পরিবর্তন করতে হলে প্রথমে গার্ডের ওসি-কে ট্রাফিক বিভাগে জানাতে হত। সেখানে অনুমতি মেলার পরে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংস্থার প্রতিনিধি গিয়ে সংশ্লিষ্ট মোড়ে টাইমারের সময় পরবর্তন করত। পুরো বিষয়টি শেষ করতে দু’-তিন দিন লেগে যেত। এ বার প্রয়োজন বোধ করলে লালবাজার থেকে নিমিষে তা পরিবর্তন করা যাবে।
কী ভাবে এখন কাজ করবে নতুন ব্যবস্থা? লালবাজার সূত্রের খবর, শহরের প্রায় প্রতিটি সিগন্যালে এখন সিসিটিভি রয়েছে। সেই সিসিটিভি নজরদারি চালান ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের কর্মীরা। কোনও রাস্তার মোড়ে যানজট থাকলে খুব সহজেই ওই কর্মীরা তা নোট করে নিতে পারবেন। তার পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে তা জানালে তাঁর নির্দেশেই কয়েক মিনিটের মধ্যে বদলে যাবে ওই সব মোড়ে অপেক্ষার সময়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy