সঞ্চিতা দত্ত।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার এক মহিলা কাউন্সিলরের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার দুপুরে, লেক টাউনের এস কে দেব রোডে। মৃতার নাম সঞ্চিতা দত্ত (৩৪)। যদিও কী ভাবে ওই কাউন্সিলরের মৃত্যু হল, তা নিয়ে হাসপাতাল বা বিধাননগর পুলিশের তরফে কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি। ঘটনাটি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি দলের নেতা-কর্মীরাও। ফলে সঞ্চিতাদেবীর মৃত্যু নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা, উঠছে নানা প্রশ্নও।
সূত্রের খবর, ২০১৫ সালে দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রতীকে জিতে প্রথম বার কাউন্সিলর হন সঞ্চিতাদেবী। তাঁর স্বামী, তৃণমূল নেতা কৃষ্ণপদ দত্ত এলাকায় পরিচিত কেষ্ট দত্ত নামেই। তাঁদের দুই সন্তান, অঙ্কুশ ও সায়ন। কেষ্টবাবুরা থাকেন এস কে দেব রোডে একটি বহুতলের তিনতলার ফ্ল্যাটে।
আরও পড়ুন: অনটনেই কি চরম সিদ্ধান্ত বৃদ্ধ দম্পতির
স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে ফ্ল্যাটে একাই ছিলেন সঞ্চিতাদেবী। সায়ন বাড়ি ফিরে মাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে। দেড়টা নাগাদ আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ওই কাউন্সিলরকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। সঞ্চিতাদেবীর বাবা আর এন গিরি জানিয়েছেন, তাঁরা দুপুরে মেয়ের অসুস্থতার খবর পান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ডানকুনির বাড়ি থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। মাঝপথে সঞ্চিতাদেবীর মৃত্যুর খবর আসে। কাউন্সিলরের বাবা বলেন, ‘‘কী হল, কিছুই বুঝতে পারছি না। সবই তো ঠিক ছিল।’’
কাউন্সিলরের মৃত্যুর খবর পেয়ে আরজিকর হাসপাতালে জড়ো হন কয়েকশো কর্মী-সমর্থক। আসেন বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু, দক্ষিণ দমদম, দমদম ও বিধাননগর পুর এলাকার অন্য কাউন্সিলর-নেতারা।
বিকেলেই ময়না-তদন্ত শেষ হয়।
যদিও তা নিয়ে হাসপাতালে ময়না-তদন্তের অপেক্ষায় থাকা অন্য মৃতদের পরিজনদের একাংশ অভিযোগ, প্রশাসনের কারও মৃত্যু হলে দ্রুত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কিন্তু সাধারণের ক্ষেত্রে ময়না-তদন্ত করে দেহ পেতেই দিন কাবার হয়ে যায়।
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত সঞ্চিতা দত্তের মা ইন্দিরা গিরি। রবিবার, আরজিকর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
কাউন্সিলরের মৃত্যু নিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মুখে কুলুপ আঁটলেও কয়েকটি প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নিজের ওয়ার্ডেই পুরসভার কাজে ব্যস্ত ছিলেন সঞ্চিতাদেবী। ১২টার কিছু আগে ফ্ল্যাটে ফেরেন তিনি। তার পরেই এই ঘটনা বলে অনুমান। প্রশ্ন উঠেছে, কাউন্সিলরের ফ্ল্যাটের দরজা কি ভিতর থেকে বন্ধ ছিল, না খোলা ছিল? সায়নই বা কী ভাবে ঘরে ঢুকল? তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। যদিও সায়ন জানিয়েছে, ঘরে ঢুকে সে মায়ের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায়। তবে বিধাননগর পুলিশের তরফে এখনও এ নিয়ে কোনও বক্তব্য মেলেনি।
এ দিন হাসপাতালে বিধায়ক সুজিতবাবু বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। খুব ভাল কাজ করছিলেন সঞ্চিতা। এ দিনও সকালে পুরসভার কাজে বেরিয়েছিলেন।’’ দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ক’দিন আগে কাউন্সিলরদের বৈঠকেই কথা হল। এমনটা ভাবতেই পারছি না।’’
কাউন্সিলরের এই অস্বাভাবিক মৃত্যু আত্মহত্যা বলে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা দমদমে। যদিও দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না। সঞ্চিতা এমন কাজ করতেই পারেন না। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy