(বাঁ দিকে) তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডে আরও এক ধাপ এগোলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। এ বার তিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার দাবি জানালেন সিবিআইয়ের কাছে। আরজি করে চিকিৎসকের মৃত্যুকে প্রথমে কেন এবং কারা ‘আত্মহত্যা’ বলে চালানোর চেষ্টা করেছিল, তা জানার জন্য এই দু’জনকে সিবিআইয়ের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে সিবিআইয়ের কাছে স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ।
আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে সুবিচার এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। প্রতিবাদ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছিল গত ১৪ অগস্ট মধ্যরাতে। তৃণমূলের অনেক নেতাই মেয়েদের সেই ‘রাত দখল’ কর্মসূচিকে সমালোচনায় বিদ্ধ করেছিলেন। সে সময়ে রাজ্যের শাসকদলের তরফে কর্মসূচিকে প্রথম সমর্থন করেছিলেন সুখেন্দু। জানিয়েছিলেন, তিনি মেয়ের বাবা, নাতনির দাদু। তাই তিনি মনে করেন, এই সময়ে প্রতিবাদে শামিল হওয়াটা জরুরি। ১৪ তারিখ দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্কে নেতাজি মূর্তির সামনে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ধর্নায় বসেছিলেন সুখেন্দু। নিজের মতো করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে সিপির গ্রেফতারি চাইলেন।
শনিবার রাতে এক্সে সুখেন্দু লিখেছেন, ‘‘সিবিআইকে স্বচ্ছ ভাবে তদন্ত করতে হবে। কে বা কারা, কেন আত্মহত্যার তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করেছিল, তা জানার জন্য আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। কেন সেমিনার হলের কাছে ঘরের দেওয়াল ভেঙে ফেলা হল? কার প্রশ্রয়ে ‘রায়’ এত ক্ষমতা পেল? কেন ঘটনার তিন দিন পর স্নিফার ডগ ব্যবহার করা হল? এমন বহু প্রশ্ন উঠে এসেছে। এর উত্তর দিতে হবে ওঁদের।’’
‘রায়’ কে? পোস্টে তা খোলসা করেননি সুখেন্দু। তবে তৃণমূলের একাংশের মতে, ‘রায়’ বলতে সুখেন্দু শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের কথা বলতে চেয়েছেন। তিনি আরজি কর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। যে পদে আগে ছিলেন শান্তনু সেন। আরজি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদকে সমর্থন করে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তিনিও। আরজি করের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যে নামগুলি জুড়ে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হলেন সুদীপ্ত। সূত্রের খবর, প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপের ‘ঘনিষ্ঠ’ তিনি। এই সুদীপ্তের ক্ষমতার বাড়বাড়ন্ত নিয়েই শনিবারের পোস্টে সুখেন্দু ইঙ্গিত করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য আর একটি মতে, আরজি কর-কাণ্ডে ধৃতের পদবিও রায়। সুখেন্দু তাঁর কথাও বলে থাকতে পারেন। কারণ হাসপাতালে তিনি যথেষ্ট ক্ষমতাশালী ছিলেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই পোস্ট নিয়ে রবিবার সুখেন্দুকে একাধিক বার ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও কোনও জবাব মেলেনি। সুখেন্দুর পোস্টের সমালোচনা করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি এক্সে ওই পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘আমিও আরজি কর-কাণ্ডের সুবিচার চাই। কিন্তু সিপিকে নিয়ে যে দাবি সুখেন্দু করেছেন, আমি তার তীব্র বিরোধিতা করছি। ঘটনার কথা জানার পর থেকে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। সিপি ব্যক্তিগত ভাবে ওঁর কাজ করেছেন। তদন্ত সঠিক পথেই চলছিল। আমাদের সিনিয়র নেতার কাছ থেকে এই ধরনের পোস্ট দুর্ভাগ্যজনক।’’
বস্তুত, তৃণমূলের মুখপত্রের সম্পাদক সুখেন্দু। কোনও দলের মুখপত্রের সম্পাদক যা বলছেন, রাজনীতিতে সাধারণত তাকেই দলের বক্তব্য হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সম্পাদক হিসাবে সুখেন্দুর নাম থাকলেও সমাজমাধ্যমে তিনি যা বলছেন, তার সঙ্গে তৃণমূলের মুখপত্রের বক্তব্য মিলছে না। কিছু দিন আগে তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় সুখেন্দুকে। সেই স্থানে আনা হয়েছে নাদিমুল হককে। তৃণমূল সূত্রের খবর, সুখেন্দুকে যে রাজ্যসভায় তৃতীয় বার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ তা চাননি। কিন্তু রাজ্যসভার এক সাংসদ সুখেন্দুর মনোনয়নের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দরবার করেছিলেন। তাই তিনি তৃতীয় বার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তবে এ বার আর মনোনয়ন পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তৃণমূলের অনেকে মনে করছেন, এই সমস্ত ক্ষোভ থেকেও সুখেন্দু আরজি কর প্রসঙ্গে দলের বিরুদ্ধে গিয়ে থাকতে পারেন।
সুখেন্দুর এই ‘বিরুদ্ধাচরণ’ নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘তৃণমূল, আরজি করে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুন ছাড়াও যে অন্য ঘটনার সঙ্গে সন্দীপ এবং সিপি জড়িত, তা তোমাদের দলের সদস্যও জানেন। এই সরকার আরও নীচে নেমে গিয়েছে। দলের সদস্যেরাও তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।’’ বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘সিপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রথমে তাঁকে সাসপেন্ড করা দরকার, তার পর সিবিআই ব্যবস্থা নেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy