Advertisement
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
R G Kar Medical College And Hospital Incident

‘পুলিশ এসে দেখা করেছে, কিন্তু ধরে নিয়ে যায়নি, ওরা দাদার লোক, ওদের ধরবে কে!’ বলছেন স্থানীয়েরা

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর চালানোর ঘটনায় ‘সন্ধান চাই’ বলে সোশাল মিডিয়ায় যাঁদের ছবি দিয়ে পুলিশ পোস্ট করেছে, তাঁদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর করতে গিয়ে উঠে এল এমনই নানা তথ্য।

তৌসিফের মুখ দাগিয়ে এই ছবিও সমাজমাধ্যমে দিয়েছে পুলিশ।

তৌসিফের মুখ দাগিয়ে এই ছবিও সমাজমাধ্যমে দিয়েছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৫৭
Share: Save:

কেউ এলাকায় পরিচিত ‘শাসক দলের কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে। কাউকে প্রতিবেশীরা চেনেন ‘পার্টির ছেলে’ বলে। অনেকেই আবার এমন আছেন, যাঁদের ব্যাপারে এলাকায় খোঁজ করতে গেলে বাড়ি নয়, দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক কার্যালয়! ভয়ে তাঁদের ব্যাপারে মুখ খুলতে চান না অনেকেই। শুধু গলা নামিয়ে কেউ কেউ বলেন, ‘‘পুলিশ এসে দেখা করে গিয়েছে। কিন্তু ধরে নিয়ে যায়নি। ওরা দাদার লোক, ওদের ধরবে কে?’’ কোন দাদা? উত্তর মেলে না।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর চালানোর ঘটনায় ‘সন্ধান চাই’ বলে সোশাল মিডিয়ায় যাঁদের ছবি দিয়ে পুলিশ পোস্ট করেছে, তাঁদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর করতে গিয়ে শুক্রবার উঠে এল এমনই নানা তথ্য। ফলে প্রশ্ন উঠছে: পুলিশের দেওয়া ছবির মধ্যে এমন অনেকেরই খোঁজ মিলছে, অথচ পুলিশ তাঁদের ধরতে পারছে না, কেন? যদিও লালবাজারের তরফে সন্ধ্যায় একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, হাসপাতালে হামলার ঘটনায় ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের নাম এবং ঠিকানাও প্রকাশ করেছে পুলিশ। এঁদের মধ্যে ন’জনকে এ দিন আদালতে তোলা হলে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। যদিও গ্রেফতার হওয়া লোকজনের প্রতিবেশীদেরই দাবি, এই ধৃতদের বেশির ভাগই প্রভাবশালী নন এবং আসল মাথাদের কাউকেই এখনও ধরা হয়নি।

কিন্তু কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল এ দিন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘ওই দিন এই ভাবে হাসপাতালে হামলা হবে, ভাবা যায়নি। তথ্য জোগাড় করার ক্ষেত্রে যদি গাফিলতি ছিল বলেন, তা হলে ছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী রেখেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের জেরা করে বোঝার চেষ্টা হচ্ছে, পিছনে কাদের মদত ছিল।’’ এর পর তাঁর দাবি, ‘‘দোষীদের দ্রুত ধরার জন্যই সমাজমাধ্যমে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। তাতে কাজও হচ্ছে।’’

পুলিশের প্রকাশ করা ফুটেজ ধরেই এ দিন যাওয়া হয় বেলগাছিয়া মেট্রো সংলগ্ন বস্তিতে। সেখানকার বাসিন্দা মহম্মদ জব্বরের ছবি ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। তাতে ভাঙচুর করতে যাওয়া জনতার মধ্যে দেখা যাচ্ছে জব্বরকে। খোঁজ পাওয়া গেল, বেলগাছিয়া বস্তির জরিনা ময়দান সংলগ্ন বাড়ির তিন তলায় থাকেন জব্বর। প্রতিবেশীদের দাবি, তাঁর দাদা এলাকায় ‘পার্টির নেতা’ হিসাবে পরিচিত। স্থানীয় মিছিলে মাঝে মধ্যেই দেখা যায় দুই ভাইকে। কিন্তু বাড়িতে পাওয়া গেল না জব্বরকে। প্রতিবেশী এক জন জানালেন, আরজি করে তাণ্ডবের পরের দিন সকালে তাঁকে দেখা গেলেও বিকেলের পর থেকে ‘খোঁজ নেই’। জব্বরের মা বলেন, ‘‘ছেলের ব্যাপারে কিছু জানি না। পুলিশ এসেছিল। কথা বলে গিয়েছে। ধরার হলে তো ধরতেই পারত।’’

জব্বরের মতোই ঘটনার পরের দিন থেকে উধাও মহম্মদ সরফরাজ নামে আর এক জন। বেলগাছিয়া বস্তির ছোটা মসজিদ সংলগ্ন গলির বাসিন্দা ওই যুবকের ছবিও চিহ্নিত করে দিয়েছে পুলিশ। স্থানীয়েরা জানালেন, বিশেষ কোনও কাজ করেন না সরফরাজ। তবে কাশীপুরের এক কাউন্সিলরের দলবলের সঙ্গে তাঁকে নিয়মিত দেখা যায় বলে দাবি। গন্ডগোল-ঝামেলায় সরফরাজের ‘নাম-যশ’ আছে বলেও দাবি। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এক কথায় গুণধর। ঝামেলাবাজ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। কিন্তু কেন জানি না, পুলিশ ধরেনি।’’

পুলিশের চিহ্নিত করা অথচ অধরা আমির নামের আর এক যুবকেরও খোঁজ মিলেছে। কিন্তু তাঁকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। বেলগাছিয়া বস্তির বাসিন্দা ওই যুবকের খোঁজ ফোন বন্ধ। প্রতিবেশীরা দাবি করেছেন, পাড়ার রাজনীতির ‘দাদা’দের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগযোগ রয়েছে আমিরের। একই প্রতিক্রিয়া মিলল তৌসিফ নামের আর এক যুবকের ক্ষেত্রেও। বেলগাছিয়া দত্তবাগান এলাকার বাসিন্দা এই যুবক একটি পোশাকের বিপণিতে কাজ করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকেই তাঁর খোঁজ নেই। ফোনে করা হলে তৌসিফ বলেন, ‘‘কাজের সূত্রে এক জায়গায় এসেছি। আমাদের দাদারা বলায় আমরা সে দিন গিয়েছিলাম। পুলিশ আমার সঙ্গে দেখা করে গিয়েছে। ধরার হলে তো ধরেই নিত।’’ কোন দাদারা? উত্তর মেলেনি। তবে ধৃতদের মধ্যে দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব সিঁথির বাসিন্দা সৌমিক দাস প্রকাশ্যেই দোষ কবুল করেন। পেশায় ব্যায়ামের প্রশিক্ষক সৌমিকের মন্তব্য, ‘‘আবেগের বসে ঘটিয়ে ফেলি। ভুল হয়েছে।’’ সৌমিকও প্রথমে গ্রেফতার হননি। সংবাদমাধ্যমে ভুল স্বীকার করার কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁকে ধরে পুলিশ। প্রথমেই কেন ধরা হয়নি? সংবাদমাধ্যম যাঁকে সহজেই খুঁজে পায়, পুলিশ পায় না? উত্তর মেলে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Medical College and Hospital Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE