সেই টোটো চালক।—নিজস্ব চিত্র।
দু’জনেই পেশায় চালক।
এক জন জয় অধিকারী। চুঁচুড়া স্টেশন-লঞ্চঘাট রুটে টোটো চালান।
অন্য জন রঞ্জিত চক্রবর্তী। দমদম রোডের একটি ভ্রমণ সংস্থার গাড়ি চালান।
সোমবার ওই দুই যুবকের তৎপরতায় চুঁচুড়া থেকে উদ্ধার হল কলকাতার দমদম রোডের তিন স্কুলছাত্রী। সকালে রঞ্জিতের গাড়িতেই ওই তিন ছাত্রী স্থানীয় তিন যুবক এবং এক মহিলার সঙ্গে চুঁচুড়া স্টেশন এলাকায় চলে যায়। গাড়ি পাল্টে জয়ের টোটোতে চুঁচুড়া লঞ্চঘাটে যাচ্ছিল তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। ধরা পড়ে গেল এক যুবক। পালানো হল না তিন ছাত্রীর।
হুগলি জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, দু’পক্ষই পরস্পরের পরিচিত। যে যুবককে আটক করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ জানাতে চাননি ছাত্রীদের পরিবারের লোকেরা। বাড়িতে কোনও গোলমালের জেরেই এক ছাত্রী তার বন্ধুদের নিয়ে পালানোর মতলব করেছিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। শিশু কল্যাণ দফতরের মাধ্যমে ছাত্রীদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রীদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দমদম সেভেন ট্যাঙ্কসের কাছে একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ে দুই ছাত্রী। অন্য জন দশম শ্রেণিতে। এ দিন ছুটির পরে বেলা ১১টা নাগাদ তারা হেঁটেই স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। এলাকার পরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। ওই যুবকের সঙ্গে আরও দুই দু’জন এবং এক মহিলা ছিল। এর পরে সকলে মিলে এলাকারই একটি ভ্রমণ সংস্থায় গিয়ে গাড়ি ভাড়া নেয়। সেই গাড়িটিরই চালক ছিলেন রঞ্জিত। বেলা ১টা নাগাদ গাড়িটি চুঁচুড়া স্টেশনে পৌঁছয়।
চুঁচুড়া স্টেশনের কাছে যুবকেরা ছাত্রীদের নামিয়ে নিলে ভাড়া চান রঞ্জিত। কিন্তু যুবকেরা তা দিতে অস্বীকার করে। রঞ্জিতকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। রঞ্জিত কী করবেন বুঝতে না পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে থাকেন। তার ফাঁকেই এক যুবক পালায়। জয়ের টোটোতে ছাত্রীদের তুলে ওই যুবকেরা যখন লঞ্চঘাটের দিকে পাড়ি দেয়, তখন টোটোর পিছনে জয়ের মোবাইল নম্বর দেখতে পান রঞ্জিত। তিনি তা টুকে নিয়ে নিজের ভ্রমণ সংস্থায় ঘটনার কথা জানান।
এ দিকে, বেলা বাড়লেও মেয়েরা না ফেরায় তিন ছাত্রীর বাড়ির লোকজনই খোঁজ শুরু করেন। এক ছাত্রীর পরিবারের লোকজন তাঁদের এক পরিচিতের কাছ থেকে জানতে পারেন, এলাকার ওই ভ্রমণ সংস্থার গাড়িতে তিন জনের চলে যাওয়ার কথা। তিন ছাত্রীর বাড়ির লোকই এর পরে ওই ভ্রমণ সংস্থায় যোগাযোগ করেন। তার মধ্যেই অবশ্য রঞ্জিতের কাছ থেকে ভ্রমণ সংস্থার কর্তারা চুঁচুড়ার ঘটনার কথা জেনে যান। তাঁরা জয়ের ফোন নম্বর দিয়ে দেন ওই ছাত্রীদের বাড়ির লোকজনকে।
টোটো চালাতে চালাতেই এক ছাত্রীর বাবার ফোন পান জয়। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, ফোনে তাঁদের কথোপকথন শুনে পাশে বসা এক যুবক বুঝতে পারে। সে লাফিয়ে পালায়। গাড়ির গতি কিছুটা কম থাকায় এর পরে ওই মহিলাও পালায়।
এক যুবক অবশ্য পালানোর সুযোগ পায়নি। উল্টো দিক থেকে একটি পুলিশের গাড়ি আসতে দেখে জয় রাস্তার মধ্যেই টোটো দাঁড় করিয়ে দেন। পুলিশকে ডেকে ফোনটি ধরিয়ে দেন। পুলিশ ফোনে ঘটনাটি শোনে। তিন ছাত্রীকে উদ্ধার করে এবং যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে আসেন ছাত্রীদের পরিবারের লোকেরা।
দুই চালকের তৎপরতায় মেয়েদের ফিরে পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন তাদের পরিবারের লোকেরা। এক ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘‘দুই চালকের জন্যই মেয়েদের ফিরে পেলাম। না হলে যে কী হতো!’’
দুই চালকই অবশ্য তাঁদের কৃতিত্বকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। চুঁচুড়ার ধরমপুরের বাসিন্দা জয় বলেন, ‘‘ছাত্রীর বাবার ফোন না পেলে বুঝতেই পারতাম না ওরা পালাচ্ছে।’’ রঞ্জিতের বাড়ি পাইকপাড়ায়। তিনি বলেন, ‘‘যুবকদের এক জনকে চিনতাম। টোটোর পিছনে চালকের নম্বরটা না থাকলে বড় বিপত্তি হতো। নম্বরটা সংস্থায় জানিয়েই আমি ফিরে আসি।’’
এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘স্কুলছাত্রীরা যে পালাচ্ছিল, তা সম্ভবত ওই চালকেরা বুঝতে পারেননি। তাঁরা ভেবেছিলেন অপহরণ করা হচ্ছে। তবু তাঁদের তৎপরতার প্রশংসা করতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy