আগে যেখানে গাড়ি বা মোটরবাইক নিয়ে রেষারেষি করার জরিমানা ছিল ৫০০ টাকা, তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০০০ টাকা। ফাইল ছবি।
ট্র্যাফিক বিধিভঙ্গে জরিমানার অঙ্ক বৃদ্ধির প্রথম বছরেই কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের আয় বাড়ল প্রায় ১৪৪ কোটি টাকা। যা নিয়ে রীতিমতো আলোচনা চলছে বাহিনীর অন্দরে। গত বছরের শেষ দিন পর্যন্ত পাওয়া এই হিসাব আগামী মার্চের অর্থবর্ষের শেষে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়েই এখন চলছে আলোচনা। যদিও এর মধ্যেও প্রশ্ন উঠছে, জরিমানা প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধির পরেও গাড়ি বা মোটরবাইক চালকদের হুঁশ ফিরছে কই? প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন বেপরোয়া চালকেরা। এমনকি, গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া পথ নিরাপত্তা সপ্তাহেও যার বিরাম নেই!
এর কারণ হিসাবে জরিমানার টাকা মেটানোর ক্ষেত্রে গড়িমসিকেই দায়ী করছেন পুলিশের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ই-চালান পদ্ধতির মাধ্যমে যে হেতু বেশির ভাগ জরিমানা নেওয়া হচ্ছে এবং পুলিশের কাছে লাইসেন্স বা গাড়ির কাগজপত্র জমা রাখতে হচ্ছে না, তাই অনেকেই জরিমানার মেসেজ পেয়েও টাকা জমা দিতে দেরি করছেন। তাই পরে টাকা মেটানোর সুযোগ পাওয়ায় অনেকেরই হুঁশ ফিরছে না। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘মোবাইলে জরিমানার টাকা মেটানোর সুযোগ করে দেওয়ায় সহজে বকেয়া মেটানো যাচ্ছে। কিন্তু অনেকেই এই সুযোগে টাকা দিতে গড়িমসি করছেন। নিয়ম অনুযায়ী, পুলিশ ১৫ দিন পরে জরিমানার বিষয়টি আদালতে পাঠায়। অনেকের তাতেও হুঁশ হচ্ছে না। পরে মিটিয়ে দেওয়া যাবে ধরে নিয়ে একের পর এক কেস খাওয়া গাড়ি নিয়ে ছুটছেন আর দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০২১ সালে প্রায় ২৯ লক্ষ ৫০ হাজারের মতো ট্র্যাফিক বিধিভঙ্গের কেস করা হয়েছিল। ২০২২ সালে যা কমে দাঁড়ায় প্রায় ২৫ লক্ষ ১৮ হাজারে। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকেই পরিবর্তিত জরিমানার কাঠামো চালু হয়। এক ধাক্কায় বেশ কয়েক গুণ বাড়ে জরিমানার অঙ্ক। আগে যেখানে গাড়ি বা মোটরবাইক নিয়ে রেষারেষি করার জরিমানা ছিল ৫০০ টাকা, তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০০০ টাকা। একাধিক বার একই অপরাধ ঘটালে জরিমানা হতে পারে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর জন্য আগে যেখানে ৫০০ টাকা জরিমানা করার সুযোগ ছিল, এখন তা এক ধাক্কায় ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালালে ১০০ টাকা জরিমানার বদলে এখন গুনতে হচ্ছে ১০০০ টাকা।
ফলে, সব মিলিয়ে ট্র্যাফিক পুলিশের কেসের সংখ্যা কম হলেও জরিমানা বাবদ টাকা আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালে যেখানে ট্র্যাফিক বিধিভঙ্গে জরিমানার পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৪ কোটি টাকা, ২০২২ সালে সেখানে প্রায় ১৯৮ কোটি টাকার জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। অর্থাৎ, জরিমানা বেড়েছে প্রায় ১৪৪ কোটি টাকা।
কিন্তু, যে হেতু সকলেই জরিমানার টাকা মেটাননি, ফলে সেই টাকা কোষাগারে এখনও এসে পৌঁছয়নি। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের শেষ দিন পর্যন্ত মাত্র ২৫ শতাংশ জরিমানার টাকা উঠেছে। অর্থাৎ, বাকি ৭৫ শতাংশই এখনও কোষাগারে আসেনি।
কী ভাবছে পুলিশ? লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তা বললেন, ‘‘প্রতি মাসে লোক আদালত করার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। সেখানে কিছুটা ছাড়ে বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকে গাড়ি ও মোটরবাইক চালকদের কাছে। আদালতের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার দিকেও জোর দেওয়া হবে।’’ আর এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘এর পরে প্রয়োজনে অতীতের মতো ক্যাম্প করে ওয়ান টাইম ট্র্যাফিক সেটলমেন্ট স্কিম চালু করার ভাবনাচিন্তা করা হবে। তবে এখনও সেই অবস্থা আসেনি। মার্চের শেষ দিন পর্যন্ত কত টাকা ঘরে এল, তা দেখে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy