Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Tuberculosis

যক্ষ্মায় আক্রান্ত তরুণী, অধরা আরও কত

মাস পাঁচেক আগে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন টাউনশিপের বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে হয়। সাড়ে চার মাস পর থেকে জ্বর এবং প্রবল কাশি শুরু হয় তরুণীর।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:২৫
Share: Save:

কর্মসূচির নাম বদলেছে। খাতায়কলমে পরিকাঠামোয় কোনও ঘাটতি নেই। তবুও গলদ কোথায়, তা দেখিয়ে দিল যক্ষ্মায় আক্রান্ত এক তরুণীর অভিজ্ঞতা।

মাস পাঁচেক আগে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন টাউনশিপের বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে হয়। সাড়ে চার মাস পর থেকে জ্বর এবং প্রবল কাশি শুরু হয় তরুণীর। বাগুইআটির একটি বেসরকারি হাসপাতালে দু’দিন ভর্তি থেকেও তাঁর রোগ ধরা পড়ে না। তরুণীর অবস্থা অতি সঙ্কটজনক জানিয়ে দেন ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর পরেই সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তর করেন পরিজনেরা।

সল্টলেকের হাসপাতালের চিকিৎসক বাসববিজয় সরকার জানান, কাশির সঙ্গে কফ, শ্বাসকষ্ট এবং বুকে ব্যথার লক্ষণ নিয়ে তরুণী সেখানে যান। ভর্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর ফুসফুসের এক দিক সাদা হয়ে যায়। রক্তচাপ দ্রুত নামতে শুরু করে। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘দশ দিনের জ্বর-কাশি নিয়ে আসা এক জন তরুণীর শরীরে যক্ষ্মার জীবাণু থাকা স্বাভাবিক নয়। কিন্তু এক্স-রে প্লেট দেখেই মনে হয়েছিল, কফে যক্ষ্মার জীবাণু রয়েছে। ফুসফুসের অবস্থা দেখে সন্দেহ করেছিলাম, খারাপ ব্যাক্টিরিয়া থাকতে পারে।’’ এর পরেই তরুণীর কফের নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসক দেবরাজ দে পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘তরুণীর যক্ষ্মার জীবাণু মিললেও ওষুধে কাজ হচ্ছিল। কিন্তু শরীরে ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া নামে এক ধরনের খারাপ ব্যাক্টিরিয়া পাওয়া যায়। সেপ্টিক শকের লক্ষণও ছিল তাঁর।’’ দিন দশেক চিকিৎসাধীন থাকার পরে সুস্থ তরুণী। আর্থিক অসহায়তার কথা জানালে তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ রাজ্যে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, ৪৮ লক্ষ জনসংখ্যার জন্য যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে শহর কলকাতাকে দশটি স্বাস্থ্য-জেলায় ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি স্বাস্থ্য-জেলার অধীনে দু’টি টিউবারকিউলোসিস ইউনিট রয়েছে। বছরে দু’বার যক্ষ্মাপ্রবণ এলাকার মানচিত্র তৈরি করে আক্রান্তদের খোঁজ করার কথা দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের। তা সত্ত্বেও ওই তরুণীর মতো আক্রান্তদের খোঁজ না পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক।

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির নাম ‘রিভাইসড ন্যাশনাল টিউবারকিউলোসিস প্রোগ্রাম’ থেকে বদলে হয়েছে ‘টিউবারকিউলোসিস এলিমিনেশন প্রোগ্রাম’। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় ১৯৯ জন থেকে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা নামিয়ে ৪৪ জনে করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে। কিন্তু আক্রান্তেরা কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকলে কী ভাবে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো সম্ভব তা নিয়েই চিন্তিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে।

রাজ্যের প্রাক্তন ‘টিউবারকিউলোসিস অফিসার’ ব্রজকিশোর সাহা জানান, যক্ষ্মা যেহেতু বায়ুবাহিত রোগ তাই সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘এক জন আক্রান্ত ১০-১৫ জনের শরীরে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়াতে পারেন। তাই দু’সপ্তাহ টানা কাশি হলেই যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা করানো জরুরি।’’

স্বাস্থ্য দফতরের ‘টিউবারকিউলোসিস অফিসার’ বরুণ সাঁতরা বলেন, ‘‘সরকারি যে পরিকাঠামো রয়েছে তাতে যক্ষ্মা আক্রান্তেরা দলছুট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু যক্ষ্মা নোটিফায়েবল রোগ হওয়া সত্ত্বেও বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যুক্ত চিকিৎসকেরা আক্রান্তদের নাম, পরিচয় জানান না।’’ যদিও বেসরকারি হাসপাতালের কোর্টে বল ঠেলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলেই মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy