Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Migrated Birds

পরিযায়ী পাখিরা এলেও প্রশ্নে ঝিলের রক্ষণাবেক্ষণ

সেপ্টেম্বরে জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ২০২১-এর মার্চ মাসের মধ্যে ঝিল থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করে পাখিদের বসার জন্য পানা দিয়েই অস্থায়ী দ্বীপ বানাতে হবে।

অপরিষ্কার: সাঁতরাগাছি ঝিলের পাশেই পড়ে রয়েছে আবর্জনা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

অপরিষ্কার: সাঁতরাগাছি ঝিলের পাশেই পড়ে রয়েছে আবর্জনা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২০ ০১:১৮
Share: Save:

শীত পড়তেই পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে সাঁতরাগাছি ঝিলে। বন দফতরের হিসেব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত তিন থেকে চার হাজার পরিযায়ী পাখি সেখানে এসে পৌঁছেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে আরও পাখি আসবে বলে আশা বন দফতরের কর্তাদের। তবে এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে ঝিলের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে।

সেপ্টেম্বরে জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ২০২১-এর মার্চ মাসের মধ্যে ঝিল থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করে পাখিদের বসার জন্য পানা দিয়েই অস্থায়ী দ্বীপ বানাতে হবে। নিকাশির জল যাতে ঝিলে পড়ে দূষণ না ঘটায়, তার জন্য চারপাশ দিয়ে একটি নিকাশি নালা তৈরি করারও নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু অভিযোগ, কচুরিপানা পরিষ্কার করে এবং দ্বীপ বানিয়েই দায় সেরেছে হাওড়া

পুরসভা। অন্য দিকে, দক্ষিণ-পূর্ব রেল আর হাওড়া পুরসভার মধ্যে খরচের ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা হওয়ায় নিকাশি নালা তৈরির কাজে হাতই পড়েনি বলে অভিযোগ।

সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনের পাশেই সাঁতরাগাছি ঝিলে প্রতি বছর নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান এবং উত্তর ভারত-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে পরিযায়ী পাখিরা। এই ঝিলকে কেন্দ্র করেই তাই তৈরি হয়েছে সাঁতরাগাছি পাখিরালয়। বন দফতর সূত্রের খবর, নভেম্বর মাস থেকেই ঝিলে আসতে শুরু করে লেসার হুইসলিং ডাক, নর্দার্ন শভেলার, নর্দার্ন পিনটেল, গারগেনি, কটন পিগমি গুজ়, নব বিলড হাঁসের মতো পাখি। কিন্তু এলাকায় বহুতলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং ঝিলের দূষিত, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জেরে বেশ কয়েক বছর ধরেই সেখানে পাখির সংখ্যা কমছে।

ঝিলটির জমি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হলেও সেটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বন দফতর। ঝিলটির কচুরিপানা পরিষ্কার ও নিকাশির দেখভাল করে হাওড়া পুরসভা, কারণ এলাকার সমস্ত নিকাশি নালার সঙ্গে সেটির যোগ রয়েছে। পরিযায়ী পাখিদের এই আশ্রয়টিকে বাঁচাতে গত বছর উদ্যোগী হয় রাজ্য পরিবেশ দফতর। ওই দফতরের বায়োডাইভার্সিটি বোর্ড সাত সদস্যের একটি কমিটি করে ঝিলের উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করে।

ইতিমধ্যেই পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় পরিবেশ আদালত রায় দেয় যে, আগামী মার্চের মধ্যে কচুরিপানা পরিষ্কার ও ঝিলের চারপাশে নর্দমা তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। নর্দমা তৈরির ৭৮ ভাগ খরচ বহন করবে পুরসভা। বাকিটা দেবে রেল। কিন্তু অভিযোগ, পুরসভা ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টালবাহানায় নর্দমার কাজ শুরু হয়নি নভেম্বরের শেষেও। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘দক্ষিণ-পূর্ব রেল আদালতের নির্দেশ মেনে খরচ দিতে প্রস্তুত। কিন্তু পুরসভার দায়ভার যে হেতু বেশি, তাই তাদেরই আগে কাজ শুরু করতে হবে। কিন্তু তা হয়নি।’’

এ দিকে হাওড়া পুরসভায় গত দু’বছর পুরবোর্ড নেই। নভেম্বর মাস থেকে পুর কমিশনার পদেও নেই কেউ। ডেপুটি পুর কমিশনার (২)-কেও বদলি করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে পুরসভা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘সাঁতরাগাছি ঝিলের বিষয়টি পুরোটাই দেখছিলেন পুর কমিশনার নিজে। তাই সেটি এখন ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। এ ছাড়া, পুরসভার কোষাগারের অবস্থাও শোচনীয়।’’

কিন্তু এ সব সত্ত্বেও ঝিলে নভেম্বরের শুরু থেকেই পাখি আসতে থাকায় খুশি জেলা বন দফতর। জেলা বন আধিকারিক রাজু সরকার বলেন, ‘‘এ বছর ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্রজাতির তিন-চার হাজার পাখি এসেছে। শীত জাঁকিয়ে পড়লে আরও পাখি আসবে।’’ সাঁতরাগাছি প্রকৃতি সংসদের পক্ষে সৌম্য রায় বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় এ রাজ্যে এ বার বিভিন্ন জায়গায় পরিযায়ী পাখি বেশি আসছে। সাঁতরাগাছিতেও গত বারের তুলনায় বেশি পাখি এসেছে বলে খবর পাচ্ছি। আগামী দিনে পাখির সংখ্যা বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Migrated Birds Lake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy