সংস্কার চলছে মহাকরণের। —ফাইল চিত্র।
ফায়ারপ্লেসে জ্বলত আগুন। ম্যান্টলপিসের উপর থেকে ছিটকে আসত আলো। আর সঙ্গীতের তালে তালে বর্মা টিকের মসৃণ, পিচ্ছিল মেঝেতে পা ফেলতেন সাহেব-মেমসাহেবরা। এটাই ছিল তাঁদের নাচঘর। বলরুম।
মহাকরণের সামনের বাড়িটির তিনতলার উপরে, নিচু ছাদের এই নাচঘরের হদিস সম্প্রতি পেয়েছেন পূর্ত দফতরের কর্তারা। তালাবন্ধ এই ঘরটির হদিস কিন্তু পাওয়া গিয়েছিল বছর পনেরো আগেই। এখানে স্তূপীকৃত করে রাখা থাকত সরকারি পুরনো মামলার কাগজ ও ফাইলপত্র। তবে সে সব কাগজে হাত পড়ত না। ধুলোয় ছেয়ে ছিল মেঝের পালিশ। বিষয়টি তৎকালীন আইন-বিচার দফতরের গোচরে আসতেই ঘরটিকে পরিষ্কার করে বন্ধ করা হয়। তাদের কী পরিকল্পনা ছিল, জানা যায়নি। তবে তাঁরা বিষয়টি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের গোচরে আনেন।
ইতিমধ্যে গঙ্গায় জল গড়িয়েছে অনেক। রাজ্যে ক্ষমতা বদল হয়ে মহাকরণের দখল নেয় তৃণমূল। ২০১৩ সালে তৃণমূল সরকার মহাকরণের আমূল সংস্কারের জন্য সচিবালয় সরিয়ে নিয়ে যায় গঙ্গার ও পারে, নবান্নে। শুরু হয় সংস্কারের কাজও।
গত কয়েক বছর ধরেই চলছে সংস্কারের কাজ। সেই কাজ করতে গিয়ে আরও এক বার পূর্ত দফতরের কর্তারা খুঁজে পান নাচঘরটি। এক কর্তার কথায়, বন্ধ অবস্থায় পড়েছিল দু’হাজার বর্গফুটের এই ঘর। এখন ওই নাচঘরকে ‘কনফারেন্স রুম’-এ পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে পূর্ত দফতর। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য আলাদা করে লিফট বসানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
১৭৭৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্রিটিশ রাইটার বা কেরানিদের কাজের জায়গা হিসেবেই টমাস লায়ন (যাঁর নামে লায়ন্স রেঞ্জ) তখনকার রাইটার্স বিল্ডিং তৈরি করেন। রাইটারেরা এখানে কাজ করতেন। উপরের তলায় থাকতেন বিলেত থেকে আসা সাহেবরা। পরবর্তী কালে তৈরি করা হয় আরও চারটি ব্লক। সেখানে শুরু হয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। এই কলেজের মূল লক্ষ্য ছিল সাহেব রাইটারদের বাংলা, হিন্দি, ফারসি প্রভৃতি দেশীয় ভাষা শেখানো। একই সঙ্গে শেখানো হত কিছু কিছু দেশীয় আদব-কায়দাও। কলেজের ৪৮ জন ছাত্রের হস্টেলও ছিল এই রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। কোম্পানির কিছু কিছু রাজপুরুষও সপরিবার থাকতেন এখানে। সরকারি কর্তাদের ধারণা, তাঁদের বিনোদনের জন্যই তৈরি করা হয়েছিল এই নাচঘর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy