নিরুত্তাপ: বাইরে বেরোলেও কঠোর ভাবে মানতে হবে দূরত্ব-বিধি ও অন্যান্য নিয়ম, সরকারি নির্দেশ তেমনই। তবে শহরে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্রই।
কন্টেনমেন্ট জ়োন ছাড়া বাকি সর্বত্রই খাতায়কলমে কাল, সোমবার থেকে লকডাউন উঠছে। কিন্তু তার আগে থেকেই বেপরোয়া শহর। শনিবারও শহরে ঘুরে দেখা গেল, ছোঁয়াচ বাঁচানোর বালাই উড়িয়ে কারণে-অকারণে রাস্তায় নেমে পড়েছেন বহু মানুষ। অনেকেরই আবার মাস্ক নেই। কন্টেনমেন্ট জ়োনের মধ্যেই চলছে দেদার আড্ডা, তাস খেলা। বাজারের ভিড় দেখে এ দিনও বোঝার উপায় নেই যে, করোনা আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে প্রতিদিনই!
এমন ঘটনাই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, ছাড়ের প্রথম সপ্তাহেই যদি এই চিত্র হয়, সোমবার থেকে ছাড়ের সাগরে ভাসা শুরু করলে কী হবে? উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর স্ট্রিটের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্বা স্নেহবালা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বললেন, ‘‘গত সোমবার থেকেই লকডাউন উঠে গিয়েছে ধরে নিয়েছেন মানুষ। মৃত্যুভয়ও যে বেপরোয়া স্বভাব বদলাতে পারে না, শহর ঘুরে দেখলেই তা বোঝা যায়।’’
তিনি জানান, তাঁর পাশের বাড়ির বাসিন্দা এক যুবকের করোনা ধরা পড়ে গত রবিবার। রোগী প্রথম দিন হাসপাতালে ভর্তি হতে চাননি। পুলিশ ওই যুবকের বাড়ি স্রেফ গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেয়। বৃদ্ধা বলেন, ‘‘যুবকের পরিবারের লোকজন তো বটেই, আশপাশের ঘরের বাসিন্দারাও গার্ডরেল সরিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে গোটা পাড়া ঘুরে বেড়িয়েছেন। বলতে গেলেই পুলিশ বলেছে, এখন এটাই নিয়ম। গোটা পাড়া নয়, স্রেফ যে বাড়িতে করোনা হয়েছে সেটাই কন্টেনমেন্ট জ়োন! গত বুধবারই ওই যুবকের পাশের বাড়ির তিন জনের করোনা ধরা পড়েছে। কোনও ভাবে ছোঁয়াচ লেগেছিল? উত্তর কে দেবে?’’
আরও পড়ুন: নকশার অনুমোদন পেলে তবেই রেজিস্ট্রি, প্রস্তাব
একই প্রশ্ন বিধান সরণির শচীন মিত্র লেন, গোয়াবাগান, সিমলা রোড, ক্যানাল ওয়েস্ট রোড, কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিট, বেনিয়াপুকুর লেন, ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোড, ব্রাইট স্ট্রিট, লেক অ্যাভিনিউ, চেতলাহাট রোড, বেলতলা রোডের মতো করোনা আক্রান্তের খবর আসা বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দাদের। তাঁদের কয়েক জনের আবার অভিজ্ঞতা, যে গার্ডরেলে বাড়ি ঘেরা হয়েছে তাতেই হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পাড়ার লোকেদের তাস খেলা চলছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মানুষের ভয় কাটাতে গোটা পাড়াকে কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করার বদলে করোনা আক্রান্তের বাড়ি এবং আশপাশের দু’টি বাড়িকে কন্টেনমেন্ট জ়োন করা হবে। আবাসনের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাটে করোনা আক্রান্তের হদিস মিললে সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটটি হবে কন্টেনমেন্ট জ়োন। একাধিক ফ্ল্যাটে আক্রান্ত মিললে গোটা বাড়িটিকে কন্টেনমেন্ট জ়োন করা হবে। একাধিক টাওয়ারে আক্রান্ত হলে আবাসনটি হবে কন্টেনমেন্ট জ়োন।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, দক্ষিণ কলকাতার হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটেই সম্প্রতি ১৮ জন করোনা আক্রান্তের হদিস মিলেছে। প্রথমে এক-একটি বাড়ি ধরে কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা হলেও এখন আর সেই উপায় নেই। পাশের সুহাসিনী গাঙ্গুলি সরণিরও একই অবস্থা। এ দিন দেখা গেল, স্রেফ নামেই কন্টেনমেন্ট জ়োন। ঘিরে দেওয়া বাড়ির পাশ দিয়েই যানবাহন, মানুষের অবাধ যাতায়াত। বাড়ির এক বাসিন্দা জানলা দিয়ে বললেন, ‘‘১২ দিন হয়ে গেল, জানলা দিয়েই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি।’’ সেই বন্ধুদের দূরত্ব-বিধি মানার বালাই নেই? উত্তর নেই। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটেও সমস্ত দোকান খোলা। বিকেল হলে বসছে ফুচকাও।
বাড়ি ধরে কন্টেনমেন্ট জ়োন করা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের কেউ মুখ খুলতে চাননি। পুলিশেরও মুখ বন্ধ। লালবাজারের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা শুধু বললেন, ‘‘গোটা পাড়া ধরে হিসেব করলে পুরো শহরই কন্টেনমেন্ট জ়োন করতে হয়। কোনও আইনেই বেপরোয়া ভাব রোখা যাবে না। চাই সচেতনতা।’’
রোগের সামনেও বেপরোয়া যে শহর, সে কি আদৌ সচেতন হবে? উত্তর কিছুটা স্পষ্ট হবে কাল, সোমবারই।
আরও পড়ুন: লকডাউনে ‘সোর্স’ বাঁচাতে সজাগ নজর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy