Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Protest

দহনবেলায় চাকরিপ্রার্থীদের মিছিল ঘিরে রাজপথে ধুন্ধুমার

শুক্রবার, প্রায় ৪০ ডিগ্রির তপ্ত দুপুরে কলেজ স্কোয়ার থেকে মিছিলটা যাচ্ছিল ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ের উদ্দেশে। প্রায় সকলের শরীর ঘামে ভিজে জবজবে।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:১০
Share: Save:

কারও হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘ভোট আসে ভোট যায়, প্রতিশ্রুতি রয়েই যায়।’ কেউ তুলে ধরেছেন ব্যানার। তাতে লেখা, ‘আজ ভেঙে পড়েছে বাড়ি, কাল ভেঙে পড়বে শিক্ষা ব্যবস্থা, সে তো সময়ের অপেক্ষা।’ মিছিলে হাঁটা, সাদা শাড়ি পরা এক মহিলা চোখে কালো কাপড় বেঁধেছিলেন। তাঁর শাড়িতে সেফটিপিন দিয়ে আটকানো কাগজে লেখা ‘আন্ধা কানুন।’ ওই মহিলার হাতে দাঁড়িপাল্লায় এক দিকে কিছু ওজন রেখে লেখা রয়েছে ‘টাকা’, অন্য পাল্লায় কিছু ওজন চাপিয়ে লেখা রয়েছে ‘শিক্ষা’।

শুক্রবার, প্রায় ৪০ ডিগ্রির তপ্ত দুপুরে কলেজ স্কোয়ার থেকে মিছিলটা যাচ্ছিল ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ের উদ্দেশে। প্রায় সকলের শরীর ঘামে ভিজে জবজবে। তবু তাঁদের স্লোগানের জোর এতটুকু কমেনি। আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন, আর কত দিন অপেক্ষা? এক চাকরিপ্রার্থী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘‘চাকরিপ্রার্থীদের গর্জন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতিকারীদের বিসর্জন।’’

এ দিনের মিছিলে ছিলেন ২০১৭ সালের রাজ্য গ্রুপ-ডি, ২০০৯ সালের দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রাইমারি মঞ্চ, এনএসকিউএফ-এর শিক্ষক পরিবার, যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ (নবম থেকে দ্বাদশ), যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ (শারীরশিক্ষা-কর্মশিক্ষা), মাদ্রাসা পাশ প্রার্থী মঞ্চ, ২০১৪ টেট পাশ একতা মঞ্চের প্রতিনিধিরা। তাঁদের সঙ্গে মিছিলে হাঁটেন বকেয়া ডিএ-র দাবিতে শহিদ মিনারের নীচে অবস্থান চালানো সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সদস্যেরাও।

মিছিলে অংশ নেওয়া কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী নিজেদের পোশাকে লিখে রেখেছিলেন, ‘আমরা পড়াশোনা শিখেছি। চপ, মুড়ি বিক্রি করতে চাই না। চাকরি চাই।’ এক তরুণীকে দেখা গেল, হাতে ধরা জবা গাছের টব। সেই গাছের পাতায় লেখা শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে ধৃতদের নাম। ওই গাছে জল দিচ্ছিলেন সাদা শাড়ি পরা আর এক তরুণী। তাঁদের কথায়, দুর্নীতিগ্রস্তদের এ ভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাই চাকরিপ্রার্থীরা আজ স্কুলে না গিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এর সুরাহা কবে হবে?

মিছিল ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে পৌঁছনোর পরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এর পরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। চাকরিপ্রার্থীরা প্রতীকী মৃতদেহে আগুন ধরাতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। শুরু হয় উভয়পক্ষে ধস্তাধস্তি। কয়েক জন চাকরিপ্রার্থীকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রাজ্য গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীদের অন্যতম নেতা আশিস খামরুই। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, আশিসকে চ্যাংদোলা করে পুলিশ নিয়ে যেতে গেলে তাঁর পা মারাত্মক ভাবে জখম হয়েছে। আটক করা হয় সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষকেও। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে তাঁর জামা ছিঁড়ে যায়। আটক সবাইকে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ।

পুলিশের এ হেন আচরণের প্রতিবাদে সরব হন চাকরিপ্রার্থীরা। কেন তাঁদের নেতাদের আটক করা হল, সেই প্রশ্ন তুলে মিছিলের পরে একজোট হয়ে প্রতিবাদে নামেন তাঁরা। অরুণিমা পাল নামে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘শুধু আমাদের প্রতি বঞ্চনাই নয়, তার সঙ্গে পুলিশের অতি সক্রিয়তা এবং আক্রমণ সমানে চলছে। যোগ্যেরা চাকরি পাচ্ছেন না। অকারণে তাঁদের গ্রেফতার করছে লালবাজার।সরকার যদি মনে করে, এই ভাবে গ্রেফতার করে আমাদের মুখ বন্ধ করবে, তারা ভুল ভাবছে।’’

আর এক চাকরিপ্রার্থী অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘এ বারের লোকসভা ভোটে খেলা হবে। যে চাকরিপ্রার্থীর ১৭ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে না পারায় চাকরি হয়নি, তিনি খেলবেন। চাকরির দাবিতেই যাঁর জীবনের ৮-১০ বছর কেটে গিয়েছে, তিনি খেলবেন। সব জবাব পড়বে ভোটের বাক্সে।’’

মিছিলের শেষে চাকরিপ্রার্থীদের চার জনের এক প্রতিনিধিদল রাজভবনে যায়। প্রতিনিধিদলের তরফে শুভদীপ ভৌমিক বলেন, ‘‘রাজভবনের এক আধিকারিককে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। রাজ্যপালের কাছে অনুরোধ, তিনি যেন ধর্না মঞ্চে এসে আমাদের দুর্দশা দেখে যান।’’ ভাস্কর ঘোষ, আশিস খামরুই-সহ আটক হওয়া সকলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে লালবাজারের সামনে বেশি রাতে অবস্থান করেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধি ও চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Protest Heat job aspirants Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy