ভোলা রায়
শোভাবাজারের বাড়ি থেকে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে গেল এক কিশোর। ১১ দিন পরেও তার খোঁজ মেলেনি। সে নিজেই কোথাও চলে গিয়েছে, না কি তাকে কেউ অপহরণ করেছে, তা নিয়ে ধন্দে তদন্তকারীরা। শ্যামপুকুর থানার পুলিশ একটি অপহরণের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। যে বাড়িটি থেকে বছর চোদ্দোর ওই কিশোর নিখোঁজ হয়ে যায় সেখানকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি বিহার থেকে তার বাবা-মাকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৮ অগস্ট শোভাবাজার মোড়ের বাসিন্দা বীর সিংহ নামে এক ব্যক্তি শ্যামপুকুর থানায় ভোলা রায় নামে এক কিশোরের নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তাঁর দাবি, ওই দিন ভোলাকে তাঁরা শেষ বার দেখেছিলেন। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বীরের দু’বছর বয়সি ছেলেকে পাশের ঘরে এক মহিলার কাছে রেখে বা়ড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ভোলা। তার পরে সে আর ফেরেনি। বীর পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, ওই দিন শোভাবাজার মোড়ে রাস্তার ধারে ভোলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন এক অটোচালক। সে যেখানে যেখানে যেতে পারে, সেই সব জায়গায় খুঁজেও আর ভোলার দেখা মেলেনি।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বাগবাজারে মুদির দোকান রয়েছে বীরের। স্ত্রী সুনীতা এবং ছেলেকে নিয়ে শোভাবাজার মোড়ের কাছে থাকেন তিনি। বছরখানেক আগে ভোলাকে তার বিহারের গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন বীর। সম্পর্কে সে বীরের আত্মীয় হয়। ঘরের কাজকর্মের পাশাপাশি বীরের ছেলেকে দেখার দায়িত্ব পড়ে তার উপরে। প্রতিবেশীদের থেকে পুলিশ জেনেছে, কাজের নামে দিনরাত ভোলার উপরে অত্যাচার চালাতেন বীর এবং তাঁর স্ত্রী। ছেলে কাঁদলেই তার দায় গিয়ে পড়ত ভোলার উপরে। সে ঠিকঠাক দেখভাল করেনি, এই ‘অপরাধে’ ভোলাকে বেধড়ক মারধরও করা হত বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। এমনকি, স্বামী-স্ত্রী এবং বাচ্চার সমস্ত পোশাক ভোলাকে দিয়েই কাচানো হত রাস্তার কলে। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে ওই কিশোর।
যদিও বীর এবং তাঁর স্ত্রীর দাবি, ভোলার উপরে কোনও অত্যাচার করা হত না। কেউ অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে তাকে। তবে রবিবার রাত পর্যন্ত অপহরণ সংক্রান্ত কোনও ফোন আসেনি তাঁদের কাছে। বীর বলেন, ‘‘ওকে দিয়ে সামান্য ঘরের কাজ করানো হত। সব ঘরেই বাচ্চাদের যেটুকু বকাঝকা করা হয়, ভোলাকেও তাই করা হয়েছিল। তার বেশি কিছু নয়। ও আমাদের ছেলের মতো।’’ ওই কিশোরকে দিয়ে কাজ করানোর পরিবর্তে পড়াশোনা করালেন না কেন? এই প্রশ্নের অবশ্য উত্তর মেলেনি বীরের থেকে।
তদন্তের জন্য শহরে এসেছেন ভোলার মা রেণু এবং বাবা সুনীল রায়। রেণুদেবী বলেন, ‘‘ওকে মানুষ করার টাকা-পয়সা নেই আমাদের। ভাল থাকবে ভেবেই কলকাতায় পাঠিয়েছিলাম। এখানে শুনলাম ওকে মারধর করা হত। পুলিশকে বলেছি, ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিন। এ শহর থেকে ওকে নিয়ে আমরা চলে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy