দুর্ঘটনা: কলেজ স্কোয়ারের পুলে এই গভীরতায় (চিহ্নিত) তলিয়ে যায় মহম্মদ শাহবাজ (ইনসেটে)। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
দু’জন প্রশিক্ষক ১৭ জন শিক্ষার্থীকে সাঁতারের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। তাঁদের নজর এড়িয়ে গভীর জলে ঝাঁপিয়ে তলিয়ে গেল এক কিশোর। রবিবার সকালে কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে মহম্মদ শাহবাজ (১৭) নামে এক কিশোরের। ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে সেখানকার সাঁতার প্রশিক্ষণ ক্লাবগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে কলকাতা পুরসভার নজরদারি নিয়েও।
পুলিশ জানিয়েছে, ‘দ্য ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট সুইমিং ক্লাব’ এ সাঁতার শিখতে এসেছিল শাহবাজ। দুর্ঘটনার পরে কলকাতা পুরসভা কলেজ স্কোয়ারের যাবতীয় সাঁতার প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেয়। মৃতের পরিবারের তরফে সাঁতার ক্লাবের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। কলকাতা পুলিশ ওই সাঁতার ক্লাব ও সেটির প্রশিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজু করেছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রশিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা হবে।’’
পুলিশ জানায়, বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দা শাহবাজ ‘দ্য ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট সুইমিং ক্লাব’ এ দিন ১৫ আগে সাঁতারে ভর্তি হয়। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ওই দুর্ঘটনা ঘটে। ওই কিশোর যে তাঁদের চোখের আড়ালেই গভীর জলে ঝাঁপিয়েছে তা কার্যত মেনে নিয়েছেন প্রশিক্ষক কৌশিক ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘সাঁতার শিখতে মাত্র ৫-৬ দিন এসেছে শাহবাজ। সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে ১৭ জন শিক্ষার্থীকে আমরা দু’জন মিলে সাঁতার শেখাচ্ছিলাম। সাড়ে ৭টা নাগাদ সবার নজর এড়িয়ে ও হঠাৎই গভীর জলে ঝাঁপ দেয়। এক শিক্ষার্থী চিৎকার করে তা জানাতেই আমি ও সৌমেন দাস নামে আর এক প্রশিক্ষক কিছু ক্ষণ খোঁজাখুঁজি করি। তবে ওকে পাইনি। তার পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।’’
উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওই কিশোরের দেহ। ছেলের মৃত্যুতে শোকার্ত মা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
সকাল ন’টা নাগাদ কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দলের ডুবুরিরা এসে শাহবাজকে উদ্ধার করেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ওই কিশোরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য,২০১৭ সালে কলেজ স্কোয়ারের জলের নীচেই একটি সাঁতার ক্লাবের নির্মীয়মাণ পরিকাঠামোর ভিতরে আটকে মৃত্যু হয় সাঁতারু কাজল দত্তের। তিনি নিজে কলেজ স্কোয়ারের সঙ্গেই প্রশিক্ষক তথা ‘লাইফ সেভার’ হিসেবে জড়িত ছিলেন। ওই দুর্ঘটনার পরে কলকাতা পুরসভার তরফে ক্লাবগুলিকে নিরাপত্তার কারণে অনেকগুলি বিধি-নিষেধ অনুসরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল শিক্ষার্থীদের উপরে নজরদারি। যা এ দিন ক্লাবের তরফে তেমন ভাবে মানা হয়নি বলেই অভিযোগ কলকাতা পুরসভার। মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘ওই সময়ে পুলের নিরাপত্তায় বেশ কিছু রূপরেখা তৈরি করা হয়েছিল। তার পরেও কী ভাবে এ দিন দুর্ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে। কলেজ স্কোয়ারে ছ’টি ক্লাবের সাঁতার প্রশিক্ষণ আপাতত বন্ধ রাখা হবে।’’
তবে ক্লাবগুলি পুরসভার নির্দেশিত নিয়ম-বিধি মানছে কি না তা কি কলকাতা পুরসভা খেয়াল রাখে? দেবাশিসবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের কাছে অভিযোগ এলেই আমরা ব্যবস্থা নিই। প্রতিটি ক্লাবেই বিধি-নিষেধ লিখিত আকারে দেওয়া আছে।’’
নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে শাহবাজ বেনিয়াপুকুর এলাকারই একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে থাকত মেছুয়াপট্টি এলাকার একটি হোমে। শাহবাজের মা রুকসানা বেগম এ দিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘দুই ছেলেকে নিয়েই সংসার। ওঁদের (সাঁতার প্রশিক্ষক) জন্যই আমার ছেলে অকালে চলে গেল। কেন কেউ ওর দিকে খেয়াল করল না?’’ শাহবাজের হোমের সম্পাদক আবুল কায়ুম আনসারির অভিযোগ, ‘‘ক্লাবের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে।’’
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে সাঁতার ক্লাবের তরফে প্রণব সাহা বলেন, ‘‘দুই প্রশিক্ষককে শো-কজ করা হয়েছে।’’ দুর্ঘটনায় তাঁদের কোনও দোষ নেই দাবি করে প্রশিক্ষক কৌশিক ঘোষ বলেন, ‘‘যারা নতুন সাঁতার শিখতে আসে তাদের গভীর জলে নামতে বারণ করা হয়। শাহবাজ সেই বারণ মানেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy