স্কুলবাস দুর্ঘটনার পরে আহত এক পড়ুয়া। ফাইল চিত্র
শরীরের ব্যথা অনেকটাই কমেছে। কিন্তু আতঙ্ক কাটেনি। মাঝরাতে এখনও ঘুম ভেঙে যায় ওদের। দুর্ঘটনার আতঙ্কে কান্নাকাটি করে। এর মধ্যেই সোমবার থেকে শুরু হয়েছে পরীক্ষা। তাই দুর্ঘটনার সাত দিন পরেও স্কুলবাসে নয়, মা-বাবার সঙ্গেই পরীক্ষা দিতে এল সেই পড়ুয়ারা।
হোলি চাইল্ড স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আর্শিয়া জানাল, প্রথম দিনই ছিল অঙ্ক পরীক্ষা। তার বাবা দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘‘মেয়ের শারীরিক যন্ত্রণা কমেছে। কিন্তু আতঙ্ক রয়ে গিয়েছে পুরোমাত্রায়। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গিয়ে কেঁদে উঠছে। আতঙ্ক কাটানোর জন্য চিকিৎসাও চলছে। এর মধ্যেই আবার পরীক্ষা। তাই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ওকে পৌঁছে দিতে এসেছি।’’ আর্শিয়ার বাবা জানান, মেয়ে কোনও মতেই বাসে উঠতে চাইছে না। তাই বাড়ির গাড়িতেই বাবার সঙ্গে পরীক্ষা দিতে এসেছে সে। দীপঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘ওর পরীক্ষা বলে গাড়িতে করে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এর পরে যখন ক্লাস শুরু হবে, তখনও যদি ভয় না কাটে, তা হলে কী ভাবে যাতায়াত করবে, সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। রোজ তো ছুটি নিতে পারব না।’’
ওই স্কুলেরই আর এক ছাত্রী, অষ্টম শ্রেণির তিথি চট্টোপাধ্যায়ের বাবা সৌমেন চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁর মেয়েও বাসে উঠতে চাইছে না। সোমবার থেকে তারও পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সৌমেনবাবু আড়িয়াদহ থেকে মেয়েকে নিয়ে অটোয় করে স্কুলে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাসে কিছুতেই উঠতে চাইছে না। বারবার সে দিনের ঘটনার কথা মনে করে কেঁদে ফেলছে। মাকে গিয়ে ধরছে। এ দিকে, পরীক্ষা না দিলে তো বছর নষ্ট হবে। তাই ওকে বলেছি, যেমন করে হোক পরীক্ষাটা দিতে। গত সাত দিনে সে ভাবে মন দিয়ে পড়াশোনাও করতে পারেনি।’’
সৌমেনবাবু জানান, স্কুল প্রস্তাব দিয়েছিল, ওই দিনের স্কুলবাস দুর্ঘটনায় জখম ছাত্রীরা চাইলে পরেও পরীক্ষা দিতে পারবে। কিন্তু মেয়ে তাতে রাজি হয়নি। সে সবার সঙ্গেই পরীক্ষা দিতে চায়। তাই এই অবস্থাতেও পরীক্ষা দিতে এসেছে।
সে দিনের ওই দুর্ঘটনাগ্রস্ত স্কুলবাসে ছিল দুই বোন, মৌবনি ভৌমিক ও মৌবন্তি ভৌমিক। মৌবনির অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে ওঠার পরীক্ষা শুরু হল সোমবার থেকে। মৌবন্তি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সোমবার পরীক্ষা শুরু হল তারও। পরীক্ষা দিতে এসেছিল সপ্তম শ্রেণির আর এক ছাত্রী শ্রেয়সী সেনগুপ্তও। সে-ও ছিল ওই স্কুলবাসে। এরা কেউই স্কুলবাসে আসেনি। প্রত্যেকেই এসেছে অভিভাবকদের সঙ্গে। অভিভাবকেরা প্রত্যেকেই জানালেন, আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ওই পড়ুয়াদের। তাই পড়ায় মন বসাতে পারছে না তারা। স্কুল চালু হলে বনহুগলি এলাকা থেকে কী ভাবে মেয়েদের আনা-নেওয়া করবেন, সেটাই এখন চিন্তা তাঁদের।
অভিভাবকেরা জানালেন, যে বাসমালিকের থেকে ওই স্কুলবাস নেওয়া হয়েছিল, তাঁর আরও কয়েকটি স্কুলগাড়ি ছিল। সব ক’টিই বাতিল করেছেন তাঁরা। অভিভাবকদের মতে, পুলিশ যদি নিয়মিত অভিযান চালায়, তা হলেই ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া যে স্কুলবাসগুলি চলছে, সেগুলি বন্ধ হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy