নজরদার: স্কুলে বসানো এমন সিসি ক্যামেরাতেই ধরা পড়ল ছাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
স্কুলের নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। মেয়েদের স্কুল চলার সময়ে সেগুলি পরীক্ষা করতে এসেছেন কয়েক জন পুরুষকর্মী। ক্যামেরা চালু হতেই মনিটরে চলে এল কয়েকটি দৃশ্য। অভিযোগ, শৌচালয়ের সামনের খোলা অংশই শৌচকর্মের জন্য ব্যবহার করছে কয়েক জন ছাত্রী। যার মধ্যে রয়েছে নবম-দশম শ্রেণির পড়ুয়ারাও। তা দেখে তড়িঘড়ি বন্ধ করা হয় ক্যামেরা। কিন্তু কেন এমন ঘটল? জানা গেল, শৌচালয় এমনই অপরিচ্ছন্ন যে, ছাত্রীরা ঢুকতে পারে না সেখানে। শিক্ষিকাদের একটা বড় অভিযোগ, বারবার বলেও এই সমস্যার সমাধান হয়নি। ঘটনাটি কোনও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের নয়, খাস শহরে বাগুইআটির অন্নদাসুন্দরী হিন্দু বালিকা বিদ্যাপীঠের।
মিড-ডে মিল সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠায় শনিবার ওই স্কুলে বৈঠক করতে গিয়েছিলেন জেলা স্কুল পরিদর্শক। সেখানেই শৌচালয় নিয়ে অভিযোগ পৌঁছয় তাঁর কাছে। বহু অভিভাবকের অভিযোগ, নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ার কারণে বহু ছাত্রী স্কুলের শৌচালয় ব্যবহার করাই বন্ধ করে দিয়েছে। তাই জল কম খাচ্ছে। যার জেরে কিডনির সমস্যাও হচ্ছে কারও কারও। সংক্রমণ হয়েছে অনেকের। এ দিন এক পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, ‘‘তিনতলার স্কুলে সব ক’টি শৌচালয়ই নীচে। দরজা ভাঙা, জলও থাকে না।’’ স্কুল সূত্রের খবর, এই সব জানিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা শাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষিকাদের একাংশও। তাঁদের বক্তব্য, কর্তৃপক্ষের কাছে বলেও প্রতিদিন শৌচালয় পরিষ্কার করার ব্যবস্থা হয়নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা প্রীতি দত্ত অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শৌচালয়গুলিতে ইতালির
টালি বসানো। মেয়েরা যদি ঠিক মতো জল না দেয়, তা হলে পরিষ্কার কী করে থাকবে? আমাদের তো পুরসভার সাফাইকর্মী নেই। তবু রোজই পরিষ্কার করা হয়।’’ এর পরেই অবশ্য মুখে কুলুপ দেন তিনি। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘জেলা স্কুল পরিদর্শকের লিখিত অনুমতি ছাড়া আর কিছুই বলব না।’’
তবে এই ঘটনায় বিরক্ত স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারা। বিকাশ ভবনের এক কর্তার বক্তব্য, ৩৮টি সিসিটিভি বসাতে স্কুল খরচ করতে পারছে অথচ শৌচালয় সাফ করাতে পারছে না? এটা দুর্ভাগ্যজনক। সব দিক খতিয়ে দেখার জন্য জেলা স্কুল পরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। দ্রুত শৌচালয়ের হাল ফেরাতে বলা হয়েছে। এটা একেবারেই অনভিপ্রেত।’’ রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশন যেখানে প্রতি বছর ঘটা করে নির্মল বিদ্যালয়ের পুরষ্কারের অনুষ্ঠান আয়োজন করে, সেখানে বাগুইআটির এই স্কুলের ঘটনায় হতবাক দফতরের কর্তারাই। সর্বশিক্ষা মিশনের এক কর্তা জানান, শিক্ষার অধিকার আইন (২০০৯) অনুযায়ী, পড়ুয়াদের পরিচ্ছন্ন শৌচালয় দেওয়া স্কুলের প্রাথমিক কর্তব্য। ওই কর্তার কথায়, ‘‘ছাত্রীদের জল ব্যবহার শেখাতে হবে স্কুলকেই। ছাত্রীদের দোষ দেখিয়ে নিজের দুর্বলতাই স্পষ্ট করছেন প্রধান শিক্ষিকা।’’
তবে সিসি ক্যামেরা চালুর সময়ে কেন স্কুলের সকলকে সতর্ক করা হল না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। বিধিসম্মত সতর্কীকরণ হিসেবে সিসিটিভি-র আওতায় থাকলে সকলকে তা জানানো বাধ্যতামূলক। প্রধান শিক্ষিকা অবশ্য এ বিষয়ে কোনও স্পষ্ট জবাব দেননি। স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) শুধু প্রণয় রায় বলেন, ‘‘আগে পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল। ধাপে ধাপে আমরা সেগুলির উন্নয়ন করছি। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলে আরও ভাল ভাবে শৌচালয় গড়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy