সহায়: শিশুদের পড়ানোয় ব্যস্ত তন্দ্রা। বারুইপুরে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।
এলাকায় প্রোমোটারদের দৌরাত্ম্য হয়ে উঠেছিল মাত্রাছাড়া। প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। সেই প্রতিবাদের এমন ‘শাস্তি’ পেয়েছিলেন, যা মনে থাকবে চিরকাল। চলন্ত ট্রেনে তাঁকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছোড়ে এক দুষ্কৃতী। যার জেরে জীবনটাই অন্ধকারে ডুবে যায় বারুইপুরের বাসিন্দা তন্দ্রা মাখালের। দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার পরে বছরখানেক আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাত ধরে বাইরে বেরোন তিনি। শুরু হয় স্বনির্ভর হওয়ার লড়াই।
জীবনের প্রতি নতুন করে ভরসা খুঁজে পাওয়া তন্দ্রা এ বছরের পঁচিশে বৈশাখ শুরু করলেন আর এক নতুন লড়াই। তাঁরই মতো অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসা এক ঝাঁক ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়ে আলোর পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। বারুইপুরের কল্যাণপুর এলাকায় বাড়ি ২৯ বছরের তন্দ্রার। কাজ করতেন একটি বিউটি পার্লারে। ২০১৭ সালে বলপূর্বক জায়গা দখলের চেষ্টার ঘটনায় স্থানীয় এক প্রোমোটারের সঙ্গে গোলমাল বাধে তাঁর। এর পরেই কাজ সেরে ফেরার পথে বারুইপুর স্টেশনে ট্রেনের মধ্যে অ্যাসিড-হামলা হয় তন্দ্রার উপরে। একটি চোখ নষ্ট হয় যায়। পুড়ে যায় দেহের অনেকটা অংশ। নিজেকে পুরোপুরি গুটিয়ে নেন তন্দ্রা। ক্রমশ গ্রাস করে অবসাদ। প্রায় পাঁচ বছর বাড়ি থেকেও বেরোননি তিনি।
গত বছর বারুইপুর মহিলা থানার উদ্যোগে সংবর্ধনা দেওয়া হয় অ্যাসিড-আক্রান্তদের। তখনই এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তন্দ্রাকে বাড়ি থেকে বার করে আনে। বারুইপুরে সেই সময়ে ‘দেওয়া নেওয়া’ নামে পুরনো জামাকাপড় সংগ্রহ করে দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার একটি প্রকল্প শুরু হয়। সেই প্রকল্পে যুক্ত হন তন্দ্রা। এ ছাড়া, অ্যাসিড-আক্রান্তদের নিয়ে কাগজের পেন, ধূপ তৈরি-সহ বিভিন্ন হাতের কাজও শুরু করে ওই সংগঠন। সেখানেও কাজ শুরু করেন তন্দ্রা। ধীরে ধীরে মানসিক অবসাদ কাটিয়ে স্বনির্ভর হয়ে ওঠেন। ‘দেওয়া নেওয়া’ প্রকল্পে তন্দ্রার কাছেই জামাকাপড় নিতে আসত বারুইপুর স্টেশন চত্বরে বসবাস করা কয়েকটি শিশু। তাদের মূল স্রোতে ফেরানোর পরিকল্পনা করেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার বিমান দত্ত। এগিয়ে আসেন তন্দ্রাও। তাঁদেরই উদ্যোগে ১০-১২ বছর বয়সি প্রায় ১৫ জনকে পড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে রবীন্দ্র জয়ন্তীরদিন থেকে।
প্রাথমিক ভাবে নিজের নাম বাংলা ও ইংরেজিতে লিখতে শেখানো হচ্ছে তাদের। বিমান বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই তন্দ্রা ওদের খুব পছন্দের হয়ে উঠেছেন। প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে এখন দিনের বেশির ভাগ সময় তন্দ্রার কাছেই কাটছে ওদের। পড়াশোনারপাশাপাশি ছবিও আঁকছে ওরা। এক-এক জনের আঁকা ছবি আমাদের চমকে দিয়েছে।’’ আর তন্দ্রার কথায়, ‘‘এক সময়ে ভেবেছিলাম জীবনটা শেষ। এখানে এসে নতুন জীবন পেয়েছি। এখন আমার মতোই অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসা এই ছেলেমেয়েদের একটা অন্য রকম জীবন দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy