Advertisement
১০ নভেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

‘নিখোঁজ কোথায়? হস্টেলে আছি’! আরজি কর নিয়ে গুজব থামাতে আবেদন এ বার আন্দোলনকারীদেরও

রবিবারই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গোটা ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ‘গুজব’ নিয়ে বার্তা দিয়েছিলেন তিনি।

Stop spreading Rumours, says Protestors of RG Kar Hospital

আরজি কর হাসপাতালের সামনে আন্দোলনকারীরা। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৪ ১৮:৪৭
Share: Save:

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এক জন নন, একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে নানা তত্ত্ব ঘুরছে সমাজমাধ্যমে। সেই সূত্রেই একাধিক পড়ুয়ার ‘নিখোঁজ’ তত্ত্বও উড়ছে! প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে তাঁদের নাম-ছবি। এ সব ‘গুজব’ বলে দাবি করে তাতে কান না দেওয়ার বার্তা দিলেন আরজি করের আন্দোলনকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, যাঁদের নাম-ছবি প্রকাশ্যে এনে নিখোঁজ বলে দাবি করা হচ্ছে, তাঁরা সকলে হস্টেলেই রয়েছেন। আন্দোলনেও যোগ দিয়েছেন। এমনকি, পুলিশের সঙ্গেও কথা হয়েছে তাঁদের।

‘গুজব’ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে রবিবারই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকের পর বার্তা দিয়েছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এখন বিভিন্ন ধরনের গুজব চার দিকে চলছে। কোথাও বলা হচ্ছে একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন, কোথাও বলা হচ্ছে কাউকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে— এমন একাধিক গুজব ছড়াচ্ছে। এ সব নিয়ে আন্দোলনকারীদের মনেও প্রশ্ন ছিল। সেগুলি নিয়ে কথা হয়েছে তাঁদের সঙ্গে। আমরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ। যদি কারও কোনও প্রশ্ন থাকে, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। যদি কেউ সন্দেহ করেন, ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত থাকতে পারেন— সেটি আমরা সব রকম গুরুত্ব দিয়ে দেখব। আমাদের কিছুই আড়াল করার নেই।’’

গত শনিবার সকালে আরজি কর-কাণ্ডে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃত বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর মেলে, জেরায় অপরাধের কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন ধৃত। যদিও এ নিয়ে পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে কিছু বলা হয়নি। এর পর থেকেই আন্দোলনকারীদের একাংশ দাবি করেন, এক জন নন, মহিলা চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণে একাধিক ব্যক্তি জড়িত। সুরতহালের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে তাঁদের যুক্তি, নিহত তরুণী চিকিৎসকের যৌনাঙ্গ-সহ গোটা শরীর জুড়ে নানা জায়গায় ক্ষতচিহ্ন মিলেছে। গলার কণ্ঠা ও থাইরয়েড হাড়ও ভাঙা হয়েছে। এক জনের পক্ষে এক জন পূর্ণবয়স্ক, সুস্থ-সবল মানুষকে শ্বাসরোধ করে খুন-ধর্ষণের পর হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া কী ভাবে সম্ভব? তা-ও আবার মাত্র আধ ঘণ্টারও কম সময়ে? প্রসঙ্গত, তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, ধৃতের আধ ঘণ্টার গতিবিধি মিলেছে সিসিটিভি ফুটেজে।

একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন, আন্দোলনকারীদের এই সন্দেহ নিয়ে নানাবিধ জল্পনার মধ্যেই একটি ফেসবুক পোস্ট প্রকাশ্যে আসে। সেই পোস্টে এক যুবকের নাম-ছবি দিয়ে তাঁকে খুঁজে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়! সমাজমাধ্যমে কেউ কেউ দাবি করেন, ওই যুবক আরজি করের পড়ুয়া। মহিলা চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণে তিনিও জড়িত থাকতে পারেন এবং ঘটনার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ। এই সব দাবির সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করে আনন্দবাজার অনলাইন। শেষমেশ যোগাযোগও করা হয় ওই যুবকের সঙ্গে। ওই যুবক আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, তিনি হস্টেলেই রয়েছেন এবং পুলিশি তদন্তেও সহযোগিতা করছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ্যে কিছু বলবেন না। ওই যুবক নিজেও রবিবার ফেসবুকে একটি পোস্ট করে জানান, তিনি মোটেই নিখোঁজ নন। হস্টেলেই রয়েছেন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখিও হয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘বিভিন্ন গ্রুপে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে। আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, ঘটনার দিন থেকে আমি হস্টেলেই আছি। পুলিশকে তদন্তে সহযোগিতাও করছি। এই মুহূর্তে আমি মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। দয়া করে ভুয়ো খবর ছড়াবেন না।’’

একই কথা বলছেন আন্দোলনকারীরাও। তাঁদের বক্তব্য, সম্পূর্ণ গুজব রটানো হচ্ছে। যাঁদের নামে বলা হচ্ছে, তাঁরা মোটেই হাসপাতাল ছেড়ে যাননি। তাঁরা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন বলেও দাবি করা হয়েছে আন্দোলনকারীদের তরফে। আরজি করের আর এক ইন্টার্নও ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ বলে সোমবার সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে। যিনি পোস্টটি করেছেন, তাঁর সঙ্গে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজেরও কোনও যোগ নেই। তার প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীদের বার্তা, যে ভাবে পড়ুয়াদের নাম-ছবি প্রকাশ্যে এনে নানা তত্ত্ব ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে সেই পড়ুয়াদের তো বটেই, তাঁদের পরিবারকেও ‘বিপদে’ পড়তে হচ্ছে। গুজব রটিয়ে হেনস্থার মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের! এক আন্দোলনকারীর কথায়, ‘‘ঘটনার রাতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের নাম-ছবি যে ভাবে প্রকাশ্যে এনে নিখোঁজ বলে দাবি করা হচ্ছে, তা একেবারেই ঠিক নয়। ওঁদেরও তো পরিবার রয়েছে। ভবিষ্যৎ রয়েছে। সত্যিটা না জেনে এ ভাবে ভুয়ো খবর ছড়ানো বন্ধ হোক। ওঁরা তদন্তে সহযোগিতা করছে। পুলিশ তলব করলে নিশ্চয়ই যাবেন।’’

আরজি কর-কাণ্ডে দুই ব্যক্তির মধ্যে ফোনে কথোপকথনের একটি অডিয়ো ক্লিপও প্রকাশ্যে এসেছে। সেই অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। সেই অডিয়োয় শোনা গিয়েছে, এক ব্যক্তি আরজি করের ঘটনা নিয়ে আর জনের কাছে জানতে চাইছেন। তার জবাবে দ্বিতীয় ব্যক্তি দাবি করেন, গোটা আন্দোলনটাই ভুয়ো। অধ্যক্ষই (সোমবার ইস্তফা দিয়েছেন তিনি) আন্দোলন চালাচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে বলে দাবি করে দ্বিতীয় ব্যক্তির বক্তব্য, ‘‘এক জনের কাজ নয় দাদা। দু’জন বা তিন জন।’’ দ্বিতীয় ব্যক্তিই দাবি করেছেন, গোটাটাই এক ইন্টার্নের কাজ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাঁর ‘রাজনৈতিক-যোগ’ রয়েছে বলে দাবি করে নাম অবশ্য নেননি ওই ব্যক্তি। তাঁর আরও দাবি, তাঁকে বাঁচাতেই সব কিছু সাজানো হয়েছে! এই অডিয়ো ক্লিপ নিয়েও বিতর্ক দানা বেঁধেছে। আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন, এই অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা কে যাচাই করেছে? এর সঙ্গে আরজি করের আন্দোলনকারীদের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেছেন তাঁরা।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত এক অভিযুক্তই এর নেপথ্যে রয়েছেন বলে মনে হলেও তাঁরা সব দিক খতিয়ে দেখছেন। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘তরুণীর পরিবারকে অটোপসি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। ওঁদের সঙ্গে কথাও বলা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে তিন জনের সিমেনের নমুনা পাওয়া গিয়েছে বলে যে সব গল্প ঘুরছে, সেগুলো একদমই গুজব। এর বাইরে কেউ আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ কেউ কোনও তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে চাইলে, তার জন্য হেল্পলাইন নম্বর— ১৮০০৩৪৫৫৬৭৮ দিয়েছে পুলিশ। লালবাজারের ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দাপ্রধান মুরলীধর শর্মাও বলেছেন, ‘‘ওই মেয়েটি আমারই মেয়ে, আমার বোন, আমার ভাইঝির মতো। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE