মার্চের মাঝামাঝিই পুড়ছে শরীর। দিনে বেরোতে হলে গলদঘর্ম অবস্থা। একই অবস্থা গাড়িরও। রোদে রাখা গাড়ির আসনে পিঠ এলিয়ে বসলেই গা চড়চড়িয়ে উঠছে। এখন থেকেই আশঙ্কা হচ্ছে, এপ্রিল-মে মাসে কী হবে! চিন্তা বাড়িয়ে আবহাওয়াবিদেরা জানাচ্ছেন, গরমে এ বার আরও নাজেহাল পরিস্থিতি হতে পারে। এর মধ্যেই মাথায় ঘুরছে গরমে গাড়িতে আগুন লেগে যাওয়ার বিপদ। গত বছর মে মাসের গরমে কলকাতায় সাতটি গাড়িতে আগুন লেগে যাওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। বাদ যায়নি স্কুলবাসও। এ বছরেও পরিস্থিতি সে দিকেই যেতে পারে বলে আশঙ্কা।
শনিবারই কলেজ স্ট্রিটে একটি সরকারি বাসে আগুন ধরে গিয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও তীব্র গরমে যন্ত্রাংশ বিকল হওয়ায় এমন অগ্নিকাণ্ড কিনা, আলোচনা শুরু হয়েছে তা নিয়ে। আলোচনা চলছে, যেখানে একাধিক দুর্ঘটনার পরেও রক্ষণাবেক্ষণে জোর না দিয়ে তাপ্পি দেওয়া চাকায় গণপরিবহণ চালানো হয়, সেখানে আগুন লাগার বিপদ নিয়ে ভাবা হবে কি?
গাড়ি বিক্রি অথবা রক্ষণাবেক্ষণে যুক্ত সংস্থার কর্মীরা জানাচ্ছেন, যে হারে গরম বাড়ছে, তাতে গাড়ির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করলে যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারে। নিয়মিত সার্ভিসিং করানো এবং গণপরিবহণে ব্যবহৃত সমস্ত গাড়ি প্রতি ট্রিপের শেষে পরীক্ষা করে দেখে নিয়ে তবেই চালানোর কথা জানাচ্ছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে তাঁদের পরামর্শ, তীব্র গরমে পেট্রলচালিত গাড়িতে ট্যাঙ্ক ভর্তি করে জ্বালানি ভরা উচিত নয়। এ ভাবে জ্বালানি ভরলে বাষ্পের (ভেপার) জায়গা কমে যায়। এ দিকে, তীব্র গরমে ট্যাঙ্কে বেশি বাষ্প তৈরি হয়। এই বাষ্প জায়গা না পেয়ে বিপদ ঘটাতে পারে।
একটি গাড়ি বিপণির দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক তনয় ঘোষ বলছেন, ‘‘গাড়ির ইঞ্জিনের খেয়াল রাখা এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ। কুলেন্ট, ইঞ্জিন অয়েলের মাত্রা ঠিক আছে কিনা, নিয়মিত দেখা দরকার। গাড়ির কোনও তার ছেঁড়া থাকতে পারে। সেটা নজর এড়ালে গরমে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।’’
পার্ক স্ট্রিটের এক গাড়ি বিপণির কর্ণধার সুধাংশু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইঞ্জিন অয়েল, ট্রান্সমিশন ফ্লুইড লিক করে ইঞ্জিনের আশপাশে থাকা প্লাস্টিকের সংস্পর্শে এলে অনেক সময়ে আগুন ধরার আশঙ্কা তৈরি হয়। এ ছাড়া, ইঞ্জিনের ‘হেড গ্যাসকেট’ ও অন্য যন্ত্রাংশ মাত্রাতিরিক্ত গরম হলে বিপদ ঘটতে পারে। কিন্তু অতিরিক্ত গরম হলেই সরাসরি ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাবে, ব্যাপারটা তেমন নয়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর গাড়ি এবং চালক, উভয়কেই বিশ্রাম দিতে হবে।’’ কিন্তু গাড়ি বা চালককে বিশ্রাম না দিয়েই যেখানে রাতদিন অ্যাপ-ক্যাব চালানো হয়, সেখানে এই সচেতনতা দেখা যাবে কি?
বজবজের একটি গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক রমেন সরকার জানাচ্ছেন, দৈনন্দিন ব্যবহার্য নানা জিনিস থেকে গাড়ির ভিতরে বিপদ ঘটতে পারে। তাঁর দাবি, রোদচশমা, লাইটার এবং বিয়ারের বোতল এমন কয়েকটি জিনিস, যা থেকে তীব্র গরমে গাড়ির ভিতরে বিপদ ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই গাড়িতে উঠে ড্যাশ বোর্ডে এগুলি রেখে দেন। বেশির ভাগ রোদচশমার ফ্রেম প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। সারা দিন রোদে সেই চশমা রেখে দিলে গরমে গলে যেতে পারে। দীর্ঘ ক্ষণ রোদে লাইটার বা দেশলাই রেখে দিলে আগুন ধরে যেতে পারে। আর বিয়ার আসলে কার্বোনেটেড পানীয়, এর মধ্যে অ্যালকোহলও থাকে। তাই অতিরিক্ত রোদ পেলে বোতল ফেটে বিপত্তি ঘটতে পারে যে কোনও সময়ে।’’ গাড়ির ভিতরে প্রসাধনী এবং স্যানিটাইজ়ার রাখার ব্যাপারেও সতর্ক হতে বলছেন গাড়ির বিশেষজ্ঞেরা। তীব্র গরমে আগুন ধরাতে পারে এই প্রয়োজনীয় সামগ্রীও।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)