পুনর্বাসন: থানা থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই মূর্তি। ছবি: শৌভিক দে।
মীমাংসা হতে সময় লাগল ঠিক এক বছর!
বৃহস্পতিবার রাতে মানিকতলা থানার সামনে দাঁড়ানো লরিতে বিধানচন্দ্র রায়ের আট ফুট লম্বা একটি মূর্তি তুলে দিয়ে ওই থানার এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘অবশেষে গতি হল! বিধান রায়কে আর থানায় থাকতে হবে না। আমাদেরও আর চিন্তা নেই।’’ তাঁকে থামিয়ে দিয়ে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘মূর্তিটা পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। পুলিশ অনেক দেখেছে। এ বার যাঁদের মূর্তি তাঁরা নিয়ে যাক।’’
গত বছরের ৩০ জুন থেকে এক বছর বিধানচন্দ্রের ওই ফাইবার-মূর্তি মানিকতলা থানায় রাখা ছিল। ওই সময় মূর্তি বসানো নিয়ে মানিকতলায় প্রবল বিতর্ক হয়। মূর্তি ঘিরে চলে রাজনৈতিক টানাপড়েন। বৃহস্পতিবার সেই মূর্তিই কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তীর হাতে তুলে দিলেন মানিকতলা থানার পুলিশ আধিকারিকেরা। মুচিবাজার সংলগ্ন ১১০ নম্বর উল্টোডাঙা মেন রোডে বসানো হচ্ছে মূর্তিটি। আজ, রবিবার বিধানচন্দ্রের জন্ম দিবসে (তাঁর মৃত্যুও একই দিনে) ওই মূর্তি উদ্বোধন হওয়ার কথা।
গত বছর মুচিবাজারে ট্র্যাফিক স্ট্যান্ডের কাছে এই মূর্তি বসানোর কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। —ফাইল চিত্র।
ঠিক এক বছর আগে মুচিবাজার বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তায় বিধানচন্দ্রের মূর্তিটি বসানোর কথা ছিল। মূর্তিটি তৈরি করিয়েছিলেন ওই এলাকার তৃণমূল নেতা রবি পাল। তবে সেই সময় ওই মূর্তি বসানো যায়নি। অভিযোগ ওঠে, যান নিয়ন্ত্রণের জন্য রাস্তার ট্র্যাফিক স্ট্যান্ড তুলে দিয়ে সেখানেই মূর্তিটি বসানোর চেষ্টা করেছেন তৃণমূল নেতা। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কাজ বন্ধ করিয়ে দেয়। পুলিশের নির্দেশেই মূর্তির বদলে ট্র্যাফিক স্ট্যান্ড ফিরে আসে।
এর পরেই শুরু হয় মূর্তি নিয়ে টানাপড়েন। বিতর্কিত মূর্তিটি আর ফেরত নিতে চাননি রবিবাবু। অন্য কেউও আগ্রহ দেখাননি। ফলে সেটি কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে ফাঁপরে পড়ে পুলিশ। অগত্যা মানিকতলা থানাতেই মূর্তি রাখার ব্যবস্থা করা হয়। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘শত হোক বিধান রায়ের মূর্তি। রাস্তায় ফেলে রাখা যায় না। তাই থানাতেই রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এত দিন পুলিশই মূর্তিটির দেখাশোনা করেছে।’’ এক পুলিশকর্মী জানালেন, গত এক বছর ধরে বিধানচন্দ্রের মূর্তি রাখা ছিল থানার পিছন দিকের চাতালে। সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখা হয়েছে। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়েছে। এ বার কাউন্সিলরের হাতে সেটি তুলে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে পুলিশ।
হঠাৎ বিতর্কিত মূর্তি ফেরত নিলেন কেন? কাউন্সিলর বললেন, ‘‘বিধাননগরের এত কাছে আমার এলাকা। দীর্ঘ দিন থেকে তাই বিধান রায়ের একটা মূর্তি বসানোর ইচ্ছা ছিল। ওই মূর্তিটাও থানায় আটকে ছিল। তাই সেটাকেই ছাড়িয়ে নিতে এসেছি।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘এত দিনে বিতর্ক থেকে মুক্তি পেলেন বিধান রায়— ব্যপারটাকে এ ভাবে দেখুন।’’ মূর্তির আসল মালিক রবিবাবু বলছেন, ‘‘যে-ই করুন, থানা থেকে বিধান রায়কে মুক্তি দিয়েছেন, এটাই বড় কথা। কাউন্সিলরকে ধন্যবাদ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy