Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

পুরসভায় আস্থা নেই, নির্মাণ-দূষণ ঠেকাতে পুলিশের কাছে পর্ষদ

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের কথায়, ‘‘এত দিন আমরা নির্মাণস্থল ঢেকে কাজ করা-সহ একাধিক ব্যবস্থার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সে সব অনেক জায়গাতেই মানা হয়নি। আমাদের মনিটরিং দল যদি দেখতে পায়, কোথাও নিয়ম মানা হচ্ছে না, তা হলে তারা পুলিশে খবর দিচ্ছে। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’’

 অনিয়ম: কিছুটা ঢাকা দিয়ে চলছে নির্মাণকাজ। সামনে খোলা পড়ে নির্মাণ সামগ্রী। পার্ক সার্কাস এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

অনিয়ম: কিছুটা ঢাকা দিয়ে চলছে নির্মাণকাজ। সামনে খোলা পড়ে নির্মাণ সামগ্রী। পার্ক সার্কাস এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪২
Share: Save:

নির্মাণস্থলের দূষণ আটকাতে আর কলকাতা পুরসভার উপরে ভরসা করতে নারাজ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তাই এ বার শহরের কোথায় কোথায় পরিবেশ-বিধি না মেনে নির্মাণ হচ্ছে, তা সরেজমিন দেখতে পর্ষদের ১০টি দল নিয়মিত বেরোচ্ছে। কোথাও যদি দেখা যায়, সেই বিধি মানা হচ্ছে না, তা হলে সরাসরি ১০০ ডায়ালে ফোন করে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করছে তারা। কিন্তু পর্ষদের একার পক্ষে এ ভাবে নির্মাণ-দূষণ আটকানো কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশাসনের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের কথায়, ‘‘এত দিন আমরা নির্মাণস্থল ঢেকে কাজ করা-সহ একাধিক ব্যবস্থার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সে সব অনেক জায়গাতেই মানা হয়নি। আমাদের মনিটরিং দল যদি দেখতে পায়, কোথাও নিয়ম মানা হচ্ছে না, তা হলে তারা পুলিশে খবর দিচ্ছে। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’’

প্রসঙ্গত, শুধু কলকাতাতেই নয়, নির্মাণস্থলের দূষণ সারা দেশেই মাথাব্যথার কারণ বলে জানাচ্ছেন পর্ষদকর্তারা। কারণ, নির্মাণ চলার সময়ে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম১০) পরিমাণ অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর দেশে তৈরি হওয়া প্রায় আড়াই কোটি টন নির্মাণ-বর্জ্য থেকে ছড়ায় দূষণ। সেই দূষণ রুখতে ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ‘কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেমোলিশন ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস, ২০১৬’ জারি করা হয়েছে। বছর খানেক আগে আবার ‘ডাস্ট মিটিগেশন’ নির্দেশিকাও জারি করে কেন্দ্র। সেখানে নির্মাণ-পুনর্নির্মাণ এবং ভাঙাভাঙির কাজের সময়ে কী কী নিয়ম মানতে হবে, তা স্পষ্ট করে বলেছে পরিবেশমন্ত্রক। তার পরেও অনেক জায়গায় তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

প্রসঙ্গত, বায়ুদূষণ রোধে ব্যর্থ হওয়ার জন্য গত নভেম্বরেই রাজ্যকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল রাজ্য পরিবেশ আদালত। দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে তখন নির্মাণস্থলে পরিবেশ-বিধি না মানাকে দায়ী করা হয়েছিল। প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘পর্ষদের মনিটরিং দল বিষয়টি দেখছে বটে। কিন্তু এটা তো কলকাতা পুরসভার দেখার কথা! নির্মাণ সংক্রান্ত কাজের উপরে নজরদারি তো তাদের দেখার বিষয়।’’

নির্মাণের কাজ চলার সময়ে ওই জায়গা ও ইমারতি দ্রব্য ঢেকে রাখা, ইমারতি দ্রব্য অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময়েও তা ঢেকে রাখা-সহ একগুচ্ছ নিদান বছর খানেক আগেই দিয়েছিল পুরসভা। শহরের সমস্ত নির্মীয়মাণ আবাসনে সেই বিধি মানতে বলে তৈরি হয়েছিল ‘শর্ট টার্ম অ্যাকশন প্ল্যান’। কিন্তু তার পরেও তা বাস্তবায়িত হতে গোড়া থেকেই টালবাহানা চলে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

যদিও পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্যকে জরিমানা করার পরেই বিষয়টি নিয়ে ফের সতর্ক হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। নির্মাণস্থলে কী কী পরিবেশ-বিধি মানতে হবে, তা নিয়ে শহরের একাধিক জায়গায় ইলেকট্রনিক বোর্ডে প্রচার শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, পরিবেশ-বিধি মানার জন্য নির্মীয়মাণ আবাসনগুলির কাছে নোটিস পাঠানো হচ্ছে। পুরসভার এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘আমরা দু’-তিনটি জায়গায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। নিয়ম মানার পরে আবার কাজ চালুর অনুমতি দিয়েছি।’’ তবে এখনও এ বিষয়ে কাউকে জরিমানা করা হয়নি বলেই পুরসভা সূত্রের খবর। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘কোনও নির্মাণস্থলে পরিবেশ-বিধি ঠিক মতো মানা হচ্ছে কি না, সমস্ত জায়গায় ঘুরে তা দেখার মতো পরিকাঠামো সত্যিই পুরসভার নেই। তবে এটা খুবই দরকার। এ ব্যাপারে মেয়রের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করা হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE