বিপরীত: চিনা মাঞ্জা নেই জানিয়ে বোর্ড দেওয়া হয়েছে ক্রিক রোয়ের এক দোকানে। নিজস্ব চিত্র।
যে বিপদের হাত থেকে বাঁচতে খরচ করা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা, তার উৎস বন্ধ করতে কি আদৌ কোনও চেষ্টা করা হচ্ছে? সম্প্রতি চিনা মাঞ্জা আটকাতে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে মা উড়ালপুল ঘিরে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী দিনে অন্য উড়ালপুলগুলিও একই ভাবে ঘিরে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, চিনা মাঞ্জার বিক্রি ও ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করার সার্বিক চেষ্টা হচ্ছে না কেন? তা হলে তো আর উড়ালপুল ঘেরার প্রয়োজনই হত না। কলকাতা পুলিশের অবশ্য দাবি, এ শহরে চিনা মাঞ্জা বিক্রি হয় না।
বিশ্বকর্মা পুজোর মুখে শহরের বিভিন্ন ঘুড়ির দোকানে গিয়ে দেখা গেল, পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে ‘চিনা মাঞ্জা চেয়ে বিরক্ত করবেন না’ জাতীয় বার্তা ঝুলছে। তবে সেখান থেকেই মিলছে শহরতলির একাধিক দোকানের হদিস, যারা চিনা মাঞ্জা বিক্রি করে।
মা উড়ালপুলে গত তিন মাসে চিনা মাঞ্জায় আহত হয়েছেন ১৩ জন বাইকচালক। চিনা মাঞ্জা আটকাতে মাস ছয়েক আগে পুলিশ ওই উড়ালপুলের দু’দিক ঘিরে দেওয়ার (ফেন্সিং) প্রস্তাব পাঠায় কেএমডিএ-র কাছে। দু’টি ভাগে দরপত্র ডেকে সম্প্রতি সেই কাজ শুরু হয়েছে। দুই লেনেরই প্রায় ৯০০ মিটার করে অংশ ঘেরা হবে। কেএমডিএ সূত্রের খবর, বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রশ্ন হল, চিনা মাঞ্জার সরবরাহ বন্ধ করতে না পারলে উড়ালপুল ছাড়া অন্যত্রও তো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে? সে ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করেও তো অঘটন থামানো যাবে না। পুলিশের এক কর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘শহরের একাধিক বাজারে অভিযান চালানো হয়েছে। চিনা মাঞ্জা বেচলেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ বিশ্বকর্মা পুজোর মুখে চিনা মাঞ্জার বিক্রি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও বছরের বাকি সময়ে কি এই কড়াকড়ি থাকবে? সে প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যায়।
বিশ্বকর্মা পুজোর সময়েই সব থেকে বেশি ঘুড়ি ওড়ে শহরে। বুধবার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার ও ক্রিক রো এলাকার একাধিক ঘুড়ির দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে চিনা মাঞ্জার বিক্রি আপাতত বন্ধ। এমনকি, খদ্দেরের ‘বায়না’ ঠেকাতে অনেকেই দোকানের বাইরে ‘নো চিনা মাঞ্জা’ লেখা বোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছেন। ক্রিক রো এলাকার ঘুড়ি বিক্রেতা বাপ্পাদিত্য দত্ত বলেন, ‘‘সম্প্রতি পুলিশ এসে সতর্ক করে গিয়েছে। ঘুড়ির সুতোর নমুনাও নিয়ে গিয়েছে। পুলিশের ভয়ে কেউ আর চিনা মাঞ্জা রাখছেন না।’’ এক ব্যবসায়ী জানালেন, খড়দহের বিভিন্ন বাজারে অবশ্য দেদার বিকোচ্ছে চিনা মাঞ্জা। তাঁর কথায়, ‘‘৩৫০ টাকা দিলেই ৯০০ মিটার চিনা মাঞ্জা পাবেন।’’ চিনা মাঞ্জার খোঁজে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের একটি ঘুড়ির দোকানে আসা সৌরভ বিশ্বাস বললেন, ‘‘সাধারণ মাঞ্জা সুতো চিনা মাঞ্জার সঙ্গে এঁটে ওঠে না। তাই বাধ্য হয়েই চিনা মাঞ্জার খোঁজ করছি।’’
এ দিন খড়দহের টি এন বিশ্বাস রোড ও স্টেশন রোডের পাশাপাশি হাওড়ার বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেল, দেদার বিকোচ্ছে চিনা মাঞ্জা। কোনও লুকোচুরি নেই। ৩৫০-৪০০ টাকা দিলেই মিলছে ‘উড়ন্ত মরণফাঁদ’। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার অবশ্য দাবি, ‘‘চিনা মাঞ্জার বিরুদ্ধে মাঝে মাঝেই অভিযান হয়। কয়েক দিন আগেও বিভিন্ন বাজারে হানা দিয়েছিল পুলিশ। বিশ্বকর্মা পুজোর আগে এই অভিযান চলবে।’’ আর হাওড়ার পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর বললেন, ‘‘গত ১৫ দিন ধরেই শহরের বিভিন্ন বাজারে লাগাতার অভিযান চলছে। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আগামী দিনেও অভিযান চলবে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, চিনা মাঞ্জা বিক্রি করলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় বিক্রেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে তারা। তাঁকে নোটিস পাঠিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জিনিসপত্রও বাজেয়াপ্ত করা যায়। এমনকি, ওই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারও করতে পারে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy