Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

তদন্তে ধন্দেরই আবেশ, বিশেষ দল গড়লেন সিপি

একটি অপমৃত্যুর ময়না তদন্ত নিয়ে এমন নাস্তানাবুদ সম্ভবত আগে কখনও হয়নি কলকাতা পুলিশ! শনিবার সানি পার্কের আবাসনে মৃত্যু হয় আবেশ দাশগুপ্তের। রবিবার বিকেলে ওই কিশোরের দেহের ময়না তদন্ত হয়েছে তিন ঘণ্টা ধরে।

সানি পার্কে ফরেন্সিক টিম। ছবি: সুদীপ আচার্য

সানি পার্কে ফরেন্সিক টিম। ছবি: সুদীপ আচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩৩
Share: Save:

একটি অপমৃত্যুর ময়না তদন্ত নিয়ে এমন নাস্তানাবুদ সম্ভবত আগে কখনও হয়নি কলকাতা পুলিশ!

শনিবার সানি পার্কের আবাসনে মৃত্যু হয় আবেশ দাশগুপ্তের। রবিবার বিকেলে ওই কিশোরের দেহের ময়না তদন্ত হয়েছে তিন ঘণ্টা ধরে। তার পরে ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকেরা বালিগঞ্জ থানার পুলিশকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছেন, পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন। কিন্তু আটচল্লিশ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও জানা গেল না, ছেলেটির মৃত্যুর নেপথ্যে ঠিক কী রয়েছে!

এমতাবস্থায় রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য লালবাজার অনেকটাই নির্ভর করছে ফরেন্সিক-রিপোর্টের উপরে। তবে সেখানেও সংশয়। কারণ ঘটনার পাক্কা দু’দিন বাদে, সোমবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা অকুস্থলে গিয়েছেন বটে, কিন্তু দু’দিনের বৃষ্টির জেরে সেখানে তথ্য-প্রমাণ কতটা অক্ষত, তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।

এবং এ হেন প্রেক্ষাপটে পুলিশি তদন্তের ঢিলেমি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আবেশের মা। এ দিন লালবাজারে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে তিনি অভিযোগও জানিয়ে এসেছেন। তার পরে তড়িঘড়ি গোয়েন্দা-প্রধানের নেতৃত্বে বাছাই অফিসারদের নিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল গড়ে দিয়েছেন সিপি। সেই টিম এ দিন বিকেলে সানি পার্কের আবাসনটি ঘুরে এসেছে।

তাতেও অবশ্য বিশেষ অগ্রগতি নেই। লালবাজার জানাচ্ছে, পোস্ট মর্টেমের পাকা রিপোর্ট না-পেলে তদন্তের পরবর্তী ধাপে যাওয়া যাচ্ছে না। ‘‘মৃত্যুর কারণ বা আঘাতের ধরন সম্পর্কে মৌখিক ভাবে আমাদের কিছু জানানো হয়নি,’’ এ দিন বলেন গোয়েন্দা-প্রধান বিশাল গর্গ। কিন্তু ফরেন্সিক দল এত পরে গেল কেন, কিংবা সে দিন সানি পার্কের ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছেলে-মেয়েদের সকলকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করে ওঠা গেল না কেন, তার সন্তোষজনক পুলিশি ব্যাখ্যা মেলেনি।

ফলে ধন্দ বাড়ছে বই কমছে না। শনিবার সন্ধ্যায় সানি পার্কের ওই অ্যাপার্টমেন্টে লেখক অমিত চৌধুরীর মেয়ের জন্মদিন-পার্টি ছিল। পার্টির শেষে বেসমেন্টে পাওয়া যায় সতেরো বছরের আবেশের রক্তাক্ত দেহ। ওই রাতেই আবেশের মা রিমঝিম দাশগুপ্তের অভিযোগের ভিত্তিতে বালিগঞ্জ থানা খুনের মামলা রুজু করে। তখন পুলিশের একাংশের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ছিল, এটা খুন ছাড়া কিছু নয়। তবে রবিবার লালবাজার-সূত্রে দাবি করা হয়, এ স্রেফ দুর্ঘটনা, হোঁচট খেয়ে মদের ভাঙা বোতলের উপরে পড়ে আবেশ মারা গিয়েছে। এ দিন অবশ্য গোয়েন্দা-প্রধান বলেছেন, ‘‘খুন না দুর্ঘটনা, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর সময় আসেনি। পিএম রিপোর্ট পেলে হয়তো কিছু বলা সম্ভব।’’

ময়না তদন্তে পাওয়া প্রাথমিক তথ্যে কয়েকটি বিষয় ইতিমধ্যে পরিষ্কার। যেমন, অ্যাক্সিলারি আর্টারির ক্ষত থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণই (হেমারেজিক শক) মৃত্যু ডেকে এনেছে। এখন মূল বিচার্য— কী ভাবে আঘাত লাগল। সেটাই বলে দেবে, ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত খুন না অনিচ্ছাকৃত খুন, নাকি নিছক দুর্ঘটনা।

নানা মতামতও পাওয়া যাচ্ছে। যেমন এক অভিজ্ঞ সার্জনের কথায়, ‘‘ভাঙা কাচে পড়ে গিয়ে আর্টারি ও ভাবে ফুটো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।’’ ময়না তদন্তকারীদের কারও কারও অনুমান, ধাক্কাধাক্কি-হাতাহাতির দরুণ ছেলেটির বগলের তলায় ভাঙা বোতলের টুকরো ঢুকে গিয়ে থাকতে পারে। বস্তুত ডাক্তারদের একাংশের মতে, খুনের উদ্দেশ্যে আঘাত করা হয়নি। কারণ প্রাণে মারতে হলে যতটা জোরে আঘাত করা প্রয়োজন, এ ক্ষেত্রে ততটা গভীর চোট নেই। পুলিশের এক সূত্রেরও দাবি, বোতল বগলে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে আবেশ পড়ে গিয়েছিল। তাতেই ভাঙা কাচ বাঁ বগলের তলায় বিঁধে যায়।

লালবাজার যদিও মুখ খুলতে নারাজ। তারা শুধু জানিয়েছে, রক্তমাখা বোতলের টুকরো মিলেছে। আবেশের মোবাইল, ল্যাপটপ, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আবেশের পোশাক তো বটেই, তার এক বন্ধুর সে দিনের জামাকাপড়ও ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Abesh Dasgupta Sunny Park Rimjhim Dasgupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE