Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
ইমারতি দ্রব্য থেকে চাষের জমি, সিন্ডিকেটের কবল থেকে নিস্তার নেই কিছুরই। প্রশাসন কি আদৌ সচেষ্ট এই প্রবণতায় রাশ টানতে?
Soil Mafias

Syndicate: মাফিয়ার দাপটে লোপাট হচ্ছে মাটি, জন্ম নিচ্ছে ভেড়ি-সিন্ডিকেট

সরকারকে ফাঁকি দিয়ে জমি কিংবা নদী থেকে ইচ্ছেমতো মাটি কাটা যাবে না, প্রশাসনের তরফে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল।

রূপান্তর: এ ভাবেই মাটি কেটে বানিয়ে ফেলা হচ্ছে খাদ। যা পরে ভেড়িতে পরিণত করা হচ্ছে।

রূপান্তর: এ ভাবেই মাটি কেটে বানিয়ে ফেলা হচ্ছে খাদ। যা পরে ভেড়িতে পরিণত করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২২ ০৬:১৫
Share: Save:

মাটি টাকা! মাটিতেই টাকা!

দিন-রাত কেটে নিয়ে যাওয়ায় বিঘার পর বিঘা চাষের জমি এখন খাদে পরিণত হয়েছে। কখনও তা কাটা হয় চাষের জমি থেকে, কখনও আবার নদীর পাড় থেকে। কখনও মাটি-সিন্ডিকেটের দাপটে, কখনও আবার তাদের নিজস্ব গোলমালের জেরে ত্রস্ত কলকাতার উপকণ্ঠের বাসিন্দারা!

এমনই পরিস্থিতি বারাসতের ১ এবং ২ নম্বর ব্লক, দেগঙ্গা-সহ একাধিক অঞ্চলে। বারাসত-১ ব্লকের কোটরা, মোক্তারপুর, ফলদি বিল, ছোট জাগুলিয়া কিংবা বারাসত-২ ব্লকের ফলতি বেলিয়াঘাটা, শাসন, দাদপুর, ধোকরা, পাকদহ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় মাটি-সিন্ডিকেটের শিকড় গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত বলে খবর।

দিনকয়েক আগেই তেহাটা এলাকায় দু’পক্ষের গোলমালে রাতে বোমাবাজি হয়। যার পিছনে রাজনীতি ও মাটি কাটা-সহ বিভিন্ন কারবার দখলে রাখার সমীকরণের গল্প শোনা যায়। এলাকার খবর, ইচ্ছেমতো মাটি কাটার বিরোধিতা করায় সম্প্রতি সিন্ডিকেট বাহিনী দেগঙ্গা ব্লকের চাঁপাতলায় এক জনপ্রতিনিধিকে হুমকিও দেয়। তিনি কৃষিজমি কেটে খাদ তৈরির বিরোধিতা করেছিলেন। এলাকা সূত্রের খবর, শাসনের মিতপুকুরে জমির মালিকদের একাংশ সিন্ডিকেটের বিরোধিতা করায় তাঁদেরও চড়-থাপ্পড় মারা হয় এবং হুমকি দেওয়া হয়।

স্থানীয় মানুষ জানাচ্ছেন, শাসন, খড়িবাড়ি, দেগঙ্গা, রাজারহাট, ফলতি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় সাধারণ গ্রামবাসী ও দুষ্কৃতী-মাফিয়ারা একসঙ্গেই বসবাস করেন। তাই বোমা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র—সবই গ্রামে মজুত করা থাকে। মাঝেমধ্যেই সে সবের প্রয়োগ হয় এলাকায়। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পরে শাসন, দেগঙ্গা, দত্তপুকুর-সহ অনেক থানা এলাকা থেকেই বোমা বা আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।

কারা জড়িয়ে এই সিন্ডিকেটে?

অভিযোগ, শাসকদলের নেতাদের মদত রয়েছে সর্বত্রই। শাসনের সিন্ডিকেট স্থানীয় এবং গ্রামের বাইরের দুই গোষ্ঠীর নেতারা নিয়ন্ত্রণ করেন বলে খবর। কোটরা, ফলতির মতো বারাসত-১ ব্লকের এলাকাগুলিতে স্থানীয় নেতাদের লোকজনই সিন্ডিকেট চালান, এমনটা শোনা যায়। অভিযোগ, অনেক সময়ে পুলিশও সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দলেরই লোকজন মাটি-সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে, এমনটা না মানলেও মাটি কাটার কাজ যে এলাকায় চলছে, তা শীর্ষ নেতারাও স্বীকার করেছেন। বারাসত-১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতি আরসাদউদজামানের কথায়, ‘‘সরকারি নির্দেশে মাটি কাটা বন্ধও ছিল। কিন্তু ইটভাটার শ্রমিকেরা বেকার হয়ে যাচ্ছেন, এমন দাবি তুলে তাঁদের দিয়ে মাটির কারবারিরা রাস্তা অবরোধ করিয়ে দিলেন। এখন আবার মাটির লরি দেখা যাচ্ছে।’’

সরকারকে ফাঁকি দিয়ে জমি কিংবা নদী থেকে ইচ্ছেমতো মাটি কাটা যাবে না, প্রশাসনের তরফে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে বারাসত পুলিশ জেলার কর্তাদের দাবি, বেআইনি ভাবে মাটি কাটা বন্ধে পুলিশ তৎপর। দিনকয়েক আগে দত্তপুকুরে বিনা অনুমতিতে মাটি কাটার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তা বন্ধ করেছে। ওই সব এলাকায় এর পরে আসবে পঞ্চায়েত ভোট। সিন্ডিকেটের মাথাদের রেষারেষির লড়াই থামাতে প্রশাসন কত দূর সফল হবে, তা নিয়ে সন্দেহে স্থানীয় মানুষও।

চাষের জমি কাটতে হলে রয়্যালটি দিয়ে ভূমি রাজস্ব দফতরের অনুমতি নিতে হয়। কতটা গভীর পর্যন্ত মাটি কাটা যাবে, তারও অনুমতি লাগে। অভিযোগ, সেই সবের পরোয়া করে না মাটি-সিন্ডিকেট। জমি কিনে ইচ্ছেমতো মাটি কাটে তারা। অভিযোগ, সে সব জমিতে মাটি এমন বেখাপ্পা ভাবে কাটা হয় যে, আশপাশের জমিও ভাঙার উপক্রম হয়। তখন ওই জমির মালিকও বাধ্য হন জমি বিক্রি করতে। এলাকার খবর, এ ভাবে চাষের জমি কমে এলাকায় ভেড়ি বাড়ছে। সেই ভেড়ি নিয়েও চলছে সিন্ডিকেট।

কিন্তু কোথায় যায় এই সব মাটি?

এলাকার খবর, রাজারহাট, নিউ টাউন-সহ বারাসত সংলগ্ন বহু জায়গায় পৌঁছয় মাটি। কখনও তার ব্যবহার হয় নির্মাণস্থলের জমি উঁচু করতে, কখনও পুকুর ভরাট করতে, কখনও ইট তৈরি করতে। মাটি কাটতে হলে সিন্ডিকেটকে মোটা টাকা দিতে হয়। সিন্ডিকেট অনুমতি দিলে মাঠে নামে জেসিবি। আবার কতটা মাটি কাটা হচ্ছে, তার নজরদারির জন্যও সেখানে সিন্ডিকেটের লোক থাকেন।

হাড়োয়ার তৃণমূল বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলামের কথায়, ‘‘এখন সবাই নিজেকে তৃণমূল বলেন। যাঁদের চিনি, সেই দলীয় কর্মীরা কেউ মাটি-সিন্ডিকেটে জড়িত নন। যাঁরা বোমা ছোড়েন, তাঁরা সমাজবিরোধী, দলের নন। পুলিশকে শক্ত হতে বলা আছে।’’

বারাসত পুলিশ জেলার এক কর্তা বলছেন, ‘‘বর্তমানে যে সব মাটির গাড়ি চলছে, সেগুলি বিভিন্ন সংস্থার। অনুমতি নিয়ে, সরকারি নিয়ম মেনে তারা মাটি কাটছে। বেআইনি ভাবে মাটি কাটা বরদাস্ত হবে না।’’

তবে সংস্থার হয়ে যাঁরা মাটি কাটছেন, তাঁরা যে সিন্ডিকেটে যুক্ত নন, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে পুলিশ কিছু বলতে পারেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Soil Mafias Syndicate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy