মঞ্চে প্রথম সৌমিত্র-দেবশঙ্কর মুখোমুখি
আঠাশ বছর আগে যখন প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল ‘ফেরা’, মাটি-শিকড়বাকড়ের গন্ধ ছিল তাতে, টেরই পাওয়া যায়নি এ-নাটক রূপান্তর, এমনই বঙ্গজ করে তুলেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ‘ভাদু মা আসবেন বৈল্যে রেল বঁসাইছি দুয়ারে/ যখন খুশি তখন আসেন ভাবনা কীসের অন্তরে।’— এমন গান দিয়ে শুরু হত সে-নাটক। এত বছর পর যখন নতুন করে মঞ্চস্থ হচ্ছে, কী ভাবে তা শুরু, কেমন হবে তার গড়ন, বলতে চাইলেন না পৌলমী চট্টোপাধ্যায়। ‘নিজস্ব ব্যাকরণে সাজাচ্ছি নাটকটাকে। সম্পাদনা করেছি, আয়তন অনতিদীর্ঘ করেছি, কিন্তু বাবার রচনায় একটা শব্দও যোগ করিনি।’ এই প্রথম নাটক-নির্দেশনা সৌমিত্র-কন্যার, এর আগে নৃত্যনাট্য পরিচালনা করেছেন— ‘কালমৃগয়া’। ধ্রুপদী নৃত্য চর্চার সঙ্গে
অভিনয়ও করছেন বহুকাল, ‘কিন্তু নিজের স্বর শোনানোর একটা ক্রিয়েটিভ তাগিদ কাজ করছিল কোথাও, তাই... আর নাটকটাও অসাধারণ। মূল্যবোধ মানবিকতা সব নষ্ট হতে বসেছে টাকার চাবুকে। করাপশন আর ভায়োলেন্স হাত ধরাধরি করে চলে, ওয়ালস্ট্রিট আর এ-নাটকের বনপাহাড়ি যেন একাকার। একটা অঞ্চলকে ঘিরে গল্প অথচ আবেদনটা ইউনিভার্সাল।’ মেয়ের পরিচালনা নিয়ে মন্তব্যে নারাজ সৌমিত্র: ‘‘দর্শক বিচার করবেন। পরের প্রজন্মের কাছে বাহিত হচ্ছে আমার কাজ, এটুকুই আনন্দের। তিরিশ বছর আগে ফ্রিডরিখ ডুরেনমাট-এর ‘দ্য ভিজিট’ অবলম্বনে নাটকটা লিখেছিলাম। পিটার ব্রুকও করেছেন এই জার্মান নাটক। এতটাই ধ্রুপদী আর সর্বজনীন যে এতে আমাদের দেশের ভয়ংকর দারিদ্রের পাশাপাশি মনুষ্যত্বের অধঃপতনটাও ধরা পড়ে। রিয়েলিটি-টা সারফেস-এ, আসলে অ্যালিগরি।’’ অঞ্চলপ্রধান-এর চরিত্রে এ বার সৌমিত্র। মাধবী মুখোপাধ্যায় অভিনীত প্রতিমা সিংহ-র চরিত্রে পৌলমী। সৌমিত্র অভিনীত কাশীনাথ দত্ত-র চরিত্রে দেবশঙ্কর হালদার— ‘এমন একটা চরিত্র গোটা নাটকে বহন করার মতো অভিনেতা দেবশঙ্কর ছাড়া আর কে-ই বা আছে’, বললেন সৌমিত্র। আর দেবশঙ্কর বললেন, ‘সৌমিত্রদার সঙ্গে কাজ করব, কত দিনের আকাঙ্ক্ষা। এটা একই সঙ্গে অদ্ভুত আনন্দের, এবং গর্বেরও। কাশীনাথ চরিত্রটাও অসম্ভব বর্ণময়, ভালমন্দে মেশানো অনেকগুলো সেল্ফ তার মধ্যে। ঘাম-ঘুম ছুটে যায়, এমন গায়েগতরে অভিনয়, এমন চ্যালেঞ্জিং।’ সৌমিত্র-দেবশঙ্কর এই প্রথম মুখোমুখি মঞ্চে। বিশ্বরূপা-য় অভিনীত হত বলে উত্তর কলকাতায় প্রথম অভিনয়, গিরিশ মঞ্চে ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টা, মুখোমুখি-র প্রযোজনা, জানালেন কর্ণধার বিলু দত্ত। পরের অভিনয়, অ্যাকাডেমিতে ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টা। রিহার্সালে দেবশঙ্কর সৌমিত্র পৌলমী। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য
কালীঘাট পট
উনিশ শতকে শুরু হয় কালীঘাটের পট চিত্রণের কাজ। বলিষ্ঠ রেখা আর উজ্জ্বল রঙ— এই দুই বিষয় কালীঘাট পটকে দিয়েছিল বিশ্বজনীন পরিচিতি। স্থানীয় মোটা কাগজ আর হাতে তৈরি রঙ— এমত উপাদানেই গড়ে উঠত পটচিত্র। কালীঘাটে আগত তীর্থযাত্রীরা স্মারক হিসেবে সংগ্রহ করতেন। ক্রমে সাহেবদের নজরে পড়ে এটি। শোনা যায় মাতিস এবং ব্রাঁকুসি দুজনেই নাকি কালীঘাট পটের ভক্ত এবং সংগ্রাহক ছিলেন। উনিশ শতকেরই দ্বিতীয় ভাগে এসে গেল সস্তার লিথো পদ্ধতি। ফলে একছত্র আসন থেকে ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকে পট পরম্পরা। আজ বিকেল পাঁচটায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের পোর্ট্রেট গ্যালারিতে আয়োজিত হয়েছে আলোচনা কালীঘাট পেন্টিংস: সাম নিউ ইনসাইটস শীর্ষকে। বিড়লা অ্যাকাডেমি-র নির্দেশক তারণকুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে দুষ্প্রাপ্য চিত্র (সঙ্গে তারই একটি) সহ বলবেন অঞ্জন সেন।
গীতবিতান
রবিবারের শান্ত দুপুরে রেডিয়োতে বাজত হেমন্ত, মান্না, সন্ধ্যা, শ্যামল, মানবেন্দ্র, ধনঞ্জয়, প্রতিমা, আরতি, আলপনা, জটিলেশ্বর, পঙ্কজকুমার বা অখিলবন্ধুর গান। বাঙালি বুঁদ হয়ে থাকত সে সব গানে। যার কথা ও সুর আজও ক্ষণিকের জন্য নিয়ে যায় ফেলে আসা সে সময়ে। এমনই ৭৮১টি বাংলা আধুনিক গানকে সংকলিত করে শিশির চক্রবর্তী তৈরি করেছেন আধুনিক গানের গীতবিতান এ শুধু গানের দিন (পত্রভারতী)। ভূমিকায় স্বপন সোম বাংলা গানের ইতিহাস ও চর্চার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে লিখেছেন। বর্ণানুক্রমিক ভাবে শিল্পীদের গান বিন্যস্ত করা হয়েছে। প্রথমেই অখিলবন্ধু ঘোষের গান। রয়েছে ‘মহিষাসুরমর্দিনীর গীতি-আলেখ্যর অংশবিশেষ। সম্প্রতি স্টারমার্কে প্রকাশিত হল বইটি।
শিল্পকথা
ভাস্কর প্রদোষ দাশগুপ্তর কাছে শিক্ষা। ৮৩ বছরেও স্বকীয়তায় উজ্জ্বল এই শিল্পী ভাস্কর্য সৃষ্টিতে অক্লান্ত। উমা সিদ্ধান্তর দশটি অদেখা শিল্পকর্ম, সঙ্গে সাম্প্রতিক প্রাত্যহিক জীবনের উপর বিবেক বর্মার তোলা বেশ কিছু আলোকচিত্র, কিংশুক দাস চৌধুরীর চিত্রকলা ও দীপংকর বসুর আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনী ‘এক্সপ্রেশন’, গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শশালায়, আজ শেষ। এ দিকে ভাস্কর্যের উপাদান হিসেবে সেরামিককে অন্য মাত্রা দিয়েছেন অজিত চক্রবর্তী, মীরা মুখোপাধ্যায়, রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, প্রভাস সেন প্রমুখ। এখন অনেক শিল্পীই এই মাধ্যমে কাজ করেন। আর স্বচ্ছ জলরঙের কাজে শিল্পীদের মুন্সিয়ানার স্বীকৃতি তো বিশ্বজুড়ে। এই দুই বিষয়ে এ কালের প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের কাজ নিয়ে হ্যারিংটন স্ট্রিট আর্ট গ্যালারিতে আয়োজিত হয়েছে প্রদর্শনী ‘মেলাঁজ টু’। চলবে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ১২-৭ টা প্রতি দিন, রবি ও সরকারি ছুটি বাদে। সরকারি আর্ট কলেজের শিক্ষক ভাস্কর গোপীনাথ রায় প্রকৃতির সূক্ষ্ম অনুভূতির বিষয়গুলি নিয়েই কাজ করেন। চিত্রকূট আর্ট গ্যালারিতে স্টোন অ্যান্ড ওয়াটার শীর্ষক ভাস্কর্যের একটি একক প্রদর্শনী দেখা যাবে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ৩-৮ টা প্রতিদিন।
বিজনকে মনে রেখে
৩ এপ্রিল ২০০১। চিচুঁড়গেড়িয়া-র সিলিকোসিস আক্রান্তরা দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর ক্ষতিপূরণ পেলেন। অসংগঠিত ক্ষেত্রে পেশাগত ব্যাধির শিকার কোনও শ্রমিকের সেই প্রথম ক্ষতিপূরণ পাওয়া। এই জয়ের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বিজন ষড়ঙ্গী-র। ঝাড়গ্রাম কোয়ার্ক সায়েন্স সেন্টারের এই মানুষটি এমন বহু লড়াইয়ে ছিলেন অক্লান্ত যোদ্ধা। হঠাৎই চলে যেতে হয় তাঁকে, সে মৃত্যু নিয়েও সংশয় বড় কম নেই। ২০ সেপ্টেম্বর ৩টেয় মৌলালি যুবকেন্দ্রে ২৬ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে নাগরিক মঞ্চ আয়োজন করেছে বিজন ষড়ঙ্গী স্মারক বক্তৃতা। তাঁকে নিয়ে বলবেন বিকাশ ষড়ঙ্গী, ‘চিচুঁড়গেড়িয়া থেকে মিনাখাঁ’ পেশাগত রোগের প্রসঙ্গে আলোচনায় কুণাল দত্ত জয়ন্ত বসু। সঞ্চালনায় মিলন দত্ত। দেখানো হবে সুপ্রিয় সেনের ‘ওয়েট আনটিল ডেথ’ তথ্যচিত্রটিও।
লীলাময়ী
দেশবন্ধু কলেজ ফর গার্লস-এর ষাট বছর উদ্যাপনের অঙ্গ হিসেবে বাংলা বিভাগের উদ্যোগে (টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহায়তায়) ৪ সেপ্টেম্বর ছিল লীলা মজুমদারকে নিয়ে আলোচনা। ছিলেন জয়া মিত্র, গোপা দত্ত ভৌমিক, সুমিতা চক্রবর্তী প্রমুখ। কেউ খেয়াল করিয়ে দিলেন, দেশজোড়া দুঃসময়ে তাঁর না-খাওয়া মানুষের গল্প ছিল আসলে এক রাজনৈতিক প্রকল্প। মীরাতুন নাহার দেখালেন কী দূরদর্শিতা ও বাস্তববুদ্ধিতে লীলা অত দিন আগে নারী-পরিচালিত ক্যান্টিনের পরামর্শ দিয়েছেন। গৌতম হালদার লীলার নাটক নিয়ে বললেন ও বসে বসেই অনেকটা অভিনয় করে দেখালেন। দিনের শেষে মনে হচ্ছিল, হয়তো কোনও কোনও নবীন শ্রোতা কিছু ক্ষণের জন্য ফেসবুক অফ করে একটা লীলা মজুমদারের বই নিয়ে বসতে উৎসাহী হবেন!
অলকানন্দা
ছোটবেলায় নাচ শেখা শুরু সি এল টি তে। পরে সংযুক্তা পাণিগ্রাহীর কাছে। সেই নাচকে অবলম্বন করে সংশোধনাগারের বাসিন্দাদের নিয়ে তাঁর ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ সাড়া ফেলেছিল। প্রথম মঞ্চ উপস্থাপন থেকে শুরু করে নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়ের নৃত্যজীবনের ষাটটি বছর পেরিয়ে গেল। ২০ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রসদনে সন্ধে সাড়ে পাঁচটায় শিল্পীকে সংবর্ধনা জানাবে বাচিক শিল্প সংস্থা ‘আন্তরিক’। এক সময় আবৃত্তিকার প্রদীপ ঘোষ এই সংস্থায় কবিতা শেখানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন মধুমিতা বসুকে। সে দিন পারমিতা চক্রবর্তীর পরিচালনায় সংস্থার ছাত্রছাত্রীরা উপস্থাপন করবে ‘তাসের দেশ’ অবলম্বনে ‘এলেম নতুন দেশে’। অন্য দিকে ১৫ অক্টোবর সন্ধেয় রবীন্দ্রসদনে বিক্রম ঘোষ অ্যাকাডেমি অব পারফর্মিং আর্টস-এর চারটি কেন্দ্রের অ্যানুয়াল কনসার্ট। চারশোর বেশি শিল্পী মঞ্চে উপস্থাপন করবেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, সুফি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, তবলা, সেতার, পাশ্চাত্য ড্রাম, গিটার, নাচ প্রভৃতি।
তিতাস
সম্প্রতি ত্রিশ বছর পূর্ণ হওয়ায় নিজেদের সল্টলেকের ভবনে এক মিলনোৎসবের আয়োজন করেছিল ‘অন্য থিয়েটার’। ছিলেন তাঁরা, দলের কর্ণধার বিভাস চক্রবর্তীর কথায় যাঁরা ‘অন্য থিয়েটার’-এর ভিত গড়ার কাজ করেছেন। শোনা গেল ‘অন্য থিয়েটার’-এর আগামী প্রযোজনার কথা। অদ্বৈত মল্লবর্মণের বিখ্যাত উপন্যাসের নব-নাট্যায়ন ‘তিতাস’ মঞ্চস্থ হতে চলেছে প্রবীর গুহ-র নির্দেশনায়। প্রথম অভিনয় ১৬ সেপ্টেম্বর, গিরিশ মঞ্চে।
নতুন উদ্যোগ
বাঙালির মনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে স্থায়ী বসবাস শেক্সপিয়রেরও। হেলো হেরিটেজ-এর উদ্যোগে আড্ডা, অভিনয়, আবৃত্তি ও পাঠের মাধ্যমে দুই কবির সৃষ্টিময় প্রকাশকে উপস্থাপন করবেন অনসূয়া মজুমদার ও বিপ্লব দাশগুপ্ত। বিপ্লব বিষয়টির মূল ভাবনা ও প্রয়োগে। নিউ টাউনের নজরুলতীর্থের মুক্তমঞ্চে ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায়। অন্য দিকে বাংলা নাটকের কৃতী তরুণ কৌশিক করের নির্দেশনায় কলকাতা রঙ্গিলা নাট্যগোষ্ঠী মঞ্চস্থ করেছে ‘মা এক নির্ভীক সৈনিক’ ও ‘নাটক ফাটক’। প্রথমটি দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-র আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ভারত রঙ্গ মহোৎসব-এ ইতিমধ্যেই প্রদর্শিত। এ-দু’টি ছাড়াও পূর্ব পশ্চিম প্রযোজিত তারাশঙ্করের ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’রও নির্দেশক কৌশিক। এই তিনটি নাটক নিয়ে তিন দিনের নাট্যোৎসব ১৬-১৮ সেপ্টেম্বর, যথাক্রমে গিরিশ মঞ্চ ও অ্যাকাডেমিতে।
মাতৃরূপেণ
আকাশ এক্ষণে মটরশুঁটি কিংবা অপরাজিতা ফুলের মতো নীল। তাহাতে সাদা পালকের মতো মেঘ ভাসমান। কুমোরটুলি পরিক্রমার ফাঁকে আমরা দক্ষিণ কলিকাতার মূর্তি গড়িবার কেন্দ্র পটুয়াপাড়ায় উপস্থিত। পল্লিটি ছোট, মাত্রই কয়েক ঘর শিল্পীর বাস। পল্লির পাশ দিয়া যে ক্ষীণতোয়া জলধারা বহিয়া যায় তাহা সাধারণ্যে ‘টালির নালা’ নামেই পরিচিত, কিন্তু আদতে ইহাই আদি গঙ্গা, যে পথে চৈতন্য মহাপ্রভু গিয়াছিলেন, আরও দূর অতীতে চাঁদ বণিকও সমুদ্রযাত্রা করিয়াছিলেন এই স্রোত বাহিয়া। আজি সেই স্রোতোধারা রুদ্ধগতি হইলেও জোয়ারে বালি-ইট-মাটি আসিয়া পৌঁছায়। এই কালে পটুয়াপাড়া ব্যস্ত সিদ্ধিদাতা গণেশ ও বিশ্বকর্মাকে লইয়া। মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগে-পরে দুইটি পূজার নির্ঘণ্ট। পাশাপাশি দুই দেবতা সাজিয়া উঠিতেছেন, ইহা কম কথা নহে। তা বলিয়া মায়ের যত্নের অভাব নাই, যে সব মাতৃমূর্তি নির্মিত হইয়াছে তাহাদের প্রতি শিল্পীদের অবিচল দৃষ্টি। প্রয়োজনে সুবিশাল প্লাস্টিকের মোড়কে মূর্তি আবৃত রাখা হইয়াছে। ব্লোল্যাম্প জ্বালাইয়া কাজ চলিতেছে। আশ্বিন যে সমাগত। খড়-মাটির কাজের শেষে আবার মাটির মসৃণ প্রলেপ। তাহার পর সাদা রঙের সূচনা। তাহাও সম্পন্ন হইলে অন্যান্য বর্ণলেপন। পুরাদমে কর্মযজ্ঞ চলিতেছে।
জন্মদিনে
তার পর, নামল বৃষ্টি! বুকের মধ্যে। জানলার ধার থেকে সরে এসে ছোটমাসি বলল, নাহ্হ্, আজ আর যাওয়া অসম্ভব। তার চেয়ে গানই করি। একমাত্র শ্রোতা আমি। হারমোনিয়ামটা টেনে ছোটমাসি গান শুরু করল। মেঘের পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে...।’’ পরিচয় (প্রকাশ ভবন) বইয়ে ‘বৃষ্টির দুপুর, গান ধরল ছোটমাসি’ শিরোনামে সুচিত্রা মিত্রকে স্মরণ করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ১৯২৪-এ সুচিত্রার জন্ম বীরভূমে। তাঁর গান সম্পর্কে সৌমিত্রর উপলব্ধি, ‘‘নিজের বাইরে বেরিয়ে এসে নিজের গানকে দেখত ছোটমাসি। এই বিরল ক্ষমতাটা সকলের থাকে না।’’ তিরিশ বছর তাঁর কাছে গান শিখেছেন মনীষা বসু। তাঁর কথায়, ‘‘জন্মদিনে সুচিত্রাদির ছিল অবারিত দ্বার। কোনও উপহার নয়, শুধু জুঁই আর চাঁপা ফুল।’’ ২০১১-য় শিল্পী চলে যাওয়ার পর এ বার পাঁচ বছর। ১৯ সেপ্টেম্বর শিল্পীর জন্মদিনে সন্ধে ছ’টায় আইসিসিআর-এ স্বরচিত কবিতা পাঠে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও একক রবীন্দ্রসঙ্গীতে মনীষা বসু শ্রদ্ধা জানাবেন। সঙ্গীত অনুষঙ্গে কথায়-কবিতায় রত্না মিত্র, সুবীর মিত্র ও দেবাশিস বসু। আয়োজনে ‘রবি-ভৈরবী’। অন্য দিকে এই উপলক্ষে সারেগামা ও রবিতীর্থ প্রাক্তনীর উদ্যোগে অনুষ্ঠান রবীন্দ্রসদনে, ১৯ তারিখেই সন্ধ্যা সাড়ে ছটায়। প্রাক্তনীদের সঙ্গে থাকবেন স্বপ্না ঘোষাল, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। পাঠে প্রণতি ঠাকুর ও শঙ্কর রায়চৌধুরী। সম্মাননা জানানো হবে সুমিত্রা সেন পূর্বা দাম অরুণকুমার বসুকে।
আন্তোনিওনি
শেষ কলকাতায় এসেছিলেন ১৯৯৪-এ। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রোৎসব ইফি-তে তাঁর ছবির রেট্রোস্পেক্টিভ চলছিল। এমতাবস্থায় তাজ বেঙ্গলে সঙ্গের ছবিটি তোলেন নিমাই ঘোষ। মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিয়নি (১৯১২-২০০৭)। ইল গ্রিদো, লাভেন্তুরা, লা নোত্তে, লেক্লিসে, রেড ডেসার্ট, ব্লোআপ, জ্যাব্রিস্কি পয়েন্ট, দ্য প্যাসেঞ্জার ইত্যাদি ছবির স্রষ্টা ইতালির এই প্রবাদপ্রতিম পরিচালকের গুণমুগ্ধ ছিলেন সত্যজিৎ রায়। তাঁর প্রয়াণের পর কলকাতায় আগত আন্তোনিয়নির অজস্র ছবি তুলেছিলেন সত্যজিতেরই ফোটো-বায়োগ্রাফার নিমাই ঘোষ। শারীরিক অশক্ততার কারণে হুইলচেয়ারে বসেও পরিচালনার কাজ করেছেন আন্তোনিয়নি, শেষ পর্বে শুরু করেন ছবি আঁকা। ২০০৬-এ আন্তোনিয়নির স্ত্রী এনরিকা আমন্ত্রণ জানান নিমাইবাবুকে, রোমে, তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে ছবির প্রদর্শনীতে। ২৯ সেপ্টেম্বর, আন্তোনিয়োনির ৯৪তম জন্মদিনে তাঁর চিত্রপ্রদর্শনীর প্রচুর ছবি তোলেন নিমাইবাবু। চিত্রকর আন্তোনিয়নি ক্যানভাসে রঙ-তুলি নিয়ে কাজ করছেন, এমন দুর্লভ স্থিরচিত্র একমাত্র নিমাইবাবুর ঝুলিতেই। তেমন উনিশটি ছবি নিয়ে প্রদর্শনী করছে ইতালির কনস্যুলেট। হ্যারিংটন স্ট্রিট আর্ট সেন্টারে, তাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে। ১৯ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনে অপর্ণা সেন। দর্শকের জন্য ২০-২৬ সেপ্টেম্বর, প্রতিদিন ১২-৭টা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy