—প্রতীকী চিত্র।
রক্তের কার্ড থাকলেও বলা হবে, ‘‘দাতা নিয়ে আসুন’’। রোগীর অবস্থা যতই সঙ্কটজনক হোক, জানিয়ে দেওয়া হবে, নতুন দাতা না আনলে রক্ত দেওয়া যাবে না। মাঝখান থেকে এই টানাপড়েনে দুর্ভোগ বাড়ছে রোগীর পরিজনদের। যতক্ষণে তাঁরা রক্ত জোগাড় করতে পারছেন, ততক্ষণে হয়তো রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের এ হেন পরিস্থিতির কারণে বেশ কিছু পুজো কমিটি এ বার রক্তদান শিবির করতে বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের দিকে ঝুঁকছে।
পুজোকর্তারা স্পষ্টই জানাচ্ছেন, শিবিরে রক্ত দিয়ে পাওয়া সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের কার্ড দেখিয়েও যদি বিনা শর্তে রক্ত না মেলে, তা হলে শিবিরে কেউ রক্ত দেবেন কেন? সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, তাতে আসন্ন উৎসবের তোড়জোড়ের মধ্যেও রক্ত না পাওয়ার চিন্তাই বেশি করে গ্রাস করছে ভুক্তভোগীদের পরিবারকে। এক পুজোকর্তার কথায়, ‘‘অনেকেই ধরে নিচ্ছেন, রক্তের প্রয়োজন হলে যদি সব সময়েই দাতা নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়, তা হলে এক বারে দরকারের সময়েই রক্ত দেওয়া ভাল!’’
রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের দাবি, এতেই রক্তের আকাল বাড়ছে। মার খাচ্ছে রক্তদান শিবির। কোথাও কোথাও শিবির হলেও পর্যাপ্ত দাতা মিলছে না। তাঁদের আশঙ্কা, উৎসবের মরসুমের পরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হতে পারে। কিন্তু, প্রশাসনের তেমন হেলদোল নেই। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের সাহায্যে শিবির করার জন্য পুজো কমিটিগুলিকে উৎসাহ দেওয়ার মতো উদাহরণও চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ। বরং, অনুদান ঘোষণার পরে পুজো কমিটির পাশে থাকার ব্যানার দেখা যায়। কিন্তু পুজোর দিনের মধ্যে পুজো কমিটিগুলিকে অন্তত এক দিন রক্তদান শিবির করার অনুরোধ জানানোর বার্তা চোখে পড়ে না।
এই রাজ্যে ৮৭টি সরকারি, ৪৫টি বেসরকারি এবং ১৬টি কেন্দ্রীয় সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, সব মিলিয়ে রাজ্যে দৈনিক চার হাজার ইউনিট রক্ত দরকার হয়। অর্থাৎ, বছরে প্রায় সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ ইউনিট। কিন্তু গত বছরই সরকারি হিসাব অনুযায়ী মাত্র ৯ লক্ষ ইউনিট রক্ত জোগাড় করা গিয়েছিল। রক্তদান আন্দোলনের কর্মী তথা রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য অচিন্ত্য লাহা বলেন, ‘‘বেশির ভাগ পুজো কমিটিই বলছে, শিবির করে লাভ কী? সেই তো রক্ত নিতে গেলে দাতা আনার কথা বলা হবে। তাঁদের অনেকেরই ধারণা, খুব সঙ্কট না থাকলে বেসরকারি ক্ষেত্রে এমন করা হচ্ছে না। অন্তত কার্ড দেখালে এক ইউনিট রক্ত মিলছে। তাই অনেকেই বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের দিকে ঝুঁকছেন।’’
অচিন্ত্য জানান, কলেজ স্ট্রিটের বহু পুরনো একটি পুজো কমিটি একই মত দিয়েছিল। কোনও মতে তাঁদের বুঝিয়ে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সহায়তায় শিবির করানো হচ্ছে। একই অবস্থা বালিগঞ্জ, কসবা এবং আলিপুরের চারটি নামী পুজো কমিটির ক্ষেত্রে। অক্টোবরের ১০ তারিখের মধ্যে সেখানে শিবির হচ্ছে বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের সহযোগিতায়। উত্তর কলকাতা এবং ভিআইপি রোডের দু’টি বড় পুজোও একই পথে হাঁটছে। এমনই একটি পুজোর এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘প্রশাসনিক সাহায্য পেতে সমস্যা হতে পারে ভেবে অনেকেই প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। বাস্তবে অধিকাংশ জায়গাতেই বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের সাহায্যে শিবির হচ্ছে।’’
রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ডি আশিস বলেন, ‘‘আরও একটি কারণে বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের দিকে ঝুঁকছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে বলা হচ্ছে, রক্ত নেই। রোগীর পরিবার অন্য সরকারি হাসপাতাল বা সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে গেলে বলা হচ্ছে, যেখানে রোগী ভর্তি, সেখানকার ব্লাড ব্যাঙ্ক যে রক্ত না থাকার কথা জানিয়েছে, তার প্রমাণ কী? রিকুইজ়িশনে রেফার লিখিয়ে আনুন। এই দৌড়াদৌড়ি করতেই কেটে যাচ্ছে অনেকটা সময়। কিন্তু বেসরকারি কার্ড থাকলে দ্রুত রক্ত নিয়ে সরকারি হাসপাতালে দিয়ে দেওয়া যাচ্ছে।’’
এই পরিস্থিতির বদল হবে কবে? রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের ডেপুটি ডিরেক্টর বরুণ সাঁতরার উত্তর, ‘‘রক্তদান আন্দোলনের কর্মীরা পুজোর উদ্যোক্তাদের শিবির করার জন্য বোঝাচ্ছেন। পরিস্থিতি এখনও অত খারাপ নয়। তবে নতুন কী পদক্ষেপ করলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে, সেটা ভাবা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy