‘ব্রিটিশ নাগরিক’ পরিচয় দিয়ে ফেসবুকে আলাপ। দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধুত্ব। এর পরে সেই ‘ব্রিটিশ নাগরিক’ পাঁচ নম্বর সেক্টরে কর্মরত এক মহিলাকে উপহার দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। উপহারের ছবিও পাঠায় তরুণীকে। প্রায় দশ হাজার ব্রিটিশ ডলারের উপহার সামগ্রী! কিন্তু সেই সামগ্রীর জন্য ওই মহিলা ৩ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা দিয়েও পেলেন না কোনও উপহার। ফেসবুকের সেই ‘ব্রিটিশ বন্ধু’ও বেপাত্তা হয়ে গেল!
অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে বিধাননগর সাইবার থানার পুলিশ। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডের ফরিদাবাদ থেকে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে বিনয় কুমার গিরি নামে এক যুবককে। রবিবার বিধাননগর আদালতে তোলা হলে ধৃতকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিধাননগরের গোয়েন্দা-প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘জেরায় ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলেছে। বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ই-মেল ফ্রিজ করা হয়েছে। একটি চক্রের কাজ বলেই মনে করা হচ্ছে।’’
পুলিশ জানায়, ‘স্কট ডি টনি লন্ডন’ নামে ফেসবুকে একটি ভুয়ো প্রোফাইল খোলা হয়। সেই প্রোফাইল থেকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব পান পাঁচ নম্বর সেক্টরে কর্মরত এক মহিলা। সেই প্রস্তাব তিনি গ্রহণও করেন। এর পরে দীর্ঘ দিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা হয়। তাতেই ওই মহিলার বিশ্বাস অর্জন করেন ওই নকল ব্রিটিশ নাগরিক টনি।
এর পরে সেই টনি উপহার দিতে চান ওই মহিলাকে। সূত্রের খবর সেই মহিলাও উপহার নিতে উদগ্রীব ছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
কী উপহার? ওই মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, উপহার হিসেবে ২টি গয়না, ব্যাগ, পোশাক, পারফিউম এবং একটি খামের মধ্যে ১৮ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড দেবে বলেছিল সেই টনি।
এর কিছু দিন পরে দিল্লি এয়ারপোর্টের এক আধিকারিকের পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ওই মহিলাকে ফোন করেন। বলা হয়, তাঁর উপহার দিল্লি এয়ারপোর্টে এসে গিয়েছে। উপহার নিতে গেলে তাঁকে ১৫ হাজার ২৯৯ টাকা দিতে হবে। তার জন্য একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বরও দেওয়া হয়। সেই অ্যাকাউন্টে টাকাও পাঠিয়ে দেন মহিলা। পরে আবার মহিলাকে ফোন করা হয়। এ বার এক মহিলা ফোন করেন। বলা হয়, ব্রিটিশ পাউন্ড নিতে গেলে ৮৮ হাজার টাকা দিতে হবে। এর এক দিন পরে আবার এক ব্যক্তি ওই মহিলাকে ফোন করে বলে, সব ‘ক্লিয়ার’ হয়ে গিয়েছে। শুধু ইনকাম ট্যাক্সের ক্লিয়ারেন্স দরকার। সে জন্য আরও ৮৮ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। মহিলা সে টাকাও পাঠান।
সব মিলিয়ে তিনি ৩ লক্ষ ২৮ হাজার ২৯৯ টাকা খরচ করেও কোনও উপহারই পাননি। তিনি বিধাননগর ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই ঘটনার তদন্তভার নেয় সাইবার শাখা। বিনয়কে তিন দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে বিধাননগরে নিয়ে আসেন তদন্তকারীরা।
ফেসবুকে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে পাঁচ নম্বর সেক্টরে কর্মরত ওই মহিলাই শুধু নন, অনেকেই এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন। বিধাননগরের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বার বার সচেতন করার চেষ্টা চলছে। রকমারি প্রচার থেকে সতর্কতামূলক পুস্তিকাও ছড়ানো হয়েছে। তাতেও এক অংশের যুবক-যুবতী প্রলোভনের ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy