গনগনে আঁচ মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে অন্তত মিনিট তিরিশ। তবে বাসের দেখা মিলবে। যা-ও বা মিলবে, তাতে গাদাগাদি ভিড়। কোনও রকমে তাতে শরীর সেঁধিয়ে দিয়ে গন্তব্যের পথে রওনা দেওয়া।
দিন দশেক ধরে কলকাতার নিত্যযাত্রীদের এটাই রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৌজন্যে অবশ্যই রাস্তায় বাসের আকাল আর সঙ্গে অসহ্য গরম।
বেসরকারি মালিক সংগঠনগুলির এবং সরকারি নিগমগুলির হিসেব অনুযায়ী, প্রতি দিন কলকাতায় বাস-মিনিবাস চলে গড়ে ১৬ হাজার। সে জায়গায় ভোটের এই ক’দিন গাড়ি চলছে সাকুল্যে পাঁচ হাজার। স্বভাবতই নিত্যযাত্রীদের হয়রানির শেষ থাকছে না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে বাস মিলছে। যা-ও বা মিলছে, তাতে ঠাসা ভিড়।
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের মতে, এ বারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী সংখ্যায় অনেক বেশি। যার ঠেলায় কমিশনের বাসের প্রয়োজনও বেশি মাত্রায় হয়েছে। সে কারণে, অনেক বাস তুলে নিয়েছে কমিশন। যার জেরে এমন দুর্ভোগ। আরও একটি ব্যাখ্যা দিচ্ছেন পরিবহণ-কর্তারা। এর কর্তার মতে, ‘‘এ বারে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পৃথক দিনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। যেখানে অতীতে সাধারণত এই তিন জেলায় একসঙ্গে ভোট হত। তাতে বাসের প্রয়োজন অল্প দিনের জন্য হত। এ বারে
তা অনেক বেশি দিন ধরে হচ্ছে। তাতে দুর্ভোগটা আরও বেশি করে চোখে পড়ছে।’’
কলকাতা ও শহরতলিতে ভোট শুরু হয়েছে ২১ এপ্রিল থেকে। তার কয়েকদিন আগে থেকেই সরকারি পরিবহণ নিগম এবং বেসরকারি বাসগুলিকে নির্বাচনের কাজে নিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশ। সিটিসি-র ২৭৫টির মধ্যে থেকে ৫০টি এবং সিএসটিসি-র ৬৬০ থেকে ৬৫টি বাস নির্বাচনের কাজে লাগিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। অন্য দিকে বেসরকারি বাসের ক্ষেত্রেও রাস্তা থেকে বাস তুলে নেওয়া হয়েছে বিস্তর। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস এর তরফে জানানো হয়েছে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তাদের মোট ৭৫০০ বাস চলে। তার মধ্যে ছ’হাজার বাস রাস্তায় নেই। কলকাতা, হাওড়া এবং দুই ২৪ পরগনায় মিনিবাস চলে প্রায় তিন হাজারটি। রাস্তায় রয়েছে মাত্র হাজার। একই অবস্থা বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটস-এরও। সাড়ে চার হাজার বাসের মধ্যে রাস্তায় রয়েছে মাত্র দেড় হাজার। তবে শনিবার কলকাতা ও শহরতলির ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তি চলবে বলেই মত বাস মালিক ও চালকদের। বেশ কিছু বাস ফেরত আসা শুরু হয়েছে। তবে তা এখনও চালানো শুরু হয়নি। আগামী মে মাসের শুরুতেই পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশ্বাস বাস মালিক ও চালক সংগঠনের।
কমিশনের এক কর্তা অবশ্য এর দায় চাপিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের উপরেই। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা প্রশাসনকে বলেছি, কত বাস প্রয়োজন। রাজ্য প্রশাসন কী ভাবে সেই বাসের ব্যবস্থা করেছেন, সে সম্পর্কে আমরা কিছু বলতে পারব না।’’ পরিবহণ দফতরের কর্তাদের কথায়, ‘‘আগে রাজ্যে বাসের পরিমাণ অনেক ছিল। তাই কমিশন বাস তুলে নিলে অসুবিধে খানিকটা হত। অত চোখে পড়ত না।’’
তবে যাত্রীদের ভোগান্তির কারণ শুধুই বাস নয়, সঙ্গে রয়েছে ট্যাক্সি ও অটো। ট্যাক্সিচালক ও মালিকদের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ফাঁপরে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা। সম্প্রতি ট্যাক্সিচালকদের দু’টি সংগঠনের তরফ থেকে পরিবহণ দফতরে আবেদন করা হয়েছে গরমের কারণে দুপুরে চালকেরা ট্যাক্সি চালাতে না চাইলে যেন তাঁদের বাধ্য না করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী কোনও চালক যেতে না চাইলে তা যাত্রী প্রত্যাখ্যানের সামিল। সেই দায় থেকে মুক্তির জন্যই দফতরে আবেদন করেছেন ট্যাক্সিচালকেরা।
কিন্তু এর প্রেক্ষিতে এক যাত্রীর প্রশ্ন, ‘‘ভোটের জন্যে বাস তুলে নেওয়া হবে, গরমের জন্যে ট্যাক্সি চালানোয় সমস্যা। তা হলে রাস্তার বার হওয়া মানুষদের কী হবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy