কলকাতা পুরসভায় নয়া নিয়ম: হাজিরা রিপোর্টে গোলমাল এলে সরাসরি বেতন প্রক্রিয়া বন্ধ।
পুরকর্মীদের হাজিরা নিয়ে সমস্যার কথা বিলক্ষণ জানেন পুরকর্তারা। সমস্যার সমাধানে একাধিক দাওয়াইয়ের ব্যবস্থাও হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোনওটিই কাজে আসেনি। এ বার তাই হাজিরা রিপোর্টে গোলমাল এলে সরাসরি বেতন প্রক্রিয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
কোন দফতরের কোন কর্মী কখন কাজে ঢুকছেন, ঢুকতে দেরি হচ্ছে কি না অথবা তিনি গরহাজির থাকছেন কি না, সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। কর্মীদের বেতন দেখভাল করে যে দফতর, সেই ‘সার্ভিস রেকর্ডস অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট সেল’-এ প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ওই রিপোর্ট জমা করার কথা। যদি নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট জমা না পড়ে, তা হলে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মীদের বেতনের বিল দেওয়ার প্রক্রিয়াই শুরু করা হবে না। আর রিপোর্ট জমা না-পড়ার জন্য দায়ী করা হবে সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রধানকে।
গত মাসে জারি করা পুরসভার এই নির্দেশের পরে অনেক দফতরের তরফেই ডিসেম্বরের শুরুতেই বিস্তারিত রিপোর্ট জমা পড়া শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু রিপোর্ট জমা না-পড়লে দফতরের সমস্ত কর্মী না কি শুধুমাত্র দেরিতে আসা বা অনুপস্থিত কর্মীদের বেতনের উপরে তার প্রভাব পড়বে? উত্তরে পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘যদি সব দফতরের সমস্ত কর্মীর রিপোর্ট জমা না পড়ে, তা হলে কে অনুপস্থিত ছিলেন বা কে দেরিতে হাজিরা দিয়েছেন, সেটা তো বোঝা সম্ভব নয়। তাই সব দফতরের কথাই বোঝানো হয়েছে। তবে হাজিরা যাঁদের ঠিক রয়েছে, তাঁদের চিন্তার কারণ নেই।’’
হাজিরা নিয়ে এমন পদক্ষেপকে পুরকর্মীদের একাংশ স্বাগত জানালেও অনেকে একে ‘নজিরবিহীন’ও বলছেন। পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বহু বার নির্দেশিকা জারির পরেও হাজিরার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জায়গায় গাফিলতি লক্ষ করা যাচ্ছিল। তা আটকাতেই এই পদক্ষেপ।’’
গত এক দশকে পুরকর্মীদের হাজিরা নিয়মিত করতে একাধিক নির্দেশিকা জারি করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কর্মীদের পুরসভায় ঢোকা-বেরোনোর সময় সুনিশ্চিত করতে চালু হয়েছিল বায়োমেট্রিক পদ্ধতি। কিন্তু, কোনওটিই ধোপে টেকেনি। গত বছর আবার এক নির্দেশিকায় পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, কর্মী-আধিকারিকেরা কখন ঢুকছেন, কখন বেরোচ্ছেন— তা দেখার জন্য কন্ট্রোলিং অফিসার বা অফিসার-ইন-চার্জরা আচমকা পরিদর্শন চালাবেন বিভিন্ন দফতরে। কিন্তু পুরসভা সূত্রের খবর, তার পরেও পুরকর্মীদের ঠিক সময়ে হাজিরার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি।
পুরকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, বেতন আটকানোর সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া উচিত ছিল। তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে, পুরসভার এক শ্রেণির কর্মচারী ঠিক সময়ে রোজ হাজিরা দেন। আর এক দলের হাজিরা ধারাবাহিক ভাবে অনিয়মিত। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘এ বারই বোঝা যাবে কারা ঠিক কাজ করছেন আর কারা নামমাত্র অফিস করেন।’’ আর এক পুর আধিকারিক বলছেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই পুরসভার কাজের গতি শ্লথ বলে সমালোচনা করা হয়। তার অন্যতম কারণ হল, সকলে একই ভাবে কাজ করেন না। অনেকেই দেরিতে ঢুকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যান। যার ফল ভুগতে হয় যাঁরা কাজ করছেন তাঁদেরও।’’ এই নিয়মে হাজিরার ক্ষেত্রে একটা ‘সমতা’ আসবে বলেই মত অনেকের।
পুরসভা সূত্রের খবর, এর আগে ২০১৩-’১৪ সালেও হাজিরা নিয়ে নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছিল, অফিসে ঢোকার নির্দিষ্ট সময়ের পরে ১৫ মিনিট ‘গ্রেস পিরিয়ড’ থাকবে। তার পরে কেউ অফিসে ঢুকলে তাঁর হাজিরা ‘লেট’ হিসেবে গণ্য করা হবে। আর আধ ঘণ্টা পরে কেউ ঢুকলে তাঁকে অনুপস্থিত ধরা হবে। তবে কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন, তা হলে ওই বিলম্বকে ‘হাফ ডে ক্যাজুয়াল লিভ’ হিসেবে ধরে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মীকে কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিতে পারবেন। পরপর তিন দিন দেরিতে ঢুকলে ওই কর্মীর একটি ক্যাজুয়াল লিভ কাটা হবে। অন্য সরকারি হাজিরার ক্ষেত্রে যেমন নিয়ম, এ ক্ষেত্রেও তেমন নিয়মেরই উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার পরেও হাজিরা-সংস্কৃতি পাল্টায়নি পুরসভায়।
এ বার হাজিরা-রিপোর্টের চাপে সেই ছবি পাল্টায় কি না, সেটাই দেখতে চাইছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy