ফাইল চিত্র।
রোগীর ভর্তির কাগজপত্র তৈরি। ভিজ়িটর্স কার্ডও প্রস্তুত। সব দিয়ে রোগীকে পাঠানো হয়েছিল সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে। কিন্তু পরে জানা গেল, রোগী ওই হাসপাতালে ভর্তি নেই। বরং তিনি একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন!
কয়েক দিন আগে এমনই কাণ্ড ঘটেছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রোগীর পরিজনদের দাবি, ‘‘এখানে সব করোনা। এখানে রাখলে রোগীর বিপদ হবে। অন্যত্র চলে যান’’— অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির এমনই সাবধানবাণী শুনে তাঁরা চলে গিয়েছিলেন। ঘটনার নেপথ্যে দালাল-চক্র রয়েছে বলেই মনে করছেন শহরের ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। রোগীর পরিজনদের বিভ্রান্ত করে কে বা কারা এই সমস্ত কাণ্ড ঘটাচ্ছে, তার খোঁজ শুরু হয়েছে।
সূত্রের খবর, নিমতার বাসিন্দা, চৌষট্টি বছরের কান্তি চক্রবর্তী দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ। তাঁর একটি চোখ নেই। কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠার সমস্যা নিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। গত ৪ জানুয়ারি বাড়াবাড়ি হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসক ওই প্রৌঢ়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই মতো দুপুরে কান্তিবাবুকে আর জি করে নিয়ে এসেছিলেন পরিজনেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রথমে কোভিড পরীক্ষা করে দেখা যায়, প্রৌঢ় নেগেটিভ। এর পরে কিছু রক্ত পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলেন চিকিৎসকেরা।
প্রৌঢ়ের ছেলে কৌশিকের কথায়, “জরুরি বিভাগেই চিকিৎসকেরা
রক্তের নমুনা নিয়ে আমাদের দিয়েছিলেন। সেটি পরীক্ষা করাতে দিয়ে আসি।” তিনি জানান, সন্ধ্যায় রিপোর্ট আসার পরে এক পরিচিতকে পুরো বিষয়টি জানালে তাঁর মাধ্যমে ভর্তির ব্যবস্থাও হয়ে যায়। মেডিসিন বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তির জন্য সমস্ত কাগজপত্র এবং বাড়ির লোকের দেখা করার হলুদ কার্ডও তৈরি করে কৌশিকদের হাতে দেওয়া হয়। কৌশিকের দাবি, সেই সব-সহ কান্তিবাবুকে ট্রলিতে শুইয়ে তাঁরা লিফটে করে উপরে উঠে ওই ওয়ার্ডের সামনে পৌঁছন। কিন্তু ভিতরে ঢোকার আগেই এক ব্যক্তি তাঁদের আটকে কাগজপত্র দেখতে চান। ওই যুবকের অভিযোগ, “ওই ব্যক্তিকে চিনি না। বাইরে দাঁড়াতে বলে তিনি কাগজপত্র নিয়ে ভিতরে চলে যান। কিছু ক্ষণ পরে এসে বলেন, ‘‘বাবার ভাল চাইলে এখানে রেখো না। সব করোনা রোগী আছে। তোমার বাবার বিপদ হয়ে যাবে। অন্য জায়গায় নিয়ে যাও।”
কৌশিকের কথায়, “বার বার উনি করোনা রোগীর ভিড়, বাবার বিপদের ভয় দেখাতে থাকেন। হাসপাতালের কেউ যদি এমন কথা বলেন, তা হলে তো আতঙ্ক হবেই। তাই আমরাও চুপচাপ নীচে নেমে বাবাকে নিয়ে সিঁথির মোড়ের একটি নার্সিংহোমে চলে যাই।” যে পরিচিতের মাধ্যমে ভর্তির ব্যবস্থা হয়েছিল, তিনি রাতে রোগীর সম্পর্কে খোঁজ করতে মেডিসিন ওয়ার্ডে যোগাযোগ করলে জানতে পারেন, কান্তি চক্রবর্তী নামের কোনও রোগী সেখানে যাননি। এর পরেই তিনি কৌশিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি শুনে আর জি করের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়ের কাছে অভিযোগ জানান। সুদীপ্তবাবুর থেকে বিষয়টি জানতে পেরে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
সূত্রের খবর, আর জি করে দালাল-চক্র যে এখনও সক্রিয়, বিভিন্ন ঘটনাতেই তার প্রমাণ মিলছে। কয়েক দিন আগে হাসপাতালে পিপিপি মডেলে চলা এমআরআই সেন্টারে ঝামেলা হয়। কারণ হিসাবে জানা যায়, দালাল-চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের কয়েক জন কর্মীকে বরখাস্ত করে দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থা। বদলে নতুন কর্মী নিয়োগ করা হয়। বরখাস্ত হওয়া কর্মীরা আচমকাই সেখানে এসে গন্ডগোল শুরু করলে প্রায় দু’ঘণ্টার জন্য এমআরআই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে। কিন্তু এক জন রোগীর ভর্তির কাগজপত্র তৈরির পরে তাঁকে করোনার ‘ভয়’ দেখিয়ে অন্যত্র পাঠানোর ঘটনা একেবারে অনভিপ্রেত বলে জানিয়ে রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সুদীপ্তবাবু বলেন, “পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেছি, যে সব দালাল-চক্র কাজ করছে, তাদের ধরতে হবে। বিনামূল্যে চিকিৎসার কারণে সরকারি হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেশি ঠিকই, কিন্তু তা বলে কাউকে ভুল বুঝিয়ে দালালেরা অন্যত্র পাঠাবেন, সেটা মানা যায় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy