জয়পাল সিংহ ভুল্লার ও যশপ্রীত সিংহ। —ফাইল ছবি।
‘ক্ষুদ্র ভারত’। নিউ টাউনের আকাশচুম্বী আবাসনগুলিকে এই নামেই ডাকা হয়। তেমনই একটি আবাসনে তিন বছর আগে গোপনে আস্তানা গেড়েছিল পঞ্জাবের দুই কুখ্যাত গ্যাংস্টার। তা-ও আবার ওই আবাসনে কলকাতা পুলিশের কোয়ার্টার্সের উল্টো দিকের একটি ফ্ল্যাটে! ২০২১ সালের জুন মাসের এক দুপুরে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ তাদের ধরতে এসেছিল সেখানে। ধরা দেওয়ার বদলে পুলিশের উপরে গুলি চালায় দুই গ্যাংস্টার। শেষে এসটিএফের পাল্টা গুলিতে ফ্ল্যাটের ভিতরেই মারা যায় জয়পাল সিংহ ভুল্লার ও যশপ্রীত সিংহ ওরফে জস্সি। পঞ্জাবের দুই পুলিশ আধিকারিককে খুনের অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।
গত মার্চে বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম কাফেতে বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই সন্দেহভাজন জঙ্গিকে শুক্রবার দিঘা থেকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। ধরা পড়ার আগে ওই দুই জঙ্গি কলকাতাতেও ঘাঁটি গেড়েছিল। সেই খবরে তিন বছর আগের ওই ঘটনার স্মৃতি ফিরে এসেছে সুখবৃষ্টি নামে নিউ টাউনের ওই আবাসনের পুরনো বাসিন্দাদের মধ্যে।
সেখানকার আবাসিক সংগঠনের কর্মকর্তা সুব্রত সাহা জানান, নিউ টাউনের ওই সব বহুতলকে তাঁরা ক্ষুদ্র ভারত বা ‘মিনি ইন্ডিয়া’ বলেন। পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, দেশের বিভিন্ন রাজ্যের লোকজনের বাস সেখানে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লোকজন ফ্ল্যাট কিনে ভাড়া দেন। সুব্রত বলেন, ‘‘কে, কোথায়, কার মাধ্যমে ভাড়ায় এসে থাকছেন, সব সময়ে তা জানতে পারা যায় না। যে কারণে পঞ্জাবের ওই দুই গ্যাংস্টার এখানে ভাড়া নিয়ে থাকা সত্ত্বেও কেউ জানতে পারেননি। পুলিশ কোয়ার্টার্সের উল্টো দিকের একটি ফ্ল্যাটেই তারা থাকত।’’
কলকাতার সঙ্গে জঙ্গিদের নাম অতীতে বহু বার জড়িয়েছে। নিউ টাউন বা সল্টলেকের মতো এলাকায় মানুষের মধ্যে যোগাযোগের অভাব আগামী দিনে এমন কোনও অশুভ শক্তিকে ফের টেনে আনবে কি না, তা নিয়েই উদ্বেগে বাসিন্দারা। অনেকেই মনে করেন, প্রবাসে বা বিদেশে থেকে কেনা ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে রোজগারের প্রবণতা এমন বিপদ ফের ডেকে আনতেই পারে। কে, কোথায়, কার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কী করছেন, তা সব সময়ে প্রশাসনের নজরেও থাকে না। বছর দুয়েক আগে নিউ টাউনেরই একটি আবাসন থেকে সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। উদ্ধার হয় বিপুল টাকা।
২০২১ সালে সুখবৃষ্টিতে গ্যাংস্টার-এসটিএফ গুলিযুদ্ধের ঘটনার সময়ে যাঁরা সেখানকার বি-১৫৩ নম্বর আবাসনে ছিলেন, তাঁদের সিংহভাগই এখন নেই। ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটে এনকাউন্টারে মারা যায় দুই গ্যাংস্টার। এখন ওই বাড়িটির বেশির ভাগ ভাড়াটে নতুন। অরিজিৎ দত্ত নামে বাঁকুড়ার এক বাসিন্দা সস্ত্রীক ভাড়া থাকেন ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটের উপরে। তিনি বলেন, ‘‘সেই সময়ে কাগজে ওই ঘটনা পড়েছিলাম। ওই ফ্ল্যাটের পাশ দিয়ে উঠতে রোমাঞ্চ লাগে।’’
দুই গ্যাংস্টার যে আবাসনে ভাড়া থাকত, তাতে সাড়ে ২২ হাজার ফ্ল্যাট রয়েছে। ১৫ হাজারের বেশি ফ্ল্যাট ক্রেতাদের হাতে দিয়ে দিয়েছে নির্মাণ সংস্থা। রাতেই আবাসন চত্বর বেশি জমজমাট থাকে। কারণ, একটি বড় অংশের ভাড়াটে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। সারা দেশ থেকেই তাঁরা নিউ টাউনে বসবাসের জন্য এসেছেন এবং তাঁদের সিংহভাগই ভাড়ায় থাকেন।
ওই আবাসনের পুরনো বাসিন্দারা জানান, যে ফ্ল্যাটে দুই গ্যাংস্টার অজ্ঞাতবাসে ছিল, সেটির মালিকানা ঠিক কার, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। ওই ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দেখা গেল, উল্টো দিকেই কলকাতা পুলিশের কোয়ার্টার্স। ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি ওই ঘটনার পর থেকেই বন্ধ। দুই গ্যাংস্টারের মৃত্যুর পরে তদন্তও এক প্রকার হিমঘরে চলে গিয়েছে বলেই মনে করছেন বাসিন্দারা।
আবাসিক সংগঠনের কর্মকর্তা সুব্রতের কথায়, ‘‘দুই গ্যাংস্টারকে কখনও সখনও রাস্তায় দেখা যেত। তবে তাদের ঘরে কেউ ঢুকতে পারতেন না। এমনকি, হোম ডেলিভারিতে খাবার এলেও বাইরে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে হত। ওই বিকেলে সরকারি কাজে সাহায্য করতেই পুলিশের সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলাম। রক্তে মাখামাখি অবস্থায় ভুল্লারেরা পড়েছিল। ভাবলে এখনও শিউরে উঠতে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy